আর্থিক অবরোধই চিন্তা মজিদের

তবু ওঁরা বলছেন, বেঁচে থাকা এখনও বিড়ম্বনা হয়ে ওঠেনি ইরানে। ওঁরা— ভারতে খেলে যাওয়া সর্বকালের সেরা বিদেশি ফুটবলার বলে যাঁকে মনে করা হয়, সেই মজিদ বাসকার, তাঁর স্বদেশীয় সতীর্থ জামশিদ নাসিরি, জামশিদের দাদা জাহাঙ্গির।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৯ ০২:৪৩
Share:

মজিদ বাসকার

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘যুদ্ধং দেহি’ মনোভাবের পরে ইরান জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে চাপা উত্তেজনা। আকাশে যুদ্ধবিমানের মহড়া বেড়েছে। সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বেড়েছে সেনা টহল। রাতে আলো নিভিয়ে বা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে বহু রাস্তায়। স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, অফিস স্বাভাবিক থাকলেও সন্ধ্যার পরে রাস্তায় লোক কম।

Advertisement

তবু ওঁরা বলছেন, বেঁচে থাকা এখনও বিড়ম্বনা হয়ে ওঠেনি ইরানে। ওঁরা— ভারতে খেলে যাওয়া সর্বকালের সেরা বিদেশি ফুটবলার বলে যাঁকে মনে করা হয়, সেই মজিদ বাসকার, তাঁর স্বদেশীয় সতীর্থ জামশিদ নাসিরি, জামশিদের দাদা জাহাঙ্গির। ইরানের ‘পাস’ ক্লাবের হয়ে সত্তরের দশকে জাহাঙ্গিরও খেলে গিয়েছেন কলকাতায়। ইরানের তিন প্রাক্তন ফুটবলারই আনন্দবাজারকে বললেন, আমেরিকার সঙ্গে দ্বৈরথে জনজীবন অস্বাভাবিক হয়ে পড়েছে তাঁদের দেশে। তবে আশির দশকের ইরাক-ইরান যুদ্ধ বা জাতিগত সংঘর্ষের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বরং ট্রাম্প কতটা অর্থনৈতিক অবরোধ তৈরি করবেন, ওঁদের চিন্তা তা নিয়েই।

‘‘আমি বিশ্বাস করি না, আমেরিকা আমাদের উপরে বোমা ফেলবে। যুদ্ধও বাধবে না। সেটা নিয়ে আমরা ভয়ও পাচ্ছি না। আমরা সবাই ভাবছি, আর্থিক ভাবে আমরা সমস্যায় পড়ব কি না,’’ ইরানের খোরামশায়ার থেকে বলছিলেন মজিদ। তিনি এখন চাকরি করেন পুলিশের সঙ্গে যুক্ত একটি বেসরকারি সংস্থায়। বুধবার ভারতীয় সময় রাত ১১টা নাগাদ যখন ‘হারিয়ে যাওয়া’ মজিদকে ধরা হল, তখন তিনি বাড়ির পথে। জানালেন, প্রতি মুহূর্তে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে চোখ রাখছেন তিনি এবং তাঁর বন্ধুরা। বললেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে ইরাকের সম্পর্ক এখন ভাল। তবে আমেরিকা তো এ রকম হুমকি বহু দিন ধরেই দিচ্ছে। আমাদের নেতারাও পাল্টা বলছেন। চাপা উত্তেজনা রয়েছেই।’’ কলকাতা ময়দান কাঁপিয়ে যাওয়া ফুটবলার জানালেন, ইস্টবেঙ্গল তাদের শতবর্ষে আমন্ত্রণ জানিয়েছে তাঁকে। বললেন, ‘‘কলকাতার মানুষ আমাকে এখনও ভালবাসেন। প্রায় দশ বছর এখানে খেলেছি তো। খুব ইচ্ছে আছে যাওয়ার। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি, তাতে ছুটি পাওয়া মুশকিল।’’

Advertisement

কলকাতার কথা বলতে বলতেই মজিদ ফিরে গেলেন দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির প্রসঙ্গে। ‘‘আমি যেখানে থাকি, সেই খোরামশায়ার সীমান্ত এলাকা। ইরানের সেনারা আমেরিকার ড্রোন গুলি করে নামানোর পরে এখানে সেনা টহল বেড়েছে। রাতে আলো কমিয়ে রাখা হচ্ছে। তবে দিনের বেলায় স্কুল-কলেজ-অফিসে সমস্যা নেই। এই তো আমার স্ত্রী অসুস্থ হল, নিয়ে গেলাম হাসপাতালে। সমস্যা হয়নি,’’ বললেন মজিদ।

ঝলমলে আলো ছড়িয়েও নানা কারণে দিশাহীন হয়ে পড়েছিল মজিদের ফুটবল জীবন। বন্ধুরা তাঁকে পাঠিয়ে দেন ইরানে। এর পরে মজিদের খোঁজ রাখেনি কেউ। এমনকি জামশিদও নন। বাষট্টির মজিদ এখন অন্য মানুষ। ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে যিনি বলেন, ‘‘ফুটবলের সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় নেই। তবে ছোটরা ফুটবল খেলছে দেখলে নেমে পড়ি। অফিস-বাড়ি নিয়ে ভালই আছি।’’

মজিদের বর্ণময় জীবনের সঙ্গী জামশিদ অবশ্য এখন পাকাপাকি ভাবে কলকাতার বাসিন্দা। ভাল বাংলাও বলেন। প্রাক্তন ইরানি স্ট্রাইকার কয়েক সপ্তাহ আগেই গিয়েছিলেন নিজের দেশে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement