জয় হোক: করোনা-আবহে দূরত্ববিধি মেনেই জো বাইডেনকে শুভেচ্ছা বারাক ওবামার। মিশিগানে। এএফপি
আমেরিকার আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে নজর গোটা বিশ্বের। এ বারের ভোট অনেকটাই আলাদা। তার একটা কারণ গত কয়েক মাস ধরে করোনাভাইরাসের তাণ্ডব। সংক্রমণ এড়াতে বেশির ভাগ নাগরিক মেল-ইন-ভোটিং বা পোস্টাল ব্যালট পছন্দ করছেন। ভোটের অব্যবহিত আগে যে বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, তার মধ্যে একটি এই অতিমারি।
আর এই ভোট নিয়ে বেশি উৎসাহের আরেকটি কারণ অবশ্যই বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।কোভিডের বেলাগাম সংক্রমণ এবং ঊর্ধ্বগামী মৃত্যু নিয়ে ক্রমাগত কোণঠাসা হচ্ছে রিপাবলিকানরা। শেষ প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রবল আশাবাদীর মতো দাবি করেছেন। সপ্তাহখানেকের মধ্যে মিলবে অব্যর্থ ভ্যাকসিন! কিন্তু এ কথা আমরা সকলেই গত চার বছরে জেনে গিয়েছি যে, নানা আশ্বাস দিলেও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে এই অতিমারি মোকাবিলার কোনও বাস্তবানুগ রূপরেখা দেওয়ার মতো বিজ্ঞানমনস্কতা ট্রাম্পের নেই। উল্টো দিকে, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী, প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কিন্তু হাজির বিবিধ জনমুখী পরিকল্পনা নিয়ে। স্বাস্থ্যবিমার আকাশছোঁয়া প্রিমিয়াম কমানো এবং ভ্যাকসিন তৈরি হলে সকলের জন্য তা সহজলোভ্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
অতিমারি-পরিস্থিতির বাড়তি পাওনা— দেশজোড়া অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা। ‘বুরো অব লেবার’-এর পরিসংখ্যান বলছে, সেপ্টেম্বর মাসে এ দেশে বেকারের সংখ্যা ৭.৯% বেড়েছে। হোয়াইট হাউস যাঁর দখলেই থাকুক, ভারাক্রান্ত অর্থনীতির দিকবদল নিঃসন্দেহে তাঁর বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
এ দেশের নাগরিক হিসেবে আনরা দেশ এবং সারা বিশ্বের পরিবেশ রক্ষা নিয়েও চিন্তিত। সাম্প্রতিক কালে ক্যালিফর্নিয়া ও অ্যারিজ়োনায় পর পর ভয়ঙ্কর দাবানল হয়েছে। তার পরেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আন্তর্জাতিক প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে আরও বেশি করে প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশবিদেরা। ডেমোক্র্যাট দলের ম্যানিফেস্টোতে পরিবেশ দূষণরোধে ২০৫০-এর মধ্যে সমস্ত রকম গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ বন্ধ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘গান-পয়েন্টে’ ডোনাল্ড ট্রাম্প
আমেরিকায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভোটারের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলেছে। এ বিষয়ে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির তুরুপের তাস ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলা হ্যারিসের মনোনয়ন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সুসম্পর্ক থাকলেও বর্তমান প্রশাসনের দৌলতে পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট কার্ডের সুদীর্ঘ লাইন এবং এইচ১বি ভিসায় বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। এর ফলে কিন্তু ভারতীয় ভোটব্যাঙ্কের আস্থা ডেমোক্র্যাটদের দিকেই।
গত কয়েক দিন ধরে একাধিক সমীক্ষা জানাচ্ছে যে, ডেমোক্র্যাটদের দিকেই নাকি পাল্লা ঝুঁকে রয়েছে। তবে আমেরিকার নির্বাচনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইলেক্টোরাল কলেজ, যা শেষ মুহূর্তেও পাল্টে দিতে পারে ছবিটা। এই ভোটের দিকে সকলের সঙ্গে আমিও তাকিয়ে আছি। আমেরিকা মিশ্র সংস্কৃতির দেশ। জাতি, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে বৈচিত্র্যগুলো মর্যাদা পাক, মেধাবীদের স্বপ্ন সুরক্ষিত থাকুক, নতুন সম্ভাবনা প্রসারিত হোক, পরবর্তী প্রশাসনের কাছে এটাই আবেদন।