মর্গে ভিড়, ১ লক্ষ ঘরছাড়া সিরিয়ায়

পাশেরই একটা টেবিলে রাখা ঢাউস নীল ব্যাগ। চেন খুলতেই বেরিয়ে এল দেহ। নিথর। পরনে সেই এক সবুজ-জংলা ছাপের সেনা উর্দি।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

বেরুট শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৯ ০১:৫৮
Share:

ছবি: এএফপি।

কোমরের নীচ থেকে শরীর উড়ে গিয়েছে বোমায়। বাকিটুকু নীল-সাদা ডোরাকাটা চাদরে ঢাকা। নিথর। তবু থেকে থেকেই সেই চাদর সরিয়ে নিহতের মাথায় হাত বোলাচ্ছেন এক তরুণী। স্পঞ্জ দিয়ে রক্ত মুছছেন, আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় রাস আল-আইন শহরে এক হাসপাতালের পিছনের দিকে ছোট্ট কাঠের ঘর। আপাতত সেটাই অস্থায়ী মর্গ। বাড়ছে ভিড়। তুর্কি সেনা অভিযানের চতুর্থ দিনে সেখানে এখন সহযোদ্ধাদের দেহ গুনছেন কুর্দরা।

Advertisement

পাশেরই একটা টেবিলে রাখা ঢাউস নীল ব্যাগ। চেন খুলতেই বেরিয়ে এল দেহ। নিথর। পরনে সেই এক সবুজ-জংলা ছাপের সেনা উর্দি। পাশের টেবিলে আরও একটা দেহ। তা দেখিয়ে চিৎকার করে উঠলেন এক প্রবীণ কুর্দ, ‘‘বলতে পারেন, আমার ছেলেটা কী দোষ করেছিল? ও তো আর এসডিএফের সদস্য নয়! তবু শেষ করে দিল তুর্কি বাহিনী।’’ তুরস্কের বিদেশ মন্ত্রকের দাবি, বুধবার হামলা শুরুর পর থেকে ইতিমধ্যেই প্রায় ৩৫০ জন কুর্দ যোদ্ধাকে (আঙ্কারার ভাষায় ‘জঙ্গি’) মেরে ফেলেছে তাদের বাহিনী। স্থানীয় একটি মানবাধিকার সংগঠনের দাবি, তুরস্কের বিমান হানায় শুধুই আজই ১০ জন নিরীহ নাগরিকের প্রাণ গিয়েছে। চার দিনের হিসেবে সংখ্যা ২৮। ঘরছাড়ার সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে আজ। আজও সীমান্ত লাগোয়া সিরিয়ার একাধিক শহরের আকাশে তুরস্কের যুদ্ধবিমানকে চক্কর দিতে দেখা গিয়েছে। জায়গায় জায়গায় বোমা পড়েছে। শোনা গিয়েছে নাগাড়ে গোলা-গুলির শব্দ।

ভারত, ইটালির মতো দেশ, এমনকি রাষ্ট্রপুঞ্জও তুরস্কের অভিযান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তুর্কি বাহিনীকে সংযত হওয়ার আর্জি জানিয়েছে ন্যাটো। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে আজ কয়েক হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে তুরস্কের এই কুর্দ-বিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান। অস্ট্রেলিয়ার একাধিক শহরেও এক ছবি দেখা গিয়েছে। আপাতত তারা তুরস্ককে অস্ত্র বিক্রি করবে না বলে জানিয়েছে জার্মানি। আঙ্কারা তবু অনড়ই। আজ তুরস্ক দাবি করেছে, কুর্দ যোদ্ধাদের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রাস আল-আইন ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ দখল করে নিয়েছে তাদের বাহিনী। যদিও কুর্দরা এই দাবি মানতে নারাজ। সূত্রের খবর, যত দিন কাটছে তত বেশি পাল্টা হামলায় জোর বাড়াচ্ছে এসডিএফ।

Advertisement

আমেরিকা মধ্যস্থতার কথা বললেও, বরফ গলেনি। উল্টে, তুরস্কের বোমারু বিমান তাদের ঘাঁটিতেও আছড়ে পড়েছে বলে দাবি করল আমেরিকা। পেন্টাগনের মুখপাত্রের দাবি, কাল স্থানীয় সময় রাত ৯টা নাগাদ কোবানি শহরের কাছে মার্কিন সেনা ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে ন্যাটোর সদস্য তুরস্ক। তবে মার্কিন সেনার তরফে হতাহতের কোনও খবর নেই। স্বাভাবিক ভাবেই মার্কিন বাহিনীর উপর এই হামলার অভিযোগ স্বীকার করেনি আঙ্কারা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাম্প প্রশাসনেরই একাধিক কর্তা, মার্কিন ঘাঁটিকে নিশানা করে তুরস্কের এই হামলাকে নেহাতই দুর্ঘটনা বলছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সিরিয়ার হাল ফেরাতে, সেনা পাঠিয়ে বা নিষেধাজ্ঞার পাহাড় চাপিয়ে তুরস্ককে ‘শায়েস্তা’ করার ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এ দিকে আজই আমেরিকার সিরিয়া-নীতিতে কটাক্ষ করতে শোনা গেল সৌদি রাজকুমার তুর্কি আল-ফয়সলকে। তাঁর কথায়, ‘‘আমেরিকার কথায় আর কাজে এত ফারাক যে সত্যি-মিথ্যেটা বোঝাই যায় না। এই যেমন, সিরিয়ায় ওদের বাহিনী আছে না নেই, সেটাই এখনও স্পষ্ট নয়।’’ গত বছরের ডিসেম্বরে সিরিয়া থেকে সেনা সরানোর কথা বলেছিলেন ট্রাম্প। চলতি মাসের গোড়ায় সেই পর্ব শুরু হতেই কুর্দদের হটাতে অভিযানে নামে আঙ্কারা। এ ভাবে রাতারাতি সেনা সরানো নিয়েও আমেরিকাকে বিঁধেছেন ফয়সল। তাঁর দাবি, সিরিয়াকে বোকা বানানোর এই ট্র্যাডিশন বারাক ওবামা জমানা থেকেই চলে আসছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement