লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিনের সঙ্গে রোহীত দাশগুপ্ত। ফাইল চিত্র
নাইজেল ফারাজের বিরুদ্ধে লেবার পার্টির প্রার্থী, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী, রোহীত দাশগুপ্ত বুধবার কথা বললেন আনন্দবাজারের সঙ্গে।
আনন্দবাজার: কালকেই তো ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচন। সাউথ ইস্ট কেন্দ্র থেকে লেবার পার্টির অন্যতম প্রার্থী আপনি। অনেকেই বলছেন এটি ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নয়, আসলে ব্রেক্সিট নিয়ে দ্বিতীয় গণভোট। লেবার পার্টিও কি সে ভাবেই এই নির্বাচনকে দেখছে?
রোহীত: একদমই নয়। এই নির্বাচনের মূল উদ্দেশ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতি নির্ধারণ। আমাদের নির্বাচনী ইস্তাহারে স্পষ্ট ভাবে শ্রমিকের অধিকার, পরিবেশ রক্ষা, অসাম্যের বিরুদ্ধে লড়াই, এই সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আমরা চাই, এই সব প্রসঙ্গ মাথায় রেখেই মানুষ ভোট দেবেন।
আনন্দবাজার: স্নাতকোত্তর ছাত্র হিসেবে ব্রিটেনে পাড়ি দিয়েছিলেন। গত কয়েক বছরে আপনি লেবার পার্টির নবীন প্রজন্মের অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছেন। এই রাজনৈতিক উত্থানের গল্পটা যদি বলেন।
রোহীত: হ্যাঁ, এসেছিলাম ছাত্র হয়ে। এখন শিক্ষকতা করি। তার সঙ্গে রাজনীতিতেও জড়িয়ে পড়েছি। ২০১৭ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নির্বাচনে লেবার পার্টির হয়ে লড়েছিলাম। ভোটে হেরে গেলেও সে বার দলের ভোট প্রাপ্তির হার আট শতাংশ বেড়েছিল। তার পরে লেবার পার্টির ক্যানিং টাউন সাউথ শাখার চেয়ারপার্সন নিযুক্ত হই। ২০১৮-তে ক্যানিং টাউন সাউথের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলাম। এখন আমি ওয়েস্টঅ্যাম লেবার পার্টির এগজিকিউটিভ কমিটির সদস্য। তা ছাড়া, শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গেও সক্রিয় ভাবে যুক্ত রয়েছি ।
আনন্দবাজার: আপনার শিকড় তো কলকাতায়।
রোহীত: হ্যাঁ। জন্ম ভবানীপুরে। সেন্ট জেমস স্কুলে পড়াশোনা করেছি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগ থেকে স্নাতক হওয়ার পরে ব্রিটেনে চলে আসি। সে এক দশক আগের কথা।
আনন্দবাজার: ইউরোপীয় ইউনিয়ন নির্বাচনে লেবার পার্টির প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে কেমন লাগছে?
রোহীত: অসাধারণ। তার একটা কারণ অবশ্যই যে, এই নির্বাচনটি যথেষ্ট কঠিন। এক দিকে, নানা দেশে দক্ষিণপন্থী জনমোহিনী রাজনীতির উত্থান। অন্য দিকে, ব্রেক্সিট নিয়ে আমাদের দ্বিধাবিভক্ত দেশ। এই ডামাডোলের মধ্যে লেবার পার্টিই একমাত্র দল যারা গোটা দেশকে একত্র করতে চাইছে। দেখুন, আমি তো এক জন শিক্ষক। বিশ্বায়ন নিয়ে ক্লাস নিই। আমি জানি, বিশ্বায়নের প্রভাব সকলের ক্ষেত্রে সমান হয়নি। ব্রিটেনের মানুষ ইইউ ছাড়তে চেয়েছিলেন কারণ তাঁরা ভেবেছিলেন, ইইউ-তে থেকে তাঁদের কোনও লাভ হচ্ছে না। যারা ব্রেক্সিট চান, এবং যাঁরা চান না, তাঁদের সকলের সঙ্গেই আমাদের কথা বলতে হবে। পরিস্থিতিটা বোঝাতে হবে।
আনন্দবাজার: আপনার বিরুদ্ধে, আপনার আসন থেকেই তো লড়ছেন ব্রেক্সিট পার্টির নাইজেল ফারাজ। এই ধরনের হেভিওয়েট প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে লড়ার অভিজ্ঞতা অবশ্য আপনার আগেও হয়েছে।
রোহীত: হ্যাঁ। ২০১৭ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ডামিয়ান হাইন্ডস। এখন যিনি দেশের শিক্ষামন্ত্রী। নাইজেল ফারাজের বিরুদ্ধে লড়তে নেমে আমি একদমই ভয় পাচ্ছি না। ওঁর বিভাজনের রাজনীতি অত্যন্ত বিরক্তিকর।
আনন্দবাজার: মেম্বার অব পার্লামেন্ট নির্বাচিত হলে কী কী বিষয়কে গুরুত্ব দেবেন?
রোহীত: এমইপি নির্বাচিত হলে আমার প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য হবে সমতার প্রসঙ্গটি তুলে ধরা। সব মানুষের মধ্যে সাম্যের প্রয়োজন। বয়স, প্রতিবন্ধকতা, লিঙ্গ পরিচয়, ধর্ম বা জাতির ভিত্তিতে যে কোনও বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমরা। আশার কথা, এ বার পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট পদে সোশ্যালিস্ট প্রার্থী ফ্রান্স টিমারমান্সের জেতার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। যত বেশি সংখ্যক লেবার এমইপি নির্বাচিত হবেন, ততই টিমারমান্সের জেতার সম্ভাবনা বাড়বে। এমইপি নির্বাচিত হলে সংবেদনশীল প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করাও আমাদের অন্যতম লক্ষ্য।
আনন্দবাজার: এই মুহূর্তে ব্রিটেনে রাজনীতির প্রতিটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতেই তো ব্রেক্সিট।
রোহীত: চুক্তিহীন ব্রেক্সিট হলে খুবই বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হবে। পার্লামেন্টে বারবার ভোট নিয়ে দেখা যাচ্ছে যে, অধিকাংশব্রিটিশ এমপি-ই চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের বিপক্ষে। তাই এখনই আমাদের সাধারণ নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে, অন্তত দেশের মানুষদের জিজ্ঞাসা করা হোক, আপনারা কী চাইছেন, চুক্তিহীন ব্রেক্সিট হোক, নাকি ব্রেক্সিট বাতিল হয়ে যাক!
সাক্ষাৎকার: সীমন্তিনী গুপ্ত