১৯০৩ সালে জার্মানির লিপজিকে জন্ম ওট্টো বেটম্যানের। পরে তিনিই ‘দ্য পিকচার ম্যান’ হিসাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। পেশায় ওট্টো ছিলেন এক জন লাইব্রেরিয়ান। কিন্তু ছবির প্রতি ভালবাসা এবং তাঁর ছবির বিশাল সংগ্রহের জন্যই এই নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন তিনি।
ওট্টোর যাবতীয় ছবির সংগ্রহ দেখতে গেলে শুধুমাত্র অনুমতিপত্র হাতে থাকলেই কিন্তু চলবে না। সেখানে যেতে গেলে মোটা গরম পোশাকে নিজেকে ঢেকে ফেলতে হবে। শ্বাসকষ্টের সমস্যা যাঁদের রয়েছে বিশেষ করে তাঁদের হাতে চিকিৎসকের অনুমতি অবশ্যই থাকতে হবে।
এই শর্তগুলি যদি মেনে চলেন তবেই একমাত্র ওট্টোর সেই ঐতিহাসিক সংগ্রহের কাছে যাওয়ার অনুমতি মিলবে। এত বিধিনিষেধের কারণ হল, এই ছবি সংগ্রহশালা মাটির দু’শো ফুট নীচে রয়েছে।
মাটির গভীরে ওট্টো বেটম্যানের সেই সংগ্রহশালা তৈরির করার পিছনে বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে। কেন এমন একটি অদ্ভুত জায়গায় এই সংগ্রহশালা তৈরি করা হয়েছিল তা জানতে গেলে কয়েক বছর পিছনে যেতে হবে।
৮৬ বছর আগে ৩২ বছরের ওট্টো বেটম্যান দু’টি বড় ট্রাঙ্ক নিয়ে নিউ ইয়র্কে এসেছিলেন। নাৎসি অত্যাচার থেকে বাঁচতে জন্মস্থান জার্মানি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। জার্মানিতে একটি লাইব্রেরিতে কিউরেটরের কাজ করতেন ওট্টো।
যে দু’টি ট্রাঙ্ক নিয়ে দেশ ছেড়েছিলেন ওট্টো তাতে টাকা বা জামাকাপড় ছিল না। সে সবই দেশে ফেলে আসতে হয়েছিল তাঁকে। সেই দু’টি ট্রাঙ্ক ভর্তি ছিল দুর্মূল্য সব ছবিতে।
নিউ ইয়র্ক পৌঁছনোর পর ছবির সংগ্রহ আরও বাড়াতে শুরু করেছিলেন তিনি। সে সময় আমেরিকায় ফটোগ্রাফির চাহিদাও ব্যাপক ভাবে বাড়তে শুরু করেছিল। ওট্টোর চোখে সেই সম্ভাবনা অনেক আগেই ধরা পড়েছিল। তাই আগে থেকেই নিজের সংগ্রহের আয়তন বাড়াতে শুরু করেছিলেন।
প্রতিনিয়ত ঘটে চলা বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ঘটনার ছবি ঠাঁই পেতে শুরু করেছিল তাঁর সংগ্রহশালায়। ১৯৯৫ সালে বিল গেটস তাঁর সমস্ত সংগৃহীত ছবির স্বত্ব কিনে নেন। এর তিন বছর পর ওট্টোর মৃত্যু হয়। তত দিনে তাঁর সংগ্রহে ছবির সংখ্যা দাঁড়ায় ১ কোটি ১০ লাখে।
কিন্তু এই সমস্ত বহু পুরনো দুর্মূল্য ছবি নিউ ইয়র্কে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না আর। বহু যত্নে রাখা সত্ত্বেও নিউ ইয়র্কের বদলে যাওয়া আবহাওয়া ছবিগুলিকে খারাপ করে দিচ্ছিল। ২০০১ সাল নাগাদ তাই সমস্ত ছবি নিয়ে চলে যাওয়া হয় দূরের একটি চুনাপাথরের খনিতে। ওই খনির ২২০ ফুট নীচে ছবির সংগ্রহশালা তৈরি করেন গেটস।
খনির ভিতরে সাধারণত তাপমাত্রার হেরফের হয় না। তার উপর চুনাপাথর থাকায় জলবায়ু সব সময়ই শুষ্ক থাকে। এই আবহাওয়ায় সহজেই ছবিগুলিকে ভাল রাখা সম্ভব।
২০১৬ সালে চিনের সংস্থা ভিসুয়াল চায়নার কাছে এই ছবি সংগ্রহশালা বিক্রি করে দেন বিল। পরে ভিসুয়াল চায়নার কাছ থেকে এই ছবি বিক্রির লাইসেন্স পায় গেটি। এই সংগ্রহশালা এখন গেটির অধীন।
১০ কোটিরও বেশি ছবি রয়েছে গেটির সংগ্রহে। এই বিশাল সংখ্যার সামনে ওট্টোর এক কোটি ছবি তুলনায় অনেকটাই কম। কিন্তু এই ছবিগুলিই মাটির গভীরে কড়া পাহারায় রয়েছে।
১০ হাজার বর্গ ফুট এলাকা জুড়ে থাকা এই সংগ্রহশালা দেখভাল করেন লেসলি স্টাউফার এবং সারাহ কুবিয়াক নামে দুই মহিলা। নিজেদের ‘বেটম্যানের রানি’ বলতে পছন্দ করেন তাঁরা।
ওট্টোর সংগ্রহে এমন অনেক ছবি রয়েছে যেগুলি এখনও কোথাও প্রকাশিত হয়নি। ওট্টোর সংগ্রহশালা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের জায়গা। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ছবিপ্রেমীরা ছুটে আসেন এই সংগ্রহশালায়।
এর দেখভালের দায়িত্বে থাকা দুই মহিলাকে সারা বছরই প্রবল ঠান্ডার মধ্যে কাটাতে হয়। তাই সব সময়ই তাঁদের শীতের পোশাক পরে থাকতে হয়।