কন্ডোম কেনার জন্য গাজ়ায় পাঁচ কোটি ডলার বরাদ্দ করেছিল আমেরিকা! সেই বরাদ্দ অর্থ আটকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার এমন মন্তব্য করেছেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট। তাঁর এই মন্তব্যের পরেই ঝড় উঠেছে আন্তর্জাতিক মহলে।
প্রথম সরকারি বিবৃতি দেওয়ার সময় লেভিট ওই মন্তব্য করেন। তাঁর যুক্তি, বিদেশি সহায়তা বন্ধ করার ট্রাম্পের সেই সিদ্ধান্ত ‘করদাতাদের অর্থের অযৌক্তিক অপচয়’ রোধ করার জন্য নেওয়া হয়েছে।
লেভিটের ওই মন্তব্যের পর একই দাবি করেছেন খোদ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। পাশাপাশি, আমেরিকার ধনকুবের ইলন মাস্কও লেভিটের মন্তব্য এক্স হ্যান্ডলে শেয়ার করেছেন।
মোটামুটি হিসাব বলছে, পাঁচ কোটি ডলারে ১০০ কোটি কন্ডোম কেনা যায়। কিন্তু বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে আমেরিকার প্রাক্তন আধিকারিক এবং বিভিন্ন সংস্থা লেভিটের কন্ডোম-মন্তব্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। গাজ়ার যে সংস্থার ওই টাকা পাওয়ার কথা ছিল বলে দাবি করা হয়েছে, তারাও বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্ষেত্র ছাড়া ৯০ দিনের জন্য আমেরিকার তরফে বিদেশি অনুদান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প সরকার। বিষয়টি নিয়ে চিন্তায় পড়েছে বিভিন্ন দেশের একাধিক অসরকারি সংস্থা। ওই সংস্থাগুলি নিয়ম করে আমেরিকার অনুদান পেত।
তবে ট্রাম্প প্রশাসন স্পষ্ট জানিয়েছে, অনুদানের অর্থ আমেরিকার করদাতাদের টাকা। তাই সেগুলি কোথায় খরচ করা হচ্ছে, তা যথাযথ মূল্যায়ন এবং পর্যালোচনার পরেই আবার অনুদান শুরু করা হবে।
আমেরিকার ভোল বদলে দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়েছেন সে দেশের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জানিয়েছেন, আমেরিকাকে আবার ‘গ্রেট’ করবেন তিনি।
প্রেসিডেন্টের আসনে বসার আগেই আমেরিকাকে নতুন রূপ দিতে ইলন মাস্কের নেতৃত্বে নতুন একটি উপদেষ্টা দফতর খুলে ফেলেছিলেন ট্রাম্প। নাম, ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’। সংক্ষেপে ‘ডজ’।
সরকারের খরচ কমিয়ে ওয়াশিংটনের কাজকর্মে গতি আনাই নাকি এই উপদেষ্টা দফতরের কাজ। সরকারের বাইরে থেকে একটি উপদেষ্টা কমিশন হিসাবে কাজ করবে ডজ।
ডজকে নতুন যুগের ‘ম্যানহাটন প্রজেক্ট’ বলেও অভিহিত করেছিলেন ট্রাম্প। উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পরমাণু বোমা তৈরির জন্য আমেরিকার গোপন প্রকল্পের নাম ছিল ‘ম্যানহাটন প্রজেক্ট’।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতার পর পরই ট্রাম্প এক বিবৃতিতে জানিয়েছিলেন, সরকারের বাড়তি খরচ কমাতে, সরকারি আমলাতন্ত্রকে ভাঙতে, অতিরিক্ত নিয়ম কমাতে এবং ফেডারেল সংস্থাগুলি পুনর্গঠন করতেই ডজ তৈরি করা হচ্ছে।
মাস্ক অতীতে বাইডেন সরকারের অতিরিক্ত খরচের বহর নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। দাবি করেছিলেন, আমেরিকার ফেডেরাল বাজেটে এমন বিভিন্ন বিষয়ে অর্থ বরাদ্দ করা হয়, যাতে আমেরিকার কোনও লাভ হয় না। আর তাই ডজ তৈরি করা হয়েছে ওয়াশিংটনের খরচ কমানোর জন্য।
মনে করা হচ্ছে, ২০২৬ সালের ৪ জুলাই, অর্থাৎ আমেরিকার স্বাধীনতার ২৫০ বছর পূর্তির আগেই সরকারের বাড়তি খরচ কমানো এবং সরকারি আমলাতন্ত্রকে ভেঙে দেওয়ার কাজ শেষ করে দিতে পারে ডজ। কিছু ক্ষেত্রে ৭৫ শতাংশ সরকারি কর্মীকেও সরিয়ে দেওয়া হতে পারে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব লেভিট সাংবাদিকদের বলেছেন, মাস্কের নেতৃত্বাধীন সেই ডজ এবং ‘ইউএস অফিস অফ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বাজেট’ (ওএমবি)-ই নাকি খুঁজে বার করেছিল যে, কন্ডোমের জন্য পাঁচ কোটি ডলার বরাদ্দ করেছিল আমেরিকা।
সেই তহবিল নাকি আর একটু হলে পাঠিয়েও দেওয়া হত। কিন্তু তার আগেই সেই বরাদ্দ আটকে দিয়েছে ডজ এবং ওএমবি। তার পরে লেভিটের সেই মন্তব্য সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন ইলনও।
আমেরিকার ‘ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি)’-এর এক কর্তাও দাবি করেছেন যে, গাজ়ায় মানবিক সহয়তার জন্য বরাদ্দ মোট ১০ কোটি ডলারের সহায়তা বন্ধ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
যদিও সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই কর্তাকে কন্ডোমের জন্য পাঁচ কোটি ডলার বরাদ্দ হওয়ার প্রমাণ চাইলে তিনি তার জবাব দেননি।
অন্য দিকে, গত ২৯ জানুয়ারি একটি বিবৃতিতে ‘ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কোর’ (আইএমসি) গাজ়ায় নিজেদের কাজের বিশদ বিবরণ দিয়ে জানিয়েছে, কন্ডোম সংগ্রহ বা বিতরণ বা পরিবার-পরিকল্পনা পরিষেবা প্রদানের জন্য আমেরিকার কোনও সরকারি তহবিল ব্যবহার করা হয়নি।
বিবৃতিতে যোগ করা হয়েছে যে, আইএমসি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইউএসএআইডি-র তরফে ৬ কোটি ৮০ লক্ষ ডলারের বেশি অনুদান পেয়েছে, যা গাজ়ায় দু’টি বড় হাসপাতাল পরিচালনা করতে ব্যবহৃত হয়েছে।
উল্লেখ্য, হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিবের কন্ডোম-মন্তব্যের পর তা নিয়ে ‘ফ্যাক্ট-চেক’ করেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এবং সংস্থা। তাতে ডজ বা ওএমবির দাবি অনুযায়ী এমন কোনও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি, যা প্রমাণ করে গাজ়ায় বিভিন্ন খাতে ১০ কোটি ডলার খরচ করার পরিকল্পনা করেছে আমেরিকা। ২০০৭ থেকে ২০২৩ অর্থবর্ষ পর্যন্ত গাজ়ায় কন্ডোম পাঠানোর কোনও নথিও মেলেনি।
আমেরিকার হয়ে পশ্চিম এশিয়ার জন্য কাজ করা এক জন প্রাক্তন উপ-সহকারী প্রতিরক্ষা সচিব ডানা স্ট্রউল ২৯ জানুয়ারি এক্স পোস্টে জানিয়েছেন, ২০২৩ অর্থবর্ষে গাজ়ার জন্য অর্থ ব্যয় করেনি ইউএসএআইডি। অর্থাৎ, কন্ডোম কেনার জন্য আমেরিকার তরফে গাজ়ায় কোটি কোটি টাকার তহবিল পাঠানোর উপলব্ধ প্রমাণ নেই।