উদ্ধারকাজ চালাতে ইয়েমেনে গিয়েছে ভারতীয় নৌসেনার আইএনএস মুম্বই রণতরী।
গুলিগোলা চলছে বৃষ্টির মতো। আকাশে সৌদি আরবের নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর বিমানের চক্কর, মাটিতে শিয়া হুথি যোদ্ধাদের দাপট। সংঘর্ষে এমনই বিধ্বস্ত ইয়েমেনের আডেন বন্দর থেকে বড়জোর ৫-৬ কিলোমিটার দূরে এসে আজ থমকে গেল আইএনএস মুম্বই। ভারতীয় নৌবাহিনীর অত্যাধুনিক গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার।
ভারত সরকারের ‘মিশন রাহত’-এ আজ থেকেই যোগ দিল প্রবল শক্তিশালী এই রণতরী। মাঝসমুদ্র থেকে নিখুঁত লক্ষ্যে অনায়াসে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারে সে। এ ছাড়া ছোট-বড় একাধিক কামান-মেশিনগান তো রয়েইছে। তা হলে কেন গুলি-বোমার ভয়ে আডেনে ভিড়ল না ‘মুম্বই’? বিশেষজ্ঞদের একাংশ ব্যাখ্যা দিলেন, ‘ভয়’ মোটেই নয়। ইয়েমেনে তো যুদ্ধ লড়তে আসেনি ভারত। নৌ ও বিমানবাহিনীর একমাত্র লক্ষ্য, জ্বলন্ত ইয়েমেনের বিভিন্ন শহর থেকে একে একে সমস্ত ভারতীয়কে উদ্ধার করে আনা। তাই বন্দর থেকে দূরেই নোঙর করেছে ‘আইএনএস মুম্বই’। এই ধরনের বিশেষ অপারেশনে সে নতুন নয়। ২০০৬-এ উত্তপ্ত লেবানন থেকে ভারত ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের সরিয়ে আনার ‘অপারেশন সুকুন’-এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল এই রণতরী।
কিন্তু আজ এত গুলিগোলার মধ্যে উদ্ধারকাজ হবে কী করে? আডেনে ভারতীয় নৌ-অফিসাররা তখন ছকে নিলেন অন্য রাস্তা। ভাড়া করা হল ছোট ছোট কয়েকটা নৌকো। সেগুলোরই এক-একটায় ৩০-৩৫ জনকে বসিয়ে নিয়ে বন্দর থেকে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হতে লাগল আইএনএস মুম্বইয়ে।
গোলাগুলির যুদ্ধে সরাসরি না নেমেও এ-ও এক যুদ্ধ তো বটেই। নৌবাহিনীর তরফেও এক বিবৃতিতে সাফ বলা হয়েছে, ‘‘যুদ্ধের সময়ে যে ভাবে উদ্ধারকাজ চালানো হয়, প্রায় সে ভাবেই ভারতীয়দের উদ্ধার করতে নেমেছে ‘আইএনএস মুম্বই’। ইয়েমেনের পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর।’’ ‘আইএনএস মুম্বই’ ছাড়াও এই অপারেশনে রয়েছে ভারতীয় নৌসেনার নজরদারি জাহাজ ‘আইএনএস সুমিত্রা’ এবং ফ্রিগেট ‘আইএনএস তারকাশ’। এ ছাড়া দু’টো সাধারণ জাহাজও রয়েছে। অল-হুদাইদাহ-সহ ইয়েমেনের অন্যান্য বন্দর থেকে তারা ফিরিয়ে আনছে ভারতীয়দের।
সরকারি সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত ইয়েমেন থেকে তেরোশোরও বেশি ভারতীয় দেশে ফিরেছেন। তবে আটকেও রয়েছেন অনেকে। আজ ইয়েমেনের ভূখণ্ড থেকে সব মিলিয়ে অন্তত ৮০০ ভারতীয়কে সরিয়ে আনা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এ ছাড়া কয়েক জন নেপালি, পাকিস্তানি এবং বাংলাদেশিকেও অল-হুদাইদহ বন্দর থেকে উদ্ধার করেছে ভারতীয় নৌবাহিনী। আবার ইয়েমেনের মোকাল্লাহ শহর থেকে ১৪৮ জন পাকিস্তানিকে উদ্ধার করেছে পাক সরকার। সেই সঙ্গে ১১ জন ভারতীয়কেও উদ্ধার করেছে তারা। সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণরেখা নিয়ে দু’দেশের নিরন্তর চাপানউতোরকে হারিয়ে এখানে অন্তত জিতে গিয়েছে মানবিকতা।
জিবুতিতে থেকে উদ্ধারকাজ তদারক করছেন প্রাক্তন সেনাপ্রধান তথা বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিংহ। আটকে পড়া ভারতীয়দের খোঁজখবর নিতে মাঝে সানা শহরে গিয়েছিলেন তিনি। সানাতেই দিনে দু’বার ভারতকে বিশেষ বিমান নামানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আজ বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরুদ্দিন জানিয়েছেন, সানা থেকে তিনশোরও বেশি ভারতীয়কে জিবুতিতে আনা হয়েছে। গতকাল রাতে বায়ুসেনার একটি বিমানে ৩৩৪ জন ভারতীয় মুম্বই পৌঁছন। পাশাপাশি, এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিশেষ বিমান গভীর রাতে ৩৩০ জন ভারতীয়কে নিয়ে কোচি বিমানবন্দরে এসেছে। কোচিতে যে ভারতীয়রা এসেছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বহু নার্স। তাঁদের স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন কেরলের মন্ত্রী কে সি জোসেফ।