গত শুক্রবার বাচ্চারা বেলারুশ সীমান্ত পেরিয়ে ইউক্রেনে ফিরেছে। বহু অপেক্ষার শেষে সন্তানকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরেছেন বাবা-মায়েরা। ফাইল ছবি।
ইউক্রেনের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাচ্চাদের অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছে রুশ বাহিনী। যুদ্ধের গোড়া থেকেই বারবার মস্কোর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করে আসছে কিভ। এই অভিযোগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। মস্কো অবশ্য ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছে সব অভিযোগ। তারা জানিয়েছে, আইসিসি-কে তারা মানে না। এ হেন জটিল পরিস্থিতির মধ্যেই ৩০টিরও বেশি শিশুকে রুশ-হেফাজত থেকে উদ্ধার করে আনল ইউক্রেন। জানা গেল, মাসের পর মাস কী ভাবে তাদের বিভিন্ন জায়গায় কয়েদ করে রাখা হয়েছিল। অন্ধকার, স্যাঁতস্যাতে ইঁদুর-ভর্তি ঘরে একা একা থাকতে হত। রুশরা বলত, ‘সামার ক্যাম্প’!
যুদ্ধে ইউক্রেনের যে সব অঞ্চল রাশিয়া দখল করেছে, মূলত সেই সব জায়গা থেকেই বাচ্চাদের জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিছু ভিন্ন ঘটনাও রয়েছে। কাউকে পাঠানো হয়েছিল রাশিয়ায়, কাউকে রুশ-অধিকৃত ক্রাইমিয়ায়। ইউক্রেন জানিয়েছে, দীর্ঘ অভিযান চালিয়ে বাচ্চাগুলিকে উদ্ধার করা হয়েছে। গত শুক্রবার তারা বেলারুশ সীমান্ত পেরিয়ে ইউক্রেনে ফিরেছে। বহু অপেক্ষার শেষে সন্তানকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরেছেন বাবা-মায়েরা। জানা গিয়েছে তাদের বন্দিদশার ভয়ানক অধ্যায়।
পূর্ব ও দক্ষিণ ইউক্রেনের একটা বড় অংশ এখন রাশিয়ার দখলে। কিভের দাবি, এই সব অঞ্চলের থেকে কমপক্ষে ১৯,৫০০ শিশুকে অপহরণ করে রাশিয়া ও রুশ অধিকৃত ক্রাইমিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ইউক্রেন একের পর এক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে পঞ্চম অভিযান চলছে। ‘সেভ ইউক্রেন’ নামে একটি মানবাধিকার সংস্থা এই অভিযানের নেতৃত্বে রয়েছে। তাদের কর্ত্রী মিকোলা কুলেবা বলেন, ‘‘ভীষণ জটিল পরিস্থিতি। ৩১টি শিশুকে অক্ষত ফিরিয়ে আনতে পেরেছি, এটা ভেবেই ভাল লাগছে।’’ তিনি জানিয়েছেন, এক-একটি বাচ্চাকে পাঁচ মাসে পাঁচ বার জায়গা পরিবর্তন করানো হয়েছিল। কিছু বাচ্চাকে ইঁদুর, আরশোলা ভর্তি অপরিষ্কার জায়গায় দিনের পর দিন ফেলে রাখা হয়েছিল।
এই সব ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরে শিঁউরে উঠছে ইউক্রেন, তথা বিশ্ববাসী। আরও হাজার হাজার ইউক্রেনীয় শিশু রাশিয়ায় ‘নিরুদ্দেশ’। কোনও এক অজানা ক্যাম্পে বন্দি তারা। কবে ফিরবে, আদৌ কি ফিরবে, জানা নেই। রাশিয়া এখনও চুপ। রুশ বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে টুঁ শব্দটিও করা হয়নি।