প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেষ বার পার্লামেন্টে হাজির হয়ে বিদায়ী বক্তৃতা দিলেন টেরেসা মে। তার পরে বাকিংহাম প্রাসাদে গেলেন রানি দ্বিতীয় এলিজ়াবেথের কাছে ইস্তফাপত্র জমা দিতে। এ দিনই রানির সঙ্গে সাক্ষাতের পরে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিলেন বরিস জনসন। বাকিংহাম প্রাসাদে যাওয়ার আগে দ্য মল-এ জনসনের গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন জলবায়ু নিয়ে আন্দোলনকারীরা, মানববন্ধন তৈরি করে পথ আটকান তাঁরা।
বরিস দায়িত্ব নিয়ে আজ ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘আমি আপনাদের বলতে চাই, সেই সব সমালোচক ভুল। সন্দেহবাতিক, কু-গাওয়া লোকগুলো বুঝবে, তারা কতটা ভুল ছিল।’’ ব্রেক্সিট নিয়ে আর সময় নষ্ট নয়— আশ্বাস দিয়ে বরিস বলেন, ‘‘৯৯ দিনও অপেক্ষা করব না আমরা। অনেক হয়েছে। এ বার কঠিন হাতে নেতৃত্ব দেওয়া শুরু।’’ তার প্রমাণ মিলেছে বরিসের দায়িত্বে আসার পরপরই ১২ জন মন্ত্রী ইস্তফা দেওয়ায়। শাসক দল কনজ়ারভেটিভ পার্টির অন্দরে গুঞ্জন, বরিসই তাঁদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছেন। শীঘ্রই নয়া ক্যাবিনেট সাজাবেন তিনি। এর আগে বরিস প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন শুনেই ইস্তফা দিয়েছেন আরও ৪ মন্ত্রী।
দেশের নয়া প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে টেরেসা আজ পার্লামেন্টে বলেন, ‘‘ওঁদের সাফল্য হবে দেশের সাফল্য।’’ শেষ বেলায় এমপি-দের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে দৃশ্যতই আবেগপ্রবণ দেখাচ্ছিল টেরেসাকে। তার মধ্যে বিরোধী নেতা জেরেমি করবিনকে টেরেসা বুঝিয়েছেন, তাঁর সময়ও শেষ। বিদায়ী নেত্রীর ইঙ্গিত, লেবার পার্টির নেতৃত্বেও এ বার কোনও মহিলা মুখের প্রয়োজন।
হাউস অব কমন্সে আজ টেরেসাকে ছ’টি প্রশ্ন করেছিলেন করবিন। উত্তরও দেন নেত্রী। সেই সূত্রেই করবিনকে বার্তা দিয়েছেন, ‘‘প্রত্যেকেই বুঝতে পারে, কখন আসন ছেড়ে দেওয়ার সময় এসেছে। আমি ওঁকে বলছি, সম্ভবত এ বার সে কাজটা ওঁরও করা উচিত।’’ টেরেসার এই মন্তব্য শুনে উৎসাহী হয়ে ওঠেন লেবার বেঞ্চের সদস্যেরা। অনেকেই চিৎকার করে সমর্থন জানান। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, করবিন যে ক্রমশ দলের বোঝা হয়ে উঠেছেন, তা আর লেবার পার্টির অন্দরের খবর নয়। সব দলের এমপি-ই তা বুঝতে পারছেন। করবিন অবশ্য সব দেখেশুনে গোমড়া মুখে দাড়িতে হাত বুলিয়েছেন।
নব্য লিবারাল ডেমোক্র্যাট নেতা জো সুইনসন ঠাট্টার ছলে টেরেসাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘‘কিছু পুরুষ আছেন, যাঁরা মনে করেন, তাঁরা কাজটা ভালই পারেন। কিন্তু আদতে কিছুই করতে পারেন না— এঁদের কী ভাবে সামলাবেন মহিলারা?’’ উত্তর আসে, ‘‘নিজের প্রতি সৎ থাকুন। অধ্যবসায় এগিয়ে নিয়ে যাবে।’’ এর পরেই বিদায়ী নেত্রীর সংযোজন, ‘‘আমার পার্টিতে দু’জন নেত্রী আছেন, লিবারাল পার্টিতেও এক জন নেত্রী এখন আছেন, এসএনপি-রও (স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি) এক নেত্রী।’’ আরও বেশ কিছু পার্টির নাম উল্লেখ করেন, যাদের নেত্রী রয়েছে। শেষে টেরেসা বলেন, ‘‘হাউসে একমাত্র একটি দলই এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে— লেবার পার্টি।’’ ফের সমর্থনের চিৎকার হাউসে, মহিলারাই পুরোভাগে।
১৯৯৭ সালে নির্বাচিত হয়ে প্রথম বার পার্লামেন্টে আসা টেরেসার। ব্রিটেনের রাজনীতির এই পীঠস্থানে তাঁর মতো আরও মুখ দেখতে চান প্রবীণ নেত্রী। ১৪০ ঘণ্টার বেশি সময়ে উত্তর দিয়েছেন সাড়ে ৪ হাজারেরও বেশি প্রশ্নের। এ বার পিছনের সারিতে ফিরে গিয়ে তাঁর প্রশ্ন করার পালা। সে দায়িত্ব পালনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে হাততালির ঝড়ের মধ্যে পার্লামেন্ট থেকে বেরিয়ে যান টেরেসা মে।