প্রতীকী ছবি।
করাচির ইউসুফ বিন নুরী মাদ্রাসায় পড়তে গিয়ে সে তালিবানে নাম লেখায়। সেটা ১৯৮৭ সাল। এর পরে অস্ত্র ও বিস্ফোরকের তালিম নিয়ে আফগানিস্তানে যায় লড়াই করতে। ১৯৮৯-এর শেষে নিজের দেশে ফিরে এসে আর এক আফগান-ফেরত জঙ্গি মুফতি হান্নানকে সঙ্গে নিয়ে পত্তন করে নতুন জঙ্গি সংগঠন— হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ। এই জঙ্গি সংগঠন ঢাকায় রমনার বটমূলের নববর্ষের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালিয়ে ১০ জনকে হত্যা করেছিল। ২০০১-এর এই হামলার প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে উঠে আসে তার নাম— শফিকুর রহমান। ২০১৪-য় এই মামলার রায়ে মুফতি হান্নান-সহ যে ৮ জনকে আদালত মৃত্যুদণ্ড দেয়, তার মধ্যে ছিল শফিকুরের নাম। ২১টা বছর আত্মগোপন করে থাকার পরে সেই জঙ্গি-শিরোমণি শফিকুর রহমানকে বৃহস্পতিবার রাতে কিশোরগঞ্জের একটি গ্রামে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ বাহিনী র্যাব।
পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তৈরি হুজি-বি জেএমবি বা আনসারুল্লা বাংলা টিমের চেয়ে অনেক পেশাদার এবং ভয়ঙ্কর ছিল। ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসার ছাত্র শফিকুরকে করাচিতে নিয়ে যাওয়া থেকে তালিবানে নাম লেখানো, আফগানিস্তানে লড়াইয়ে পাঠানো এবং বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে হুজি-বি তৈরি— সবেরই পিছনে ছিল পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। একটা সময়ে শফিকুর ছিল হুজি-র সর্বোচ্চ নেতা বা আমির। রমনার বটমূলের হামলার পরে ২০০৪-এর ২১ অগস্ট বিরোধী নেত্রী শেখ হাসিনার সভায় বোমা হামলা এবং ২০০৫-এ সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াকে গ্রেনেড হামলায় হত্যা করার ঘটনারও অন্যতম প্রধান আসামি ছিল শফিকুর। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামাতে ইসলামি জোট সরকারের সঙ্গে হুজি-বি-র ছিল ঘনিষ্ট যোগাযোগ। বাংলাদেশে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা পরিবর্তনের পরে মুফতি হান্নান-সহ হুজি-বি-র বহু নেতা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। তার পরে শেখ হাসিনা সরকার এসে হুজি-বি-কে বাংলাদেশ থেকে কার্যত উচ্ছেদ করে ছাড়ে। মুফতি হান্নানের ফাঁসি হয়ে গেলেও শফিকুর যেন হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। পুলিশের ধারণা হয়, সে কোনও ভাবে পাকিস্তানে পালিয়েছে। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে র্যাবের দল কিশোরগঞ্জের ভৈরবে শফিকুরের বাড়িতে হানা দিয়ে তাকে গ্রেফতারের পরে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে, এই ২১ বছর গা-ঢাকা দিয়ে দিব্যি বাংলাদেশেই বসেছিল আফগান-ফেরত এই শীর্ষ জঙ্গি। নাম বদলে সে নরসিংদির একটি মসজিদে ১৪ বছর ইমামের চাকরি করছিল। বেতন পেত ৫ হাজার টাকা। নতুন করে হুজি-বি-কে সংগঠিত করা ছিল তার লক্ষ্য। এ জন্য তরুণদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করতেই গোয়েন্দাদের জালে পড়ে যায় শফিকুর।
তার গ্রেফতারে পুলিশ যেমন হাঁফ ছেড়েছে, তেমনই তাদের আত্মবিশ্বাসে কিছুটা চিড়ও ধরেছে। কারণ ২১টা বছর তাদের চোখে ধুলো দিয়ে দেশেই থেকে গিয়েছে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া এক শীর্ষ জঙ্গি।