নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি— ফাইল চিত্র।
ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে নিজের দলেই কোণঠাসা নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। নিশানা হয়েছেন বিরোধীদেরও । এই পরিস্থিতিতে তিনি ইস্তফা দিতে পারেন বলে বুধবার কাঠমান্ডুর রাজনৈতিক মহলে খবর ভাসতে শুরু করেছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার ওলির ‘তৎপরতা’য় স্পষ্ট, গদি বাঁচানোর শেষ চেষ্টা ছাড়তে নারাজ তিনি। মন্ত্রিসভার সদস্যদের আস্থা অর্জনের চেষ্টার পাশাপাশি ক্ষমতাসীন নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি’ (এনসিপি)-র অন্দরের ক্ষোভ প্রশমনেরও চেষ্টা চালাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী ওলি এদিন সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন বালুওয়াটারে মন্ত্রিসভার বৈঠক করেন। রাষ্ট্রপতি বিদ্যাদেবী ভাণ্ডারী এবং এনসিপি’র কো-চেয়ারপার্সন তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দহলের (প্রচণ্ড) সঙ্গেও দেখা করেন। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নেপাল পার্লামেন্টের বাজেট অধিবেশন মুলতুবি করেছে ওলি সরকার। প্রধানমন্ত্রী সচিবালয় সূত্রের খবর, এদিন কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে পার্লামেন্টের বাজেট অধিবেশন স্থগিত রাখার জন্য মন্ত্রিসভার প্রস্তাব রাষ্ট্রপতি অনুমোদন করেছেন। রাজনীতির কারবারিদের মতে, প্রধান বিরোধী দল নেপালি কংগ্রেস এবং মদেশীয় সাংসদদের বিরোধিতা এড়ানোর উদ্দেশ্যেই এই কৌশল। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রের খবর, রাজনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যেই এদিন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে পারেন ওলি।
ভারতীয় ভূখণ্ড কালাপানি, লিপুলেখ এবং লিম্পিয়াধুয়াকে ‘নেপালের অংশ’ হিসেবে চিহ্নিত করে নয়া মানচিত্র অনুমোদনের সংবিধান সংশোধনী বিল গত মাসেই নেপাল পার্লামেন্টের দুই কক্ষে পাশ হয়েছিল। শাসক এনসিপি’র পাশাপাশি সে দেশের বিরোধী দলগুলিও এই বিল সমর্থন করেছিল। নয়াদিল্লির তরফে উত্তরাখণ্ডের প্রায় ৪০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে নেপালের মানচিত্রে জুড়ে দেওয়ার এই উদ্যোগের বিরোধিতা করা হয়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দাবি করা হয়, বেজিংয়ের প্ররোচনাতেই নয়াদিল্লির সঙ্গে সঙ্ঘাতের পথে হাঁটছেন ওলি।
আরও পড়ুন: সাংবাদিক শুনে সিট থেকে তুলে নিয়ে গেলেন পুলিশ অফিসার
এর পরে নেপাল কৃষিমন্ত্রকের সার্ভে দপ্তরের একটি রিপোর্ট ফাঁস হয়। তাতে স্পষ্ট বলা হয়, পশ্চিম ও মধ্য নেপাল-তিব্বত সীমান্তে নেপালের জমি দখল করে রাস্তা ও ছোট নদীবাঁধ বানাচ্ছে চিন। ওলির সম্মতিতেই চিন নেপালমুখী পাহাড়ি নদীরগুলির গতিপথ বদলে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ ওঠে। ঘরে-বাইরে চাপের মুখে ওলি নেপালের সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘মানচিত্র বদলেছি বলে আমাকে সরানোর ষড়যন্ত্র করছে ভারত।’’ তাঁর এই মন্তব্যের জেরেই বর্তমান সঙ্কটের সূত্রপাত।
শুধু বিরোধীরা নয়, প্রচণ্ড এবং এনসিপি’র আর এক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাধবকুমার নেপালও সমালোচনা করেছেন। নেপালের সংবাদপত্র হিমালয়ান টাইমস জানাচ্ছে, গতকাল এনসিপি’র স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকেও ওলির মন্তব্য ঘিরে প্রবল বিতর্ক হয়। এদিন স্ট্যান্ডিং কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য লীলামণি পোখরেল বলেন, ‘‘আমাদের একটাই কথা। আপনি (ওলি) অভিযোগ তুলেছেন, ভারত আপনাকে সরানোর ষড়যন্ত্র করছে। হয় সেই অভিযোগ প্রমাণ করুন অথবা ইস্তফা দিন।’’
আরও পড়ুন: মধ্যপ্রদেশে ২৮ মন্ত্রীর শপথ, সিন্ধিয়া অনুগামীরাই বেশি
এনসিপি’র প্রবীণ নেতা তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ঝালানাথ খনাল সরাসরি ওলির সমালোচনা করে হিমালয়ান টাইমসকে বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী তাঁর ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষা করার উদ্দেশ্যে বিতর্ক খুঁচিয়ে তুলছেন।’’ মঙ্গলবারের বৈঠকে ৪৪ সদস্যের স্ট্যান্ডিং কমিটির ৩১ জনই ওলির ইস্তফার দাবি সমর্থন করেন বলে প্রকাশিত খবরের দাবি। এরপর বুধবার প্রচণ্ড ও মাধবকুমারের বৈঠকে হাজির ১৮ জনের মধ্যে ১৭ জন ওলির পদত্যাগের দাবি তোলেন। ওলি অবশ্য গত সপ্তাহ থেকে স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক এড়িয়ে চলেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি শাসক এনসিপি’র কো-চেয়ারপার্সন পদেও রয়েছেন ওলি। এনসিপি’র ভাইস চেয়ারম্যান বামদেব গৌতমের মন্তব্য, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে ওলির পদত্যাগই সমাধানের একমাত্র পথ।’’ এই পরিস্থিতিতে, অনুগামী মন্ত্রী ও নেতাদের নিয়ে আলাদা বৈঠক করেছেন ওলিও। সেই বৈঠকে উপস্থিত গণ্ডকী প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তথা এনসিপি নেতা সুব্বা গুরুং এদিন বলেন, ‘‘ওলি দু’টি পদই ধরে রাখার জন্য স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা চালাচ্ছেন। আলোচনা চলছে।’’ এরই মধ্যে নেপালের সংবাদমাধ্যম আজ জানিয়েছে, ওলি-অনুগামী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাম বাহাদুর থাপাও যোগ দিয়েছেন প্রচণ্ড শিবিরে।