সুপ্রিম কোর্টের দিকে এগোচ্ছে কট্টরপন্থীদের মিছিল। ছবি: এক্স (সাবেক টুইটার)।
তিনি বহু আসামির মরণবাঁচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ বার তাঁরই মাথার দাম ঘোষণা করল দেশের জনতার একাংশ। একটি রায় নিয়ে অসন্তোষের ফলে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির মাথার দাম হিসাবে ঘোষণা করা হল ১ কোটি পাকিস্তানি মুদ্রা। ক্ষুব্ধ জনতা চড়াও হল পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টেও।
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ শহরের একেবারে মাঝামাঝি পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। তার আশপাশের বেশ খানিকটা ফাঁকা চত্বর। তাকে বেড় দিয়ে এগিয়েছে বড় রাস্তা। আচমকাই দেখা যায় সেই রাস্তা পেরিয়ে হুড়মুড়িয়ে ছুটে আসছেন হাজার হাজার মানুষ। লক্ষ্য সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবন। অনেকেই পতাকা হাতে দৌড়ে যাচ্ছেন। ভিড়ের বাকি অংশকে দেখা যাচ্ছে সংঘবদ্ধ ভাবে দৃঢ় পদক্ষেপে সুপ্রিম কোর্টের মূল ফটকের দিকে এগিয়ে যেতে। সেখানে পুলিশ কাঁটাতারের প্রতিরোধ তৈরি করেছিল। সেই প্রতিরোধ ভেঙেই পতাকা হাতে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করছেন তাঁরা।
হঠাৎ দেখলে মনে হতে পারে আদালতকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে পথে নেমেছে পাকিস্তানের জনতা। কিন্তু আসলে ওই ক্ষোভ পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে। অভিযোগ, প্রধান বিচারপতি কাজি ফইজ় ইশা ইসলাম ধর্মের ‘অবমাননা’ করেছেন। ওই ‘অপরাধে’ই প্রধান বিচারপতি ইশার মৃত্যুর দাবিও উঠেছিল মিছিলে।
ঘটনাটি সোমবার ঘটেছে ইসলামাবাদে। তবে ওই মিছিলের ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে বুধবার। সমাজমাধ্যম মারফত ছড়িয়ে পড়েছে সেই সব ভিডিয়ো (আনন্দবাজার অনলাইন ওই সমস্ত ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি)। তবে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ‘ডন’ এবং ‘জিও টিভি’ জানিয়েছে, প্রধান বিচারপতি ইশার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের কট্টরপন্থীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন সম্প্রতি তিনি ‘ধর্মীয় অবমাননা’য় অভিযুক্ত এক ব্যক্তিকে বেকসুর খালাস করেছেন বলে। প্রধান বিচারপতি ইশা বলেছিলেন, অ-মুসলিমেরাও পাকিস্তানে স্বাধীন ভাবে নিজস্ব ধর্মাচরণ করতে পারবেন। কট্টরপন্থীদের দাবি, ওই রায় দিয়ে আদতে ধর্মীয় অবমাননা করেছেন পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতিই।
ঘটনার সূত্রপাত ফেব্রুয়ারি মাসে। পাকিস্তানের আহমদিয়া সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি মুবারক আহমেদ সানিকে মুক্তি দিয়েছিল পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। ২০২৩ সালের ৭ জানুয়ারি মুবারককে গ্রেফতার করা হয়েছিল পাকিস্তানের একটি কলেজে ধর্মগ্রন্থ ‘ফকির-এ-সাগির’ প্রচারের জন্য। ‘ফকির-এ-সাগির’ হল আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ধর্মগ্রন্থ। যা আদতে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতার পুত্র মির্জা বশির আহমেদের করা কোরানের বিশ্লেষণ। পাকিস্তানের কোরান আইনে গ্রেফতার করা হয়েছিল তাঁকে। পরে গ্রেফতারির ১ বছর ১ মাস পর তিনি মুক্ত হন। আদালতকে মুবারক বলেছিলেন, যে ঘটনায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেটি ঘটেছিল ২০১৯ সালে। আর যে আইনে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেটি সেই সময় ছিল না। ওই যুক্তিতেই তাঁকে বেকসুর খালাস করা হয়। একই সঙ্গে আদালত পাকিস্তানে অ-মুসলিমদের নিজ নিজ ধর্মীয় আচরণের স্বাধীনতার কথাও বলে। প্রধান বিচারপতির সেই মন্তব্য এবং রায়ের বিরুদ্ধেই শুরু হয় কট্টরপন্থী সংগঠন তেহরিক-এ লব্বায়েক পাকিস্তানের প্রতিবাদ বিক্ষোভ। পরে সেই বিক্ষোভে যোগ দেয় অন্য কট্টরপন্থী সংগঠনগুলিও। সোমবার সেই বিক্ষোভই বড় আকার নেয়। সূত্রের খবর, আন্দোলনকারীরা ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টকে সিদ্ধান্ত বদলানোর জন্য।