৯২ বছরের মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিতে চেয়েছিল ছেলে। সেটা জানার পর থেকেই আরও একাকিত্বে ভুগছিলেন ওই বৃদ্ধা।
সংসার-পরিবার-আপনজনদের ছেড়ে কেই বা বৃদ্ধাশ্রমে যেতে চান! ৯২ বছরের ওই বৃদ্ধাও মনে মনে ভীষণ ভেঙে পড়েছিলেন।
তিনি এতটাই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন যে, বৃদ্ধাশ্রমে যাবেন না বলে শেষে একমাত্র ছেলেকে নিজের হাতে গুলি করে খুন করে দিলেন!
আজ থেকে বছর দুই আগে ঠিক এ রকমই ভয়াবহ এবং মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী হয়েছিল আমেরিকার আরিজোনা।
৯২ বছরের ওই মহিলার নাম আনা মায় ব্লেসিং। পুলিশ যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছয়, শান্ত মনে নিজের হুইল চেয়ারে বসেছিলেন তিনি। আর তাঁর পাশেই পড়েছিল তাঁর ৭২ বছরের ছেলের রক্তাক্ত দেহ।
এই ঘটনার মাস ছয়েক আগেই ছেলে এবং ছেলের প্রেমিকার সঙ্গে আরিজোনার ফাউন্টেন হিলস-এ থাকতে আসেন আনা। স্বামী মারা গিয়েছিলেন অনেক আগেই। বয়সের কারণে নানা রোগে জর্জরিতও ছিলেন। ঠিকমতো হাঁটতেও পারতেন না।
কিন্তু তার পর থেকেই ছেলে এবং ছেলের প্রেমিকা তাঁকে কোনও এক বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসার পরিকল্পনা করছিলেন। এটা জানার পরই বেঁকে বসেন তিনি।
বৃদ্ধাশ্রমে যে একেবারেই যেতে চান না, তা বার বার ছেলেকে জানিয়েছিলেন। এই নিয়ে ছেলের সঙ্গে কথা কাটাকাটিও হয়েছিল।
আরিজোনা পুলিশের ডায়েরি অনুযায়ী, ঘটনার দিন বৃদ্ধা নিজের ঘরেই ছিলেই। ৭২ বছরের ছেলে তাঁর প্রেমিকার সঙ্গে ঘরে ঢোকেন।
তার পর মাকে বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোরাজুরি করতে থাকেন দু’জনে। বৃদ্ধা কিছুতেই রাজি ছিলেন না। অনেক ক্ষণ ধরেই তাঁদের মধ্যে কথা কাটাকাটি চলে।
তার পর আচমকাই পকেট থেকেই পিস্তল বার করে ছেলের মুখে গুলি চালিয়ে দেন। ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন ছেলে। ছেলের প্রেমিকার দিকেও নাকি তিনি পিস্তল তাক করেছিলেন তিনি। কিন্তু তিনি আনার হাত থেকে তা কেড়ে নেন।
বৃদ্ধার পকেটে আরও একটা পিস্তল ছিল, সেটা বার করে চালাতে গেলে, সেটাও তাঁর থেকে ছিনিয়ে নেন ওই মহিলা। তার পর ঘর থেকে বার হয়ে পুলিশকে ফোনে ঘটনাটি জানান।
পুলিশ যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছয়, বৃদ্ধা একই ভাবে নিজের হুইলচেয়ারে বসেছিলেন। আর শুধু আওড়ে যাচ্ছিলেন, “আমার জীবন শেষ করে দিয়েছে, আমি ওর জীবন শেষ করেছি।”
কী ভাবে ওই পিস্তলগুলো তাঁর কাছে এল? জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জেনেছিল, ১৯৭০ সালে পিস্তলগুলো কিনেছিলেন আনা এবং তাঁর স্বামী। কেনার পর থেকে ব্যবহার হয়নি। আর স্বামী মারা যাওয়ার আগে নিজের পিস্তলটাও তাঁকে দিয়ে গিয়েছিলেন।
এই ঘটনায় আনার বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করে পুলিশ। তবে শাস্তি ভোগ করতে হয়নি তাঁকে। ঘটনার মাস চারেকের মধ্যে মৃত্যু হয় তাঁর। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, ছেলেকে খুনের পর মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন আনা। সেই অবস্থা থেকে আর সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি। ৯২ বছরের মায়ের হাতে ৭২ বছরের ছেলের খুনের এই মর্মান্তিক ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা দেশকে।