—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
দীপাবলি উপলক্ষে সপ্তাহভর বাজির তাণ্ডবে অতিষ্ঠ হতে হয়েছিল শহরবাসীকে। আইনকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রাতভর উৎসবের নামে শব্দতাণ্ডব চলেছিল বলে অভিযোগ। দীপাবলিতে বেআইনি বাজির দাপটের রেশ মিটতে না মিটতেই ফের আতঙ্ক বাড়াচ্ছে ছট। প্রশ্ন উঠছে, দীপাবলির মতোই শহর দাপাবে না তো শব্দদানব?
রাত পোহালেই বৃহস্পতিবার শুরু ছট। দিনকয়েক আগেই কালীপুজোয় লাগামছাড়া বেআইনি শব্দবাজির তাণ্ডবের সাক্ষী থাকতে হয়েছে শহরবাসীকে। পুলিশের তরফে ব্যবস্থা, নজরদারির দাবি করা হলেও বাস্তব অভিজ্ঞতা অবশ্য অন্য কথা বলেছে। কালীপুজোকে কেন্দ্র করে প্রায় চার দিন ধরে চলেছে শব্দের তাণ্ডব। বেহালা, হরিদেবপুর, কসবা, কাশীপুর, ইএম বাইপাস-সহ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে রাত বাড়লেই বেড়েছে বেআইনি শব্দবাজির দাপট। বাজি ফাটাতে সুপ্রিম কোর্টের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা মানা তো হয়ইনি, উল্টে অধিকাংশ জায়গায় বাজি বিক্রির নিয়মকেও বুড়ো আঙুল দেখিয়ে খোলা বাজারে দেদার বিকিয়েছে বেআইনি বাজি।
এ বছর বাজি-দৌরাত্ম্যের লাগাম ছাড়ানোর কারণ হিসাবে পুলিশি নজরদারির ঢিলেমিকেই চিহ্নিত করছেন সচেতন শহরবাসীর অনেকে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, এই ঢিলেমির ‘ফল’ ছটেও ভুগতে হবে না তো? পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর সাধারণ সম্পাদক নব দত্ত বলেন, ‘‘এখন ঘাড় ঘোরালেই বাজি। বাজারের মুদির দোকানও এ বছর বাদ যায়নি। গত কয়েক বছরে তা দেখা যায়নি। বাজারগুলিতে নজরদারির ক্ষেত্রে প্রশাসনের কোনও নিয়ন্ত্রণ না থাকার মাসুল গুনতে হয়েছে দীপাবলিতে। এর পরে ছট-সহ আগামী দিনে যা যা উৎসব আছে, সেখানেও গুনতে হবে।’’
প্রতি বছর দীপাবলির পাশাপাশি ছটকে কেন্দ্র করেও শহরে শব্দবাজির তাণ্ডবের অভিযোগ ওঠে। পুলিশের সামনেই তাণ্ডব চলে বলে অভিযোগ। শুধু শব্দবাজি নয়, সেই সঙ্গে যুক্ত হয় ডিজের দাপট। বিশেষত, গঙ্গা এবং ছটের জন্য তৈরি অস্থায়ী পুকুর চত্বরে ভোর থেকে দেদার বাজি ফাটানো হয় বলে অভিযোগ। গত বছর এর থেকে বাদ পড়েনি হাসপাতাল চত্বরও। ইএম বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতাল চত্বরের জলাশয়ে দেদার বাজি ফাটানোর দৃশ্য ধরা পড়েছিল। একই ছবি ছিল সুভাষ সরোবর সংলগ্ন এলাকা-সহ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে। এ বছরও সেই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
লালবাজারের তরফে যদিও নজরদারির আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। ছটকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতি ও শুক্রবার অতিরিক্ত ৩৭০০ জন পুলিশকর্মীকে রাস্তায় নামানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। গঙ্গার ঘাট-সহ শহরের ১৩৩টি জায়গায় ছট পালিত হবে। প্রতিটি জায়গায় পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শহরের বিভিন্ন রাস্তা ও গুরুত্বপূর্ণ মোড়েও থাকবে পুলিশি বন্দোবস্ত। লালবাজারের এক পুলিশকর্তা বলছেন, ‘‘দীপাবলির আগে থেকে ধরপাকড়, বেআইনি বাজি বাজেয়াপ্ত করার উপরে জোর দেওয়া হয়েছিল। দীপাবলিতেও ধরপাকড় চলেছে। ছটেও আলাদা ভাবে নজর থাকবে। সেই মতো সব ডিভিশনে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে।’’
কিন্তু যেখানে পুলিশের সামনেই বার বার বাজি ফাটানোর অভিযোগ উঠে, সেখানে আদৌ কি অতিরিক্ত পুলিশ নামিয়ে কাজ হবে? এর উত্তর অবশ্য মেলেনি।