—প্রতীকী ছবি।
বেশ কিছু মাস ধরে আটকে ছিল সিদ্ধান্ত। অবশেষে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইউক্রেনকে আবার বিপুল পরিমাণ আর্থিক অনুদান দিতে গত কাল বিল পাশ হয়েছে আমেরিকান আইনসভার নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজ়েন্টেটিভসে। ওই বিলে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের পাশাপাশি অর্থ সাহায্য দেওয়া হবে ইজ়রায়েল এবং তাইওয়ানকেও। আর এই বিল পাশ নিয়ে আজই মুখ খুলেছে ক্রেমলিন। আমেরিকাকে খোঁচা দিয়ে রুশ বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, ইউক্রেনকে এই বিপুল সাহায্যদান বরং কিভেরই বিপদ ডেকে আনবে।
হাউস স্পিকার তথা রিপাবলিকান নেতা মাইক জনসন জানিয়েছেন, তিনটি দেশকে মোট ৯৫০০ কোটি ডলার আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে। এর মধ্যে ৬১০০ কোটি ডলার দেওয়া হবে ইউক্রেনকে। তাইওয়ান এবং ইজ়রায়েল যথাক্রমে পাবে ৮০০ কোটি এবং ২৬০০ কোটি ডলার। আইনসভার নিম্নকক্ষে পাশ হওয়ার পরে আর্থিক অনুদান সংক্রান্ত এই বিল যাবে উচ্চকক্ষ অর্থাৎ সেনেটে। সেখানে সেনেট সদস্যেরা এই বিলে সম্মতি দিলে তা যাবে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে। বাইডেনের সইয়ের পরেই এই তিন দেশ আমেরিকার থেকে আর্থিক সাহায্য পাবে। সেনেট সদস্যদের মধ্যে এ নিয়ে বিরোধিতা থাকলেও শেষ পর্যন্ত বিলটি পাশ হয়ে যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
জনসন জানিয়েছেন, এই বিলটি পাশ করতে তাঁর নিজের দল রিপাবলিকান পার্টির এক দল সদস্যের প্রবল প্রতিরোধ এবং বিরোধিতার মধ্যে পড়তে হয়েছিল হাউসের ডেমোক্র্যাট সদস্যদের। আর্থিক সাহায্য দিতে অনিচ্ছুক হাউসের রিপাবলিকান সদস্যেরা বেশির ভাগই প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনুগামী। যেমন ইউক্রেনকে অর্থসাহায্য দেওয়া নিয়ে হাউস অব রিপ্রেজ়েন্টেটিভসের ১১২ জন সদস্য বিরোধিতা করেছিলেন। ৩১১ জন হাউস সদস্যের সমর্থন থাকায় বিলটি পাশ হয়। একই ভাবে ইজ়রায়েল সংক্রান্ত বিলটি ৩৬৬-৫৮ ভোটে জয়ী হয়। তাইওয়ানের ক্ষেত্রেও কিছু সংখ্যক হাউস সদস্যের বিল নিয়ে আপত্তি ছিল।
আমেরিকান সংবাদমাধ্যমগুলি জানাচ্ছে, মোট তিনটি দেশকে যে অর্থসাহায্য করা হবে, তা বিভিন্ন খাতে ভাগ করা হয়েছে। যেমন ইজ়রায়েলকে দেওয়া আর্থিক অনুদানের আওতায় গাজ়া ভূখণ্ডের সাধারণ মানুষকে দেওয়া মানবিক সাহায্যও পড়ছে, যার পরিমাণ প্রায় ৯০০ কোটি ডলার। একই ভাবে ইউক্রেনকে দেওয়া আর্থিক সাহায্যের মধ্যে রয়েছে আমেরিকা থেকে কেনা অস্ত্রের সম্ভারও।
বিষয়টি নিয়ে বাইডেন প্রশাসনকে খোঁচা দিতে ছাড়েনি রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন সরকার। আজ সকালে রুশ সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘‘এই সিদ্ধান্তে আসলে আমেরিকা আরও ধনী হবে। কিন্তু ইউক্রেনের ক্ষতি অনিবার্য। আরও মৃত্যু হবে সে দেশের বাসিন্দাদের।’’ আমেরিকার আইনসভায় পাশ হওয়া ওই বিলে আরও বলা হয়েছে যে, নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া বেশ কয়েক জন রুশ ব্যক্তিত্বের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে সেগুলিও দান করা হবে ইউক্রেন সরকারকে। যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ক্রেমলিন। তাইওয়ান আর ইজ়রায়েলকে দেওয়া অর্থ সাহায্য নিয়েও মুখ খুলেছে তারা। রুশ বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মারিয়া জ়াখারোভা সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘কিভকে সামরিক খাতে আর্থিক সাহায্য করা আসলে সন্ত্রাসবাদকেই মদত দেওয়া। তাইওয়ানকে সাহা্য্যের অর্থও চিনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা। আর ইজ়রায়েলকে এই বিপুল পরিমাণ ত্রাণ দিলে গোটা বিশ্বের সঙ্কট আরও বাড়বে।’’