বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত কোথায় হয়, এর উত্তরটা বেশির ভাগেরই জানা— চেরাপুঞ্জির মওসিনরামে। এখানে বছরভর বৃষ্টি হয়। কিন্তু এই পৃথিবীতে এমনও জায়গা আছে যেখানে ‘বরুণ দেব’-এর দেখা মেলাই ভার। নাহ! কোনও মরুভূমির কথা বলছি না, এটা একটা গ্রাম। আসুন দেখে নেওয়া যাক, গ্রামটি কোথায়, কেনই বা সেখানে বৃষ্টি হয় না।
আমাদের দেশে বছরভর চাষিরা অপেক্ষা করে থাকে মৌসুমীবায়ুর জন্য। মৌসুমী বায়ু ঢুকলে বৃষ্টিপাত হবে। আর তাতে ফসলও ভাল হবে। কিন্তু পশ্চিম-মধ্য এশিয়ার ইয়েমেনের এই গ্রামে দশকের পর দশক বৃষ্টি ছাড়াই কাটিয়ে যাচ্ছেন গ্রামবাসীরা।
গ্রামটি ইয়েমেনের রাজধানী সানায় অবস্থিত। গ্রামটির নাম আল-হুতেইব।
ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩২০০ মিটার উচ্চতায় লাল বালিপাথরের পাহাড়ের মাথায় গ্রামটি। জনসংখ্যা খুব একটা বেশি নয়।
গ্রামটি একটি আকর্ষণীয় পর্যটনস্থল হিসেবে খ্যাত।
দিনের বেলায় প্রচণ্ড গরম। রাতের দিকে হিমশীতল ঠান্ডা নেমে আসে গ্রামে। কিন্তু সূর্য উঠতেই আবহাওয়া উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
পাহাড়ের কোলে পাথর কেটে কেটে বাড়িগুলি যে ভাবে তৈরি করা হয়েছে, তা নৈসর্গিক।
প্রাচীনের সঙ্গে আধুনিকতার মিশেল গ্রামটির সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এখানে আল-বোহরা জনজাতির লোক বাস করেন।
এই গ্রামের সঙ্গে মুম্বইয়ের একটা নিবিড় যোগ রয়েছে। মহম্মদ বুরহানউদ্দিন এই গ্রামে ধর্মপ্রচারক হিসেবে কাজ করেছেন। ব্রিটিশ আমলে বম্বে প্রেসিডেন্সির সুরাতে জন্ম বুরহানউদ্দিনের। ২০১৪ সালে মুম্বইয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। কিন্তু তাঁর আগে প্রতি তিন বছর অন্তর এই গ্রামে গিয়ে দেখভাল করে আসতেন তিনি।
ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩২০০ মিটার উচুঁতে হওয়ায় এখানকার আবহাওয়া রুক্ষ প্রকৃতির।
গ্রামটি যে উচ্চতায় অবস্থিত, এখানে সেই উচ্চতায় মেঘ জমে না। মেঘ তার নীচের স্তরে জমে। ফলে মেঘ সৃষ্টি হলেও এই গ্রামে বৃষ্টি হয় না। এটাই আল-হুতেইব এর বিশেষ বৈশিষ্ট।
ভারতের মৌসিনরামে এর ঠিক উল্টো ছবিটাই ধরা পড়ে। এখানে বছরভর বৃষ্টি লেগেই থাকে। ১৯৮৫ সালে ২৬ হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। যা এখনও অবধি রেকর্ড পরিমাণ।
ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৪৯৯ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত হওয়ার জন্য মৌসিমরামে বছরভর আর্দ্র আবহাওয়া থাকে। বছরে এখানে প্রায় ১১,৮৭১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। সেখানে আল-হুতেইব এ বৃষ্টির লেশমাত্র নেই! অবাক হওয়ার মতোই এই গ্রাম।