টি শার্টে গাঁধী। হংকংয়ে রবিবার প্রচারপত্র বিলিতে ব্যস্ত। এপি
নজিরবিহীন ভিড় দেখা গেল হংকংয়ে ভোটের লাইনে।
এখানকার ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলের নির্বাচনে ভোটদাতাদের সংখ্যা ছাপিয়ে গিয়েছে ২০১৫ সালকেও, দাবি করা হচ্ছে তেমনটাই। শাসক ক্যারি ল্যামের জনসমর্থনের ভিত বুঝতে এই ভোট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। গণতন্ত্রকামী প্রতিবাদী গোষ্ঠীগুলি আশা করছে, দীর্ঘ পাঁচ মাসের অশান্তির পরে এই ভোটের মাধ্যমে চিনা সরকারের কাছে একটা বার্তা পৌঁছনো যাবে। তাই ভোটটা যাতে শান্তিপূর্ণ ভাবে হয়, তার জন্য জনতার কাছে আবদেন জানিয়েছিল এই গোষ্ঠীগুলি। রবিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে সাতটা থেকে লম্বা লাইন দেখা গিয়েছে বিভিন্ন বুথের বাইরে। সর্বত্র পুলিশের ভিড় থাকলেও কোথাও কোনও অশান্তি বা পুলিশি সক্রিয়তার খবর মেলেনি।
এখানকার ৭৪ লক্ষ নাগরিকের মধ্যে ৪১ লক্ষের ভোটদানের অধিকার রয়েছে। গণতন্ত্রকামী গোষ্ঠীগুলি মনে করছে, হংকংয়ের ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলে এ বার তাদের প্রতিনিধিত্ব বাড়বে। এমনিতে এই কাউন্সিলগুলি ‘নখদন্তহীন’ বলে পরিচিত, যারা শহরের বাস রুট বা জঞ্জাল সংগ্রহের মতো ‘সাধারণ’ বিষয় নিয়ে কাজ করে। তবে শহরের প্রধান শাসক নির্বাচনেও এই কাউন্সিলের একটা ভূমিকা থাকে। আর এ বারের ভোটের পরিস্থিতিও একেবারে আলাদা। সে জন্যই ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলের ভোট এ বার শিরোনামে।
বেজিং-ঘেঁষা প্রার্থীরা প্রচারে বুঝিয়েছিলেন, ‘বিক্ষোভকারী ও পুলিশের সংঘর্ষে এত দিনের অস্থিরতায় যে অসুবিধায় পড়তে হয়েছে, তার বিরুদ্ধে যথাযথ জবাব দিন।’ শুধু এই প্রার্থীরা নন, চিনা সরকারি সংবাদমাধ্যমের তরফেও ‘হিংসায় ইতি টানতে ভোট দিন’— এই মর্মে প্রচার চালানো হয়েছে। আজ গ্লোবাল টাইমসের (চিনা সরকারি সংবাদপত্র) তরফে হংকংয়ের জনতার উদ্দেশে টুইটে জানানো হয়েছে, ‘আপনারা কোনটা বেছে নেবেন? একটা শান্তিপূর্ণ উন্নত শহর, না হিংস্র অসভ্য কোনও আশ্রয়? পছন্দ আপনাদের হাতে।’ সঙ্গে ছিল বুথগামী লম্বা লাইনের ছবিও।
১৮টি ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলের ৪৫২টি আসনের জন্য লড়াইয়ে নেমেছেন এক হাজারেরও বেশি প্রার্থী। এই প্রথম প্রতিটি আসনেই লড়াই হচ্ছে। এই আসনগুলির বেশির ভাগ বেজিং-ঘেঁষা প্রার্থীদের দখলেই ছিল এত দিন। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। তার পরেই শুরু হবে গণনা। আজ মাঝরাতের পরে ফল ঘোষণার সম্ভাবনা। ভোট দিয়ে হংকংয়ের শাসক ক্যারি ল্যাম বলেছেন, ‘‘ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার পরেও আমার বলতে ভাল লাগছে যে আজ শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট হয়েছে।’’
ভোটাররা কোন্ দিকে, তা তাঁরা বিদেশি সংবাদমাধ্যমের কাছে খোলসা করতে চাননি। শুধু বলেছেন, ব্যালট দিয়ে নিজেদের মতামত জানানোর সুযোগটা কাজে লাগাতে চান। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী অ্যান্ড্রু চিউকে হাসিমুখে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে একটি বুথের বাইরে। তাঁর কানে ব্যান্ডেজ বাঁধা। এ মাসের গোড়ায় বিক্ষোভের মধ্যে তাঁর কানের অংশ কামড়ে নিয়েছিল এক জন।
হংকং ব্যাপটিস্ট ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক কেনেথ চ্যান বলেছেন, ‘‘হংকং ক্যারি ল্যামের সরকারকে নিয়ে ঠিক কী ভাবছে, সেটা জানাতেই এই নির্বাচনকে বেছে নিয়েছি।’’ বিশেষজ্ঞদের মতে, গণতন্ত্রকামীদের বেশি সংখ্যক প্রতিনিধি ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলে এলে হংকংয়ের শাসককেও হয়তো তাঁদের মধ্যে থেকে বেছে নেওয়া হবে। তবে গণতন্ত্রকামীদের অন্যতম প্রতিনিধি জোশুয়া ওয়ং লড়াইয়ে নামতেই পারেননি। তাঁর দাবি, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের জন্যই এমনটা হয়েছে।