মারমুখী: ধর্মঘটীদের ছত্রভঙ্গ করতে প্রোজেক্টাইল ছুড়ছে মার্কিন পুলিশ। সোমবার রাতে, পোর্টল্যান্ডে। এপি
সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন। সোমবার। তবে কর্মক্ষেত্রে নয়, এ দিন পথেই দেখা গেল হাজার হাজার কর্মীকে। দাবি একটাই— বন্ধ হোক ‘পদ্ধতিগত বর্ণবাদ’। অর্থনৈতিক সুবিচার নিশ্চিত হোক সকলের জন্য। ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের আবহে ৬০টি আলাদা কর্মী সংগঠনের ডাকে ‘স্ট্রাইক ফর ব্ল্যাক লাইভস’ নামের এই প্রচারে সাড়া দিয়ে ধর্মঘটে শামিল হয়েছিলেন তাঁরা। বর্ণবিদ্বেষের কারণে তৈরি বৈষম্য ঘোচানোর দাবিতে এ ভাবেই এক হল আমেরিকার বস্টন থেকে শুরু করে সান ফ্রান্সিসকো।
এ দিনের এই ধর্মঘটে শামিল হয়েছিল ‘সার্ভিস এমপ্লয়িজ় ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন-সহ আরও একগুচ্ছ মার্কিন কর্মী সংগঠন। অংশগ্রহণ করেছিল বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক সংগঠনও। ‘স্ট্রাইক ফর ব্ল্যাক লাইভস’ নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছেন আয়োজকেরা। সেখানে তাঁদের উদ্দেশ্য এবং দাবিগুলি স্পষ্ট ভাবেই উল্লেখ করেছেন আন্দোলনকারীরা। যার মধ্যে এক নম্বর— ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ বা ‘কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনও যে দামী’ তা অদ্ব্যর্থক ভাবে ঘোষণা করুক বাণিজ্য, রাজনীতি এবং প্রশাসনের কর্তারা। আন্দোলনকারীদের আরও দাবি, নাগরিক অধিকারের বিষয়টি মাথায় রেখে ফের একবার মার্কিন অর্থনীতি ঢেলে সাজানোর দিকে মনোনিবেশ করুক প্রশাসকেরা। সংশোধন আনা হোক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতেও।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ দিনের ধর্মঘটের জেরে এই প্রথম বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী আন্দোলন সরাসরি প্রভাব ফেলল মার্কিন অর্থনীতির উপর। আন্দোলনকারীদের তরফেও জানানো হয়, বাণিজ্য ক্ষেত্রে বর্ণবিদ্বেষ এবং সাদা চামড়ার আধিপত্যকে ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়াও তাঁদের অন্যতম উদ্দেশ্য। গায়ের রংয়ের ভিত্তিতে অর্থনৈতিক শোষণ (এই করোনা আবহে যা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে বলে দাবি আন্দোলনকারীদের) বন্ধ করার পক্ষে কড়া পদক্ষেপের আর্জিও জানাচ্ছেন তাঁরা। এ দিন দেশজুড়ে ২০০টি শহরে ধর্মঘট সাড়া ফেলেছে বলে জানান আন্দোলনকারীরা।
এ দিনের এই কর্মসূচিতে অত্যবশ্যকীয় পরিষেবায় কর্মরত মানুষের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। করোনা মোকাবিলায় প্রথম সারির যোদ্ধাদের অংশগ্রহণের হারও ছিল নজর কাড়া। যাঁরা গোটা দিনের জন্য আন্দোলনে যোগ দিতে পারেননি তাঁদের কমপক্ষে ৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের জন্য কাজ থেকে বিরতি নেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন আয়োজকেরা। ৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড— যে সময়টুকু কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডের গলায় পা দিয়ে তাঁকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার। যা থেকেই ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন ফের একবার মাথা চাড়া দিতে বাধ্য হয়েছে।
অন্য দিকে, অভিযুক্ত বা ধৃতের গলায় বলপ্রয়োগ বা শ্বাসরোধের চেষ্টা করতে পারবেন না পুলিশকর্মীরা। মঙ্গলবার এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মিনেসোটার প্রশাসন। তা ছাড়াও একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছে সেখানকার পুলিশের উপর। যা জর্জ ফ্লয়েড কাণ্ড থেকেই অনুপ্রাণিত বলে মত বিশেষজ্ঞদের।