Politics

ভোট-আবহে ভাষার মধ্যে ঢুকে পড়া রাজনীতির মেরুকরণ নিয়ে গবেষণা দুই বাঙালির

জনমত গঠনে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা— আসলে এটাই যাচাই করতে চেয়েছিলেন আষিকরা।

Advertisement

স্নেহাংশু অধিকারী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২০ ০৪:৫৬
Share:

গবেষণায় দুই বাঙালি: আষিক খুদাবখ্স ও রূপক সরকার (ডান দিকে)।

প্রতিপক্ষ জো বাইডেন সম্পর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প শেষ কবে ‘ভাল’ কথা বলেছেন— মনে করতে পারছেন না অনেকেই। দু’দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরা শুধু নন, অনলাইন যুদ্ধে শামিল যেন গোটা আমেরিকাই। মেরুকরণ এতটাই স্পষ্ট যে, তা দিব্যি ধরে ফেলছে কৃত্রিম মেধা বা আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সও। রেয়াত নয় অতিমারিকেও। কেউ লিখছেন ‘মাস্ক’, তো কেউ আটকে ‘মাজ়ল’-এ (স্তব্ধ করে দেওয়া)। মাঝে মাঝে অবশ্য খাবিও খাচ্ছে যন্ত্রমেধা— সবার ভাষাই তো ইংরেজি, তা হলে ‘সাদা’ বোঝাতে গিয়ে কেউ-কেউ ‘কালো’ লিখছেন কেন! রামের মুখে যা ‘বিক্ষোভ’, শ্যামের মুখে তা ‘দাঙ্গা’ হয় কী করে? কেউ বলছেন, ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’, তো কেউ ‘অল লাইভস ম্যাটার’! কিন্তু কেন?

Advertisement

ভোট-আবহে ভাষার মধ্যেও ঢুকে পড়া রাজনীতির এই মেরুকরণটাই ধরতে চেয়েছিলেন দুই বাঙালি গবেষক। দু’জনেই কল্যাণী গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রাক্তন ছাত্র। পিটসবার্গের কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে ও-দেশ থেকেই কাজটা করেছেন মধ্য তিরিশের আষিক খুদাবখ্স। আর জয়েন্ট অথর হিসেবে চলতি অতিমারি আবহে দমদম থেকে তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছেন রিসার্চ ইঞ্জিনিয়ার রূপক সরকার। সঙ্গে আগাগোড়া তাঁরা পাশে পেয়েছেন অধ্যাপক মার্ক এস ক্যামলেট এবং টম মিচেলকে।

জনমত গঠনে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা— আসলে এটাই যাচাই করতে চেয়েছিলেন আষিকরা। ডেটা-সূত্র হিসেবে এমএসনবিসি, সিএনএন, ফক্স নিউজ় এবং ওয়ান আমেরিকা নিউজ় নেটওয়ার্কের মতো বামপন্থী থেকে চরম ডানপন্থী হিসেবে পরিচিত চারটি সংবাদমাধ্যমকে বেছে নিয়েছিলেন তাঁরা। এপ্রিলের মাঝামাঝি শুরু গবেষণা। গত ছ’বছরে ইউটিউবে পোস্ট করা এদের প্রায় ২ লক্ষ নিউজ়-ভিডিয়োয় ৬৫ লক্ষ দর্শক-শ্রোতা যে-প্রায় ৮ কোটি ৬৬ লক্ষ কমেন্ট করেছেন, তা সবই ডেটা হিসেবে নেওয়া হয়েছিল।

Advertisement

আরও পড়ুন: গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে কোটিপতি হয়ে গেলেন মহিলা

তার পরে পুরো কাজটাই ‘মেশিন ট্রান্সলেশন টুল’ দিয়ে হয়েছে বলে দাবি আষিকদের। ট্রান্সলেশন মানে অনুবাদই, কিন্তু এখানে আদতে ‘ম্যাপিং’। ‘গাড়ি’-র সঙ্গে যে ‘চাকা’ শব্দটা খাপ খায়— এটা অ্যালগরিদমে বোঝাতে হয় মেশিনকে। সে জন্য ‘গাড়ি’ আর ‘চাকা’ দিয়ে লক্ষ-লক্ষ বাক্য ‘ফিড’ করাতে হয় যন্ত্রকে। পরে সেটাই যথাসময়ে প্রায় নির্ভুল ‘ম্যাপিং’ বা অনুবাদ করে ফেলে কৃত্রিম মেধা।

কিন্তু এই গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এক শব্দের অর্থ হিসেবে উঠে আসছে একাধিক ‘বিভ্রান্তিকর জুটি’। ‘‘এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু ভাষার মধ্যে ব্যাপক মেরুকরণটাই চিন্তার,’’ পিটসবার্গ থেকে ফোনে বললেন আষিক। রূপক আলাদা করে স্ক্রিনশট পাঠালেন গবেষণাপত্রের একটি টেবল। যেখানে এক দলের সমর্থকেরা অন্য দলকে লাগাতার ‘বিশ্বাসঘাতক’ ‘দেশের পক্ষে বিপজ্জনক’ বলে বিঁধেছেন। সিএনএন-এর দর্শকেরা একহাত নিয়েছেন রিপাবলিকানদের, ফক্স-দর্শকেরা কাঠগড়ায় তুলেছেন ডেমোক্র্যাটদের। কিন্তু বাকি সব শব্দ প্রায় এক থাকায় যন্ত্রের বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে দু’দলই ‘সমান’! মেরুকরণে ধন্দ বাড়ছে যন্ত্রমেধারও।

আরও পড়ুন: পাকিস্তানে মাদ্রাসায় বড়সড় বিস্ফোরণ, নিহত শিশু-সহ ৭, আহত ৭০

গত মে মাসে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েড খুনের পরে নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছিল ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ (বিএলএম) আন্দোলন। এ ক্ষেত্রেও কমেন্ট সেকশনে মেরুকরণ চূড়ান্ত আকার নিয়েছে। চরম ডানপন্থী মনোভাবাপন্নরা ‘বিএলএম’-কে জঙ্গি গোষ্ঠীর তকমা দিয়েছে। আর বামপন্থীরা একই অভিযোগে কাঠগড়ায় তুলেছে একটি শ্বেতাঙ্গ গোষ্ঠীকে।

আষিক বললেন, ‘‘কাজের প্রয়োজনে যথাসম্ভব বেশি ডেটা নিয়েছি। কিন্তু আপনাদের সব কমেন্ট পড়ার দরকার নেই। যখন দেখবেন ‘মাস্ক’-এর ট্রান্সলেশন দাঁড়াচ্ছে কিংবা ‘মাজ়ল’-এ, কিংবা ‘ফসিল’, ‘সোলার’-এ— মেরুকরণটা সহজেই আন্দাজ করতে পারবেন। পরিবেশ রক্ষা কিংবা অতিমারি ঠেকাতে যখন কেউ সচেতন হওয়ার কথা ভাবছেন, শুধু রাজনৈতিক কারণে বাকিদের যেন তা নাকচ করাতেই আনন্দ!’’

এই মেরুকরণের দায় কি শুধুই সংবাদমাধ্যমের! নাকি, আসল দাপট নেতাদেরই? এর উত্তরে কোনও মন্তব্য করলেন না দুই গবেষক। জানালেন, ওই ডেটা হাতে নেই। ‘‘তবে ‘ডেমোক্র্যাসি’ শব্দটা যে এখনও মেশিন ট্রান্সলেশনে ‘ডেমোক্র্যাসি’-ই থাকছে, সেটাই আশার,’’ বললেন দমদমের রূপক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement