লুইজ়িয়ানার হারিকেন বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনের পথে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। শুক্রবার মেরিল্যান্ডের বিমানঘাঁটিতে। ছবি: রয়টার্স
হারিকেন ইদা-র জেরে গত কয়েক দিন ধরেই বিপর্যস্ত আমেরিকার পূর্বাংশের একটা বিস্তীর্ণ এলাকা। গত তিন দিনে মৃত্যু হয়েছে ৪৬ জনের। তার মধ্যে অতিরিক্ত বৃষ্টি ও বন্যা পরিস্থিতির জেরে নিউ জার্সি আর নিউ ইয়র্কেই মারা গিয়েছেন ৩৯ জন বাসিন্দা। একই সঙ্গে জনজীবন ব্যাহত পেনসিলভ্যানিয়া, কানেটিকাট, মেরিল্যাল্ড, ভার্জিনিয়ার মতো বেশ কয়েকটি প্রদেশেও।
ইদা প্রথম আছড়ে পড়েছিল লুইজ়িয়ানা প্রদেশে। সেখানেই ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। হোয়াইট হাউসের তরফে গত কাল জানানো হয়েছে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আজ ওই প্রদেশের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সফরে যাবেন। নিউ ইয়র্ক এবং নিউ জার্সির জন্যও প্রেসিডেন্ট ইতিমধ্যেই জরুরি অবস্থা জারি করেছেন।
নিউ ইয়র্কের মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়ো জানিয়েছেন, গত কয়েক দশকে এই প্রদেশে এ রকম ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি হয়নি। গোটা পরিস্থিতিকে তিনি ‘ঐতিহাসিক’ বলে বর্ণনা করেছেন। আগামী কয়েক দিন নিউ ইয়র্কে আরও বৃষ্টি হতে পারে বলে সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর।
দু’দিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল নিউ ইয়র্কের বন্যা পরিস্থিতির নানা ছবি। সেখানে দেখা গিয়েছে, জাতীয় সড়ক থেকে সাবওয়ে সবই প্রায় জলের তলায়। রাস্তার গাড়িগুলোর শুধু মাথা দেখা যাচ্ছে। নর্দমা দিয়ে উঠে এসেছে আবর্জনা। সাবওয়ে স্টেশন দিয়ে হুড়মুড়িয়ে জল ঢুকছে। উপচে পড়ছে রেললাইন। শহরের যাত্রিবাহী বড় বাসগুলির ভিতরেও জল। যাত্রীরা দাঁড়িয়ে সিটের উপরে। জলবায়ু পরবর্তন যে আরও ভয়াবহ আকার নিতে পারে, তা নিয়ে আজ শহরবাসীকে সতর্ক করেছেন নিউ ইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোকুল। ক্যাথির কথায়, ‘‘যে ভবিষ্যতের কথা আমরা এত দিন বলে আসছিলাম, তা কিন্তু আমাদের সামনে চলে এসেছে। আমরা মানুষকে হারাচ্ছি, হারাচ্ছি বিপুল সম্পত্তিও। আমাদের এই মুহূর্ত থেকে সতর্ক হতেই হবে। কারণ আমাদের সামনে আর কোনও রাস্তা খোলা নেই।’’
আমেরিকান সংবাদমাধ্যমগুলি জানিয়েছে, নিউ ইয়র্কে যে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁরা বেশির ভাগই বেসমেন্ট অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা। আচমকা তাঁদের ঘরে এমন ভাবে জল ঢুকে যায় যে বাড়ি থেকে বেরোনোর সুযোগটুকুও পাননি অনেকে। নিউ ইয়র্কের পুলিশ বিভাগ জানাচ্ছে, গত দু’দিনে জলমগ্ন রাস্তা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৫০০ জনকে। সাবওয়ে স্টেশনগুলি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে মোট ৮০০ জনকে। খুব প্রয়োজন ছাড়া প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যে মানুষকে রাস্তায় বেরোতে বারণ করেছে প্রশাসন।
নিউ ইয়র্কের মতোই ক্ষতিগ্রস্ত নিউ জার্সি প্রদেশ। সেখানকার মুলিকা হিলে ঘূর্ণিঝড়ের জেরে একসঙ্গে ভেঙে পড়েছে ২৫টি বাড়ি। শতাধিক গাছ উপড়ে পড়েছে রাস্তায়। বিদ্যুৎ নেই অনেক শহরে। শুধুমাত্র নিউ জার্সিতেই মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের। কানেটিকাটে বন্যায় আটক এক জনকে উদ্ধার করতে গিয়ে জলে ভেসে গিয়েছেন এক উদ্ধারকারী।