বৃহস্পতিবার ইস্তফা ঘোষণা ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর। ছবি: পিটিআই
ঠিক এই মূহূর্তটাই এত দিন এড়িয়ে চলছিলেন তিনি। কিন্তু আর ঠেকিয়ে রাখতে পারলেন না। সরকারি বাসভবনের সামনে দাঁড়িয়েসমবেত জনতা-সাংবাদিক-সমর্থকদের বললেন, ‘‘পৃথিবীর সব থেকে ভাল চাকরি থেকে ইস্তফা দিচ্ছি।’’
পরশু দুপুরে অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদের ইস্তফা এবং গত কাল মন্ত্রিসভার আরও পাঁচ জন সদস্য ইস্তফা দেওয়ার পরেও ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলে যাচ্ছিলেন, জনগণের রায়ে তিনি ক্ষমতায় এসেছেন। ফলে সরে দাঁড়ানোর কোনও প্রশ্নই নেই। কিন্তু আজ সকাল থেকে একের পর এক মন্ত্রিসভার সদস্য ইস্তফা দেওয়ার পরে বরিস বুঝতে পারেন, তাঁর মেয়াদ ফুরিয়ে আসছে। দুপুর ১২টার মধ্যে পদত্যাগ করা মন্ত্রীর সংখ্যাটা ৫০ ছাড়িয়ে যায়। এ বার ইস্তফা দেবেন প্রধানমন্ত্রীও, সেই গুঞ্জন ক্রমশ জোরদার হয়ে ওঠে। অবশেষে দুপুর পৌনে ১টার সময়ে তাঁর সরকারি বাসভবন ১০, ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে এসে দাঁড়ান প্রধানমন্ত্রী। তত ক্ষণে অসংখ্য সাধারণ মানুষ জড়ো হয়েছেন রাস্তায়। লাইন দিয়ে দাঁড়িয়েছেন বরিস মন্ত্রিসভার সেই সব সদস্য, তখনও যাঁরা ইস্তফা দেননি। উপস্থিত প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী ক্যারিও।
‘‘কনজ়ারভেটিভ দলের নতুন নেতা নির্বাচন করার সময় চলে এসেছে’’, এই বাক্যটি দিয়ে আজ তাঁর বক্তৃতা শুরু করেন জনসন। বলেন, ‘‘এই সময়ে শীর্ষ নেতৃত্বে বদল দল বা দেশ, কারও পক্ষেই লাভজনক নয়। কিন্তু এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, আমার যুক্তি আমি দলকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। তাই পৃথিবীর সব থেকে ভাল চাকরি থেকে ইস্তফা দিচ্ছি।’’
বরিস এবং তাঁর আগে ৫০ জনেরও বেশি ক্যাবিনেট সদস্যের ইস্তফায় দলের অন্দরে সঙ্কট দেখা দিলেও দেশ আপাতত কোনও রাজনৈতিক সঙ্কটের মুখে পড়ছে না। কারণ ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী ইস্তফা দিলে তাঁর উত্তরসূরিকে বেছে নিতে পারবে ক্ষমতাসীন দলটি। এবং এই নব নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বেই আগামী নির্বাচন পর্যন্ত দল ও দেশ চালানো হবে। ইস্তফা দিয়ে বরিস আজকে জানান, আগামী ‘অটাম’ (অগস্ট-সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত দলীয় প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলাতে প্রস্তুত তিনি। তার মধ্যে নতুন নেতা নির্বাচন করে ফেলতে পারবে দল।
বরিস মুখে এ কথা বললেও বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, এমন অসম্মানজনক বিদায়ের পরে কি আর এক দিনও দায়িত্বে থাকা উচিত বরিসের? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে কনজ়ারভেটিভ নেতাদেরই, কারণ তাঁরা যত দিন ‘প্রধান’ নির্বাচন না করছেন, তত দিন ক্ষমতায় থাকছেন বরিস। আজ বিকেল থেকেই দফায় দফায় বৈঠক করে সম্ভাব্য নেতার নাম নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। দলের অন্দরের খবর, তালিকায় বেশ উপর দিকেই রয়েছে ভারতীয় বশোদ্ভূতঋষি সুনকের নাম।