দেশ ছাড়ার জন্য মরীয়া আফগানরা। কাবুল বিমানবন্দরের সামনে। ছবি- টুইটারের সৌজন্যে।
কাবুল বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদছেন এক মহিলা সাংবাদিক। কাঁদছেন বরাবরের জন্য দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার দুঃখে।
“দেশটাকে বড়ই ভালবাসি। কিন্তু বরাবরের জন্যই বোধহয় আমাকে এ বার আফগানিস্তান ছাড়তে হচ্ছে”, কাঁদতে কাঁদতেই বললেন মহিলা সাংবাদিক ওয়াহিদা ফইজি। বিবিসি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে।
কথা বলবেন কী, তালিবদের ভয়ে দেশ ছাড়তে মরিয়া হাজার হাজার মানুষের চাপে কাবুল বিমানবন্দরের গেটের কাছাকাছি ঠিক ভাবে দাঁড়িয়েই থাকতে পারছিলেন না ওয়াহিদা। ভিড় তাঁকে বার বার ঠেলে সরিয়ে দিচ্ছিল।
সেই সময়েই এক বার ওয়াহিদা দেখে নিলেন বিমানবন্দরের গেট আর কতটা দূরে। ঢুকে পড়লেই যে মিলবে মুক্তি। কিন্তু তার পরেও পিছুটান যে তাঁকে ছাড়তে চায় না কিছুতেই। তাই পিছনে ফিরে বার বার তাকাচ্ছেন কাবুল শহরটার দিকে। তার আকাশের দিকে। কাবুলের ত্রস্ত মানুষজনের দিকে।
এ সবের মধ্যেই বিবিসি-র সাংবাদিককে ওয়াহিদা বলেছেন, “আমার দেশটাকে খুবই ভালবাসি। কিন্তু এখানে যে আর থাকা যাবে না। দেশ ছাড়তেই হবে। ওরা (তালিবান) জানে আমি সাংবাদিক। আমি এত দিন কী কী কাজ করেছি, খবর করেছি, সব কিছুই ওরা জানে। তাই এখানে থাকলে ওরা আমাকে খুন করবেই।’’
ওয়াহিদা বুঝে ফেলেছেন, আফগানিস্তানে তাঁর পক্ষে আর কোনও দিন ফিরে আসা সম্ভব হবে না। শেষ বারের মতোই দেশ ছাড়ছেন তিনি। ফেলে যাচ্ছেন আফগানিস্তানে তাঁর শৈশব, কৈশোর, যৌবনের দিনগুলিকে। মা, বাবা, আত্মীয়-পরিজন, বন্ধুবান্ধবদের। বরাবরের মতো।
ওয়াহিদা বলেছেন, “এই দেশটা আর আমার নয়। কোনও দিন আর তা আমার হবেও না বোধহয়। এখানে আমার পক্ষে আর থাকা সম্ভব নয়। শ্বাস নেওয়া সম্ভব নয়।”
এর পরেই পিছনের ভিড়ের চাপ ঠেলে সামনে অনেকটা এগিয়ে দিল ওয়াহিদাকে। বিমানবন্দরের গেটের দিকে। মুক্তির পথের দিকে! তার পরেও এক বার পিছন ফিরে ওয়াহিদাকে বলতে শোনা যায়, “আর কোনও দিনই ফিরে আসা হবে না এখানে।” কান্নায় বুঁজে আসে ওয়াহিদার গলা।