রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস। ফাইল চিত্র।
জাপোরিজিয়া পরমাণু কেন্দ্রে কোনও রকম হামলা চললে, তা হবে ‘আত্মঘাতী’— ইউক্রেন সফরে এসে এ কথাই ফের মনে করিয়ে দিলেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস।
গত কাল ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে বসেন গুতেরেস ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তায়িপ এর্ডোয়ান। কূটনৈতিক পথে কী করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করা যায়, সমাধান কী হতে পারে, এ সব নিয়ে আলোচনা হয়। ইউরোপের শস্যগোলা ইউক্রেন থেকে কী ভাবে খাদ্যসামগ্রী রফতানি চালু রাখা যায়, কথা হয়েছে তা নিয়েও। তবে বৈঠকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু ছিল জাপোরিজিয়ার পরমাণু কেন্দ্র। যুদ্ধ শুরুর পরপরই কেন্দ্রটি রাশিয়া দখল করে নেয়। তার পর থেকে বহুবার এ অঞ্চলে হামলা চলেছে। পরমাণু কেন্দ্রের একেবারে কাছে আছড়ে পড়েছে ক্ষেপণাস্ত্র। রাশিয়ার দখলে থাকলেও কেন্দ্রটিকে সক্রিয় রেখেছেন ইউক্রেনীয় কর্মীরা। তাঁরা এখনও ওখানে কাজ করছেন। রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেন ওই হামলা চালাচ্ছে। উল্টো দিকে, ইউক্রেনের বক্তব্য, রাশিয়া কেন্দ্রটিকে তাদের সেনাঘাঁটি করেছে। কারণ, তারা জানে এই জায়গায় ইউক্রেন হামলা চালাতে পারবে না।
বৈঠকের পরে পশ্চিম ইউক্রেনের পোল্যান্ড সীমান্ত ঘেঁষা শহর লিভিভে একটি সাংবাদিক বৈঠকে এর্ডোয়ান বলেন, ‘‘আমরা খুবই চিন্তিত। আর একটা চের্নোবিল কেউই চাই না।’’ এখানে দাঁড়িয়েই জ়েলেনস্কির উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘‘জানিয়ে রাখছি, তুরস্ক ইউক্রেনের মিত্র দেশ। সমাধানের খোঁজ করার পাশাপাশি তুরস্ক ইউক্রেনের পাশেই থাকবে।’’
সংবাদমাধ্যমের কাছে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব গুতেরেস বলেন, ‘‘পরমাণু কেন্দ্রটি যে পরিস্থিতিতে রয়েছে, তা চিন্তার। এই অঞ্চলটিকে অসামরিক ক্ষেত্র ঘোষণা করতেই হবে। এখানে যুদ্ধ চলতে পারে না। আমাদের বলতেই হচ্ছে— জ়াপোরিজিয়ার কোনও ক্ষতি হলে তা আত্মঘাতী হামলা হবে।’’
ভূরাজনৈতিক দিক থেকে দেখলে তুরস্ক ও রাশিয়া বরাবরই একে অন্যের প্রতিপক্ষ। ক্রেমলিনের সঙ্গে এর্ডোয়ানের সম্পর্ক ভাল নয়। কিন্তু তবু তিনি কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়ার মতো করে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে যথাযথ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেন। দু’সপ্তাহ আগেই তিনি পুতিনের সঙ্গে দেখা করেছেন। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যস্থ হিসেবে তাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা গিয়েছে তাঁকে। যেমন, এর্ডোয়ান ও গুতেরেসের উপস্থিতিতে শস্যদানা রফতানি চুক্তি সেরেছিল রাশিয়া ও ইউক্রেন। কয়েক সপ্তাহ হল ফের কৃষ্ণসাগর দিয়ে জাহাজে পণ্য রফতানি শুরু করেছে ইউক্রেন। চুক্তি হয়েছে জাহাজে আক্রমণ চালাবে না কোনও দেশই। উল্লেখ্য, আজ ইউক্রেন জানিয়েছে, তাদের ২৫তম জাহাজটি ৩৩ হাজার টন শস্যদানা নিয়ে মিশরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। আজ ইউক্রেনের ওডেসা বন্দরে এসে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন গুতেরেস।