ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস। ফাইল চিত্র।
তাঁর প্রস্তাবিত সংক্ষিপ্ত বাজেটকে গত কালই পুরোপুরি বাতিল করে দিয়েছেন সদ্য নিযুক্ত ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্ট। এই পরিস্থিতিতে পদ ছাড়ার জন্য চাপ বাড়ছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এলিজ়াবেথ ট্রাসের উপরে। বিরোধীরা তো বটেই, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে লিজ়ের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন তাঁর নিজের দল, কনজ়ারভেটিভ পার্টির কিছু এমপি-ও। তবে চাপের মুখে এক প্রথম সারির ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দেশের সাধারণ নাগরিকের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন ট্রাস। জানিয়েছেন, তিনি ও তাঁর সদ্য প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কোয়াসি কোয়ারটেং অর্থনীতি সংক্রান্ত যে সব পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তাতে বড় মাপের ভুল ছিল।
মাত্র কয়েক সপ্তাহ হল ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পদ সামলাচ্ছেন ট্রাস। প্রাক্তন ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনকের যে সব আর্থিক নীতির বিরোধিতা করে ট্রাস কনজ়ারভেটিভদের নেত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন, কার্যত গত কাল সেগুলির সব ক’টিকে আস্তাকুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন বর্তমান অর্থমন্ত্রী হান্ট। কর ছাড়ের প্রতিশ্রুতি থেকে শুরু করে বিদেশি পর্যটকদের ভ্যাটে ছাড়— ট্রাসের কোনও প্রতিশ্রুতিই এখন বাস্তবায়িত করতে নারাজ হান্ট। শুধুমাত্র বিদ্যুৎ বিলের ক্ষেত্রে ট্রাসের প্রতিশ্রুতিমতো দু’বছরের জায়গায় আগামী ছ’মাস পর্যন্ত ছাড় দিতে রাজি হয়েছেন হান্ট। যাতে ক্ষোভ বাড়ছে দেশের সাধারণ মানুষের।
গোটা বিষয়টি নিয়ে পার্লামেন্টে ট্রাসের নীরবতা ক্ষুব্ধ করে তুলেছে বিরোধীদেরও। আজ হাউস অব কমন্সে নিজের বাজেট প্রস্তাব নিয়ে মুখ খুলেছিলেন হান্ট। পাশে গম্ভীর মুখে বসে থাকা ছাড়া ট্রাসকে আর বিশেষ কিছুই করতে দেখা যায়নি। এর মধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তবে কি আদৌ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার যোগ্য নন ট্রাস? লেবার নেতা কায়ার স্টার্মার বললেন, ‘‘কোথায় প্রধানমন্ত্রী? উনি লুকিয়ে বেড়াচ্ছেন। নিজের ছায়াকেও ভয় পাচ্ছেন।’’ টোরি নেতা-নেত্রীদের একাংশও মনে করছেন দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই পদত্যাগের সময় এসেছে ট্রাসের। রজার গেল নামে এক টোরি এমপি-র কথায়, ‘‘আমার তো মনে হচ্ছে হান্টই আসলে এখন প্রধানমন্ত্রীর পদ সামলাচ্ছেন।’’
পার্লামেন্টে নীরব থাকলেও সংবাদমাধ্যমের কাছে কিন্তু মুখ খুলেছেন ট্রাস। স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর পদ সামলানোর যে গুরুভার তিনি পেয়েছেন, সেই দায়িত্ব ফেলে তিনি কোথাও যাবেন না। ট্রাস বলেছেন, ‘‘আমি বুঝতে পেরেছি যে আমাদের ভুল হয়েছে। তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। তবে ভুলগুলো আমি শুধরে ফেলেছি।’’ সেই সঙ্গেই হান্টের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ট্রাসকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আমি নতুন অর্থমন্ত্রী নিয়োগ করেছি। দেশে আর্থিক স্থিতিশীলতা ফেরানোর চেষ্টা চলছে। দেশবাসীকে আমি নিজের সেরাটুকু দিয়ে সেবা করত চাই।’’
এর মধ্যেই আজ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের কাছের একটি রাস্তা বন্ধ করে দেয় লন্ডন পুলিশ। সকাল পৌনে বারোটো নাগাদ পার্লামেন্ট হাউস আর ট্রাফালগার স্কোয়্যারের মাঝের হোয়াইটহলের কাছে একটি সন্দেহজনক প্যাকেট পাওয়া যায়। ওই এলাকায় অনেক সরকারি অফিস রয়েছে। কিছু বহুতল খালিও করে ফেলা হয়। প্যাকেটে কী ছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।