চার হাত এক হওয়ার পর দুই জীবনের তাল মিলে গিয়েছিল। প্রায় তিন দশক পর সেই তাল কাটল। বিয়ের ২৯ বছর পর বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অস্কারজয়ী সুরকার এআর রহমান এবং তাঁর স্ত্রী সায়রা বানু।
বুধবার রাতে এই খবর প্রকাশ্যে আসার পর অনেকেই অবাক। তবে, রহমান দম্পতি বিচ্ছেদের কথা ঘোষণা করতে না করতেই আরও এক বিচ্ছেদের খবর প্রকাশ্যে আসে। তিনি রহমানের সহযোগী মোহিনী দে। রহমানের দলের বেসিস্ট বঙ্গতনয়া মোহিনী।
রহমানের বিচ্ছেদের ঘণ্টাখানেকের ব্যবধানে মোহিনীও তাঁর সুরকার স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের কথা ঘোষণা করেন। আর তার পরেই জল্পনা দানা বাঁধতে শুরু করে অনেকের মনে। দুইয়ে দুইয়ে চার করে সমাজের নীতিপুলিশেরা আঙুল তুলতে শুরু করেন মোহিনীর দিকে। কানাঘুষো শুরু হয়েছে, এই বঙ্গতনয়ার কারণেই নাকি ঘর ভেঙেছে সুরকারের।
মোহিনী-রহমান সম্পর্ক নিয়ে জল্পনা তৈরি হতেই কৌতূহল তৈরি হয়েছে বঙ্গললনাকে নিয়ে। কে তিনি? তাঁর পরিচয় জানতে ইন্টারনেটে ঢুঁ মারছেন অনেকেই।
২৮ বছর বয়সি মোহিনী বাঙালি হলেও তাঁর জন্ম এবং বেড়ে ওঠা মুম্বইয়ে। নিজগুণে অল্প বয়সেই নামডাক করেছেন তিনি।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোহিনীর প্রতিভা প্রথম বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর বাবা। তিন বছর বয়স থেকেই মোহিনীর তালিম শুরু হয়।
মাত্র ন’বছর বয়সে প্রথম বেস গিটার হাতে তুলেছিলেন মোহিনী। ১১ বছর বয়সে পারফর্ম করাও শুরু করেন।
জ্যাজ় সঙ্গীতের অন্যতম নক্ষত্র লুই ব্যাঙ্কস এক সময় মোহিনীর পরামর্শদাতা ছিলেন। শিল্প নিয়ে অনেক পরামর্শ মোহিনী পেয়েছেন ব্যাঙ্কসের কাছ থেকে।
খুব তাড়াতাড়িই সাফল্য আসে মোহিনীর জীবনে। বেসিস্ট হিসাবে রহমানের দলে কাজের সুযোগ পান। রহমানের সঙ্গে বহু শোয়ে পারফর্ম করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
শুধু রহমানের সহযোগী হিসাবেই নয়, বাংলাদেশের ‘উইন্ড অফ চেঞ্জ’ এবং ‘কোক স্টুডিয়ো ইন্ডিয়া’র অংশ হিসাবেও গিটার বাজাতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। ২০২৩ সালের অগস্টে মুক্তি পেয়েছিল মোহিনীর নিজস্ব অ্যালবাম।
রহমান ছাড়াও স্টিভ ভাই, মার্কো মিনেম্যান, জর্ডান রুডেস, জেসন রিচার্ডসন, দেওয়া বুদজানা, জাকির হুসেন, শিবমণি এবং উইলো স্মিথের মতো আন্তর্জাতিক তারকার সঙ্গে একই মঞ্চে গিটার বাজাতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
২০২৪ সালে মোহিনীকে তাঁর তৈরি ব্যান্ডে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন স্মিথ, যা অনেক শিল্পীর কাছেই স্বপ্ন।
সমাজমাধ্যমেও মোহিনীর অনুরাগীদের সংখ্যা আকাশছোঁয়া। শুধু ইনস্টাগ্রামেই তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যা পাঁচ লক্ষের বেশি। ভক্তদের জন্য মাঝেমধ্যেই ইনস্টাগ্রামে বিভিন্ন পোস্ট করেন তিনি।
মোহিনীর স্বামী পেশায় স্যাক্সোফোনিস্ট। নাম মার্ক হার্টসুচ। রহমান এবং তাঁর স্ত্রীর বিচ্ছেদের খবর ঘোষণার পরেই বিচ্ছেদের কথা জানিয়েছেন মোহিনী-মার্কও।
ইনস্টাগ্রামে মোহিনী এবং মার্ক বিচ্ছেদের কথা জানান। সেই পোস্টে লেখা ছিল, ‘‘মনে অনেক দুঃখ নিয়ে আমি এবং মার্ক ঘোষণা করছি যে আমরা আলাদা হয়েছি। প্রথমত, আমরা আমাদের বন্ধু এবং পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধ। পারস্পরিক বোঝাপড়া থেকেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ আর তার পরেই জল্পনা তৈরি হয়েছে মোহিনী এবং রহমানকে নিয়ে। তবে এ প্রসঙ্গে দু’জনেই কোনও কথা বলেননি।
বিচ্ছেদ প্রসঙ্গে রহমানের স্ত্রীর আইনজীবী বন্দনা শাহ জানিয়েছেন, দীর্ঘ তিক্ততা এই বিচ্ছেদের নেপথ্যকারণ। উভয় পক্ষই আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন মিটিয়ে নিতে। কিন্তু তা আর সম্ভব নয়। ফলে দীর্ঘ দাম্পত্যের পর এই সিদ্ধান্ত নিতে যথেষ্ট কষ্ট হয়েছে তাঁর।
বিচ্ছেদের পর বড় অঙ্কের খোরপোশ পাবেন সায়রা, এই নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা কথা শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন মহলে। তবে সেই সব কথা উড়িয়ে দিয়েছেন সায়রার আইনজীবী। তিনি পাশাপাশি এ বিষয়টাও স্পষ্ট করেছেন যে, রহমান-সায়রার বিয়ে ভাঙলেও বন্ধুত্ব অটুট। এর পর স্পষ্ট ভাষায় তিনি জানান, তাঁদের এই বিচ্ছেদের সঙ্গে মোহিনীর কোনও সংযোগ নেই।
আইনজীবীর কথায়, ‘‘সায়রা এবং মিস্টার রহমান নিজেরাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দীর্ঘ সময় ধরে চলা প্রতিটা বিয়ে ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে যায়। তাঁরা মর্যাদাপূর্ণ ভাবে এই বিয়ে শেষ করছেন। রহমান আর সায়রা সব সময় একে অপরকে সম্মান করবেন এবং একে অপরের মঙ্গল কামনা করবেন।’’