কিম ডারোখ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘অদক্ষ’, ‘অযোগ্য’ এবং ‘নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন’— আমেরিকায় ব্রিটেনের দূত কিম ডারোখ লন্ডনে গোপন কূটনৈতিক কেব্লে পাঠিয়ে এমনটাই জানিয়েছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে ব্রিটেনের প্রশাসন সূত্রে। ফাঁস হওয়া ওই কেব্ল একটি ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডে প্রকাশিত হয়েছে। ওই বার্তাগুলি পাঠানোর সময়সীমা ২০১৭ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত। এই তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই ব্রিটেন-আমেরিকার কূটনৈতিক সম্পর্ক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে জল্পনা। কারণ ব্রিটেন এবং আমেরিকা বরাবরই বন্ধু-দেশ হিসেবে পরিচিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সব দেশের দূতই নিজের দেশের জন্য এ ধরনের গোপন বার্তা পাঠিয়ে থাকে। গন্ডগোলটা হয় তখনই, যখন দেখা যায়, এ ধরনের বার্তা কোনও ভাবে ফাঁস হয়ে গিয়েছে। যা থেকে সংশ্লিষ্ট দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক স্তরে তৈরি হয় চূড়ান্ত অস্বস্তি। এ ক্ষেত্রে ব্রিটেনের দূত কিম ডারোখ ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে মাসের পর মাস প্রচেষ্টা চালিয়ে তাদের আস্থা অর্জন করেছিলেন, তা-ও এখন প্রশ্নের মুখে।
ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডে দাবি, ‘‘অমর্যাদায় শেষ হবে ট্রাম্পের কেরিয়ার’’—গোপন কেব্ল-এ ডারোখ এমন মন্তব্যও পাঠিয়েছেন ব্রিটেন সরকারকে। হোয়াইট হাউসের অন্দরে দ্বন্দ্ব সব সময়েই রয়েছে, এ কথা জানিয়ে নিজের দেশকে তিনি সতর্ক করেছেন।
ব্রিটেনের প্রশাসন সূত্রের দাবি, ট্যাবলয়েডটি যে কেব্লের কথা জানিয়েছে, তা ভুয়ো নয়। ট্রাম্পের বিদেশনীতি থেকে শুরু করে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে তাঁর পরিকল্পনা— সবই ডারোখের পাঠানো কেব্ল-এর সময়সীমার মধ্যে রয়েছে।
ট্যাবলয়েড থেকে জানা গিয়েছে, গত ২২ জুনের একটি মেমোতে ডারোখ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘গত মাসে ইরানে হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত থেকে ট্রাম্প কেন সরে এসেছেন?’’ তাতে ডারোখেরই মন্তব্য, ‘‘ট্রাম্পকে শেষ মুহূর্তে জানানো হয়েছিল, ইরান মার্কিন ড্রোন নামালেও তার পাল্টা আমেরিকা হামলা চালালে অন্তত ১৫০ প্রাণহানি হবে। আর আগামী বছরের নির্বাচনের আগে জনসমর্থন নষ্ট হয়, এমন কোনও ঝুঁকি নিতে চাননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন, পুনর্নির্বাচিত হওয়ার জোরদার সম্ভাবনা রয়েছে তাঁর।’’ হোয়াইট হাউস অবশ্য এই প্রসঙ্গে এখনও কোনও মন্তব্য করেনি।
রাজনৈতিক ভাবে ব্রিটেনেও এখন টালামাটাল অবস্থা। কনজ়ারভেটিভ পার্টি তার নয়া নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী বাছতে ব্যস্ত। ব্রিটেনের বিদেশ দফতর সূত্রে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘‘ব্রিটিশ মানুষ আশা করেন, তাঁদের দূত দেশের মন্ত্রীদের সৎ, নিরপেক্ষ মতামত জানাবেন। দূতদের মতামত সব সময় ব্রিটিশ মন্ত্রী বা সরকারের মতামত নয়। তবে আমরা তাঁদের মতামত গুরুত্ব দিয়েই দেখি। কারণ তা গোপন রাখা দস্তুর। যেমন এখানকার মার্কিন দূত ওয়েস্টমিনস্টারের রাজনীতি নিয়ে যা বিশ্লেষণ করেন, সেটা তিনি তাঁর দেশে পাঠান। আমাদের ওয়াশিংটনে যে দল রয়েছে, তাদের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের মজবুত সম্পর্ক রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সে সম্পর্ক কোনও অবস্থাতেই নষ্ট করতে দেওয়া হবে না।’’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট অবশ্য গোটা বিতর্কে এখনও নীরব। তবে ট্রাম্প-মুগ্ধ ব্রিটেনের ব্রেক্সিট পার্টির নেতা নাইজেল ফারাজ ব্রিটেনের দূত ডারোখ সম্পর্কে বলেছেন, ‘‘যত দ্রুত ওঁকে পদচ্যুত করা যায়, ততই মঙ্গল।’’