ট্রাম্পের সমর্থনে মিছিল ওয়াশিংটনের রাস্তায়। ছবি-এএফপি।
তিনি ভাঙবেন, তবু মচকাবেন না! তিনি হারবেন, তবু গদি ছাড়বেন না। অতঃপর, সমর্থকরাও যে তাঁর সমর্থনে রাস্তায় নামবেন, গোলমাল করবেন, স্লোগান দেবেন, তাতে অবাক হওয়ার কী?
ট্রাম্প ক্রমাগতই তোপ দাগছেন। বলে যাচ্ছেন, ভোটে কারচুপির হয়েছে, ষড়যন্ত্র করে তাঁকে হারানো হয়েছে। এত দিন ধরে তাঁর বলে যাওয়া কথারই এ বার অনুরণন ওয়াশিংটনের রাস্তায় জনতার মিছিলে। সমর্থকদের ক্রমাগত ইন্ধনও দিচ্ছেন তিনি।
শনিবারই ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউস থেকে বেরিয়ে রাস্তার দু’ধারে জমা হওয়া হাজার হাজার সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নাড়তে দেখা গিয়েছে। তাঁরাও ট্রাম্পকে দেখে উচ্ছ্বসিত। শূন্যে মুঠো ছুড়ে চিৎকার করে সমর্থন জানিয়েছেন। মোবাইলে ছবি তুলেছেন। একাধিক পোস্টার দেখা গিয়েছে, যেখানে লেখা ছিল ‘বেস্ট প্রেসিডেন্ট এভার’, ‘স্টপ দ্য স্টিল’, ‘ট্রাম্প ২০২০: কিপ আমেরিকা গ্রেট’, ‘নো মোর বুলশিট’-এর মতো স্লোগান। পতাকা উড়িয়ে জনতা ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন দেখিয়েছেন। হাজার হাজার জনতার কণ্ঠে শোনা গিয়েছে, ‘‘উই ওয়ান্ট ট্রাম্প! উই ওয়ান্ট ট্রাম্প!’’, কিংবা ‘ফোর মোর ইয়ার্স, ফোর মোর ইয়ার্স’-এর মতো স্লোগান।’
প্রসঙ্গত, বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যে দাবি ছিল, সেই মোতাবেক শনিবারই নর্থ ক্যারোলিনা এবং জর্জিয়ায় ভোটের গণনা-পুনর্গণনা পর্ব শেষ হয়েছে। সে দেশের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত ফল জানাচ্ছে, ইতিমধ্যেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী ঘোষিত ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন পেয়েছেন ৩০৬টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট। তাঁর রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী তথা বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঝুলিতে ২৩২টি। যদিও এখনও সরকারি ভাবে চূড়ান্ত ফল ঘোষিত হয়নি। ইলেক্টোরাল কলেজের ৫৩৮ ভোটের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ‘ম্যাজিক ফিগার’ ২৭০ আগেই ছুঁয়ে ফেলায় জয়ী ঘোষিত হন বাইডেন।
ট্রাম্পের পোস্টার নিয়ে মিছিলে জনতা। ছবি—রয়টার্স।
ঘটনা হল, ৩ নভেম্বর নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে পরাজয় এখনও মেনে নিতে পারছেন না ট্রাম্প। যে কারণে ক্ষমতা হস্তান্তরের দিকেও যাচ্ছেন না তিনি। শনিবারও তিনি দাবি করেছেন, ভোটে ব্যাপক রিগিং হয়েছে। এবং, তিনিই প্রকৃত জয়ী। কিন্তু, তাঁর এই দাবির সমর্থনে কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেননি। শুক্রবারই আমেরিকার নির্বাচন পরিচালন সংস্থার পক্ষে ফেডেরাল এবং স্টেট অফিশিয়ালরা জানিয়েছিলেন, এই নির্বাচন ‘‘দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে নিরাপদ নির্বাচন।’’ এবং, রিগিং বা ভোট কারচুপির কোনও প্রশ্নই ওঠে না।
আরও পড়ুন: ‘সময়ই শেষ কথা বলবে’, এখনও হার না মেনে হেঁয়ালি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের
ট্রাম্প এ সব মানছেন না। সমর্থকরাও তাঁরই কথায় বিশ্বাস রাখছেন। ওয়াশিংটনের ওই মিছিলে আসা এক ট্রাম্প-ভক্তের কথায়, ‘‘আমরা কিছুই শুনতে চাই না। আমরা আমাদের প্রেসিডেন্টকে আরও চার বছরের জন্য ফিরে পেতে চাই। এই ভোটে নির্ঘাত কারচুপি হয়েছে। অনেক অবৈধ ভোটার ভোট দিয়েছে। এমনকী, মৃত মানুষদেরও ভোট পড়েছে।’’ কিন্তু, এর প্রমাণ কী? তার অবশ্য কোনও উত্তর তিনি দিতে পারেননি। মোটের উপর এটাই ট্রাম্প-ভক্তদের অবস্থান। সিনিয়র রিপাবলিকান নেতাদের একাংশ হয় ট্রাম্পের পক্ষে, না হলে তাঁর বর্তমান কর্মকাণ্ড নিয়ে মুখ খুলছেন না। যাকে ‘ভয়াবহ প্রবণতা’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বরাক ওবামা। তবে, ব্যতিক্রমও রয়েছে। জর্জ ডব্লিউ বুশ যেমন ইতিমধ্যেই ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
এমনিতেই আমেরিকাতে ফের করোনা-গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। তার মধ্যে ট্রাম্প সমর্থকের এই বিপুল জমায়েত ভাঁজ ফেলেছে প্রশাসনের কপালে। এরই মধ্যে বাইডেন দেশের মানুষের কাছে অনুরোধ করে বলেছেন, তাঁরা যেন করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে সচেতন হন, সব সময় মাস্ক পরে থাকেন।
আরও পড়ুন: করোনায় কাবু আমেরিকার গোয়েন্দারাও