ফাইবার গ্লাসের তৈরি এই প্রতিমাই কুমোরটুলি থেকে পৌঁছেছে সুদূর ব্রাসেলসে। ছবি: দেবাশিস নাগ
বাঙালির তেরো পার্বণের সেরা পার্বণ দুর্গাপুজো। ব্রাসেলসের প্রবাসী বাঙালির সংগঠন ‘তেরো পার্বণ’-এরও সেরা পার্বণ দুর্গাপুজো। ২০২১-এ কিছু প্রবাসী বাঙালি মিলে প্রতিষ্ঠা করেন এই সংস্থা এবং সাহস করে শুরু করে ফেলেন দুর্গাপুজো। সেখান থেকে বিজয়া সম্মিলনী, বর্ষবরণ, বসন্ত উৎসব ও স্বাধীনতা দিবস পেরিয়ে গোটা এক বছর পরে, আবার দুর্গাপুজোর পালা।
সেই ছোটবেলায় পড়েছিলাম, ‘এসেছে শরৎ, হিমের পরশ...।’ ব্রাসেলসে এসে মনে হল, রবি ঠাকুর বুঝি এখানকার কথা ভেবেই এই লাইনগুলো লিখেছিলেন। এখানে শরৎ মানে সত্যিই হিমের পরশ থাকে হাওয়ার গায়ে। ছোটবেলায় কোনও দিন ভাবিনি যে, দুর্গাপুজো দেখতে সেজেগুজে তার উপরে শাল-সোয়েটার চাপিয়ে অঞ্জলি দিতে যেতে হবে। কিন্তু ইউরোপের ছোট্ট দেশ বেলজিয়ামের রাজধানীতে দুর্গাপুজোর সময়ে এটাই দস্তুর।
‘তেরো পার্বণ’-এর সদস্যেরা কিন্তু হিমের পরশে অকুতোভয়। পুজোর প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। এ বার প্রতিমা এসেছে খাস কুমোরটুলি থেকে, শিল্পী সনাতন পালের তৈরি। প্রবাসে প্যান্ডেল যে-হেতু সম্ভব নয়, কাজেই একটি বিশাল ভবনও রেডি চার দিনের জন্যে। সদস্যেরা মহড়া দিচ্ছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের, অফিস-কাছারি সামলে চলছে মিটিং-রিহার্সাল। মাতৃআরাধনার পাশাপাশি চার দিন দেশ, বাড়ি, ঘর, পরিবার থেকে দূরে বসে নিজেদের মতো করে একটু আনন্দ আহ্লাদ করার জন্যই তো এই সব কিছুর আয়োজন। বড়দের পাশাপাশি কচিকাঁচারাও কম যায় না। তাদের নাচ-গান-আবৃত্তি দেখে-শুনে মনে হওয়ার জো নেই যে, তারা প্রবাসী। খালি পেটে আনন্দে যাতে বাধা না পড়ে তাই প্রচুর বাঙালি খাবারেরও আয়োজন থাকছে। দেশের পুজোয় যা যা খাওয়া হয় তার মধ্যে অনেক কিছুই ‘তেরো পার্বণের’ পুজোতেও পাওয়া যাবে।
এই শহরে নতুন উদ্যমে শুরু হওয়া ‘তেরো পার্বণ’ ছাড়াও থাকছে ব্রাসেলস সর্বজনীন দুর্গাপুজো সমিতির পুজো, যা এ বার সপ্তদশ বর্ষে পা দিল। সাবেক প্রতিমা, ধুপ-ধুনোর গন্ধ, ঢাকের বাদ্যি, ধুনুচি নাচ প্রতিযোগিতা, ভোগ বিতরণ মিলিয়ে একেবারে ঘরোয়া বারোয়ারি পুজোর পরিবেশ থাকে এখানে। আমার কাছে এই পুজোর সেরা আকর্ষণ অষ্টমী ও নবমীর সন্ধ্যারতি। পুরোহিত মহাশয় থাকেন প্যারিসে। তিনি বহু বছর ধরে এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত।
দুর্গাপুজোর অসংখ্য শুভেচ্ছা রইল সকলে জন্যে। আমরা এখানে ‘প্যান্ডেল হপিং’ সেরে ফেলছি। আপনারাও নিজেদের পুজোয় দারুণ আনন্দ ও খাওয়াদাওয়া করুন।