দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি আর সাদা বালি। জনমানবহীন সমুদ্রসৈকত থেকে অনেকটা দূরে রয়েছে কিছু বসতিও। এই সমুদ্রসৈকতকে রহস্যময় করে তুলেছে একটি বিশাল কামান।
যার গায়ে নানা নকশা করা। লোহার ওই কামানে মরচে পড়ে ভঙ্গুর অবস্থা। যা দেখে বোঝা যায় কামানটি ‘বৃদ্ধ’।
সমুদ্রের নোনা জলবায়ুর জেরেই এমন দশা হয়ে গিয়েছে কামানটির। এমন নির্জন এলাকায় কী ভাবে কামানটি এল?
পুয়ের্তো রিকোর কুলেব্রা দ্বীপ। ক্যারিবিয়ান সাগরে রয়েছে দ্বীপটি। প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে নির্জন এই দ্বীপ এমনিতেই আকর্ষণীয়। তার উপর দ্বীপে রহস্যজনক এই কামানের উপস্থিতি একে আরও আকর্ষনীয় করে তুলেছে।
জানা যায়, কামানটি নাকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার। ১৯০১ সালে স্পেন এই দ্বীপ আমেরিকার হাতে তুলে দেয়।
তার পর আমেরিকার নৌসেনা পুরো দ্বীপের দখল নেয়। মূলত এই দ্বীপে নৌবিমানের পরীক্ষামূলক অবতরণ করানো হত।
১৯৩৬ সাল থেকে দ্বীপে বোমা নিক্ষেপের অনুশীলনও শুরু হয়। ইতিহাসবিদেরা জানিয়েছেন, ওই সময়ই কামানটি দ্বীপে আনা হয়।
সে সময় এ রকম প্রচুর যন্ত্রপাতি ওই দ্বীপে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কয়েক দশক ধরে বোমা নিক্ষেপণ অনুশীলনও হয়েছিল।
কিন্তু বিষয়টি একেবারেই পছন্দ হচ্ছিল না স্থানীয়দের। নৌসেনা তাঁদের অন্যত্র সরে যাওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। স্থানীয়রাও একত্রিত হয়ে নৌসেনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।
১৯৭০ সাল নাগাদ তাঁরা অহিংস আন্দোলন শুরু করেন। মূলত নৌসেনাকে দ্বীপ থেকে বিতারণ করাই ছিল তাঁদের লক্ষ্য।
৫ বছর ধরে টানা আন্দোলন চলার পর হার মানে নৌসেনা। ১৯৭৫ সাল নাগাদ দ্বীপ ছেড়ে চলে যায় সেনা।
কিন্তু বহু বছর ধরে একটু একটু করে যে সমস্ত কামান বা ভারী যন্ত্রপাতি তাঁরা দ্বীপে এনেছিলেন সব ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। পিছনে ফেলে যান বহু কামান এবং গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি।
সেগুলোর প্রায় সবই নষ্ট হয়ে গিয়েছে বা স্থানীয়রা নিয়ে গিয়েছে। শুধু এই কামানটিই পড়ে রয়েছে দ্বীপে। আর এর গায়ে নানা নকশা এঁকে দিয়েছেন স্থানীয়েরা।
এক সময়ে যা স্থানীয়দের আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছিল আজ সেটিই তাঁদের পর্যটন ব্যবসার অন্যতম হাতিয়ার।