জাপানে এখনও নিষিদ্ধ ট্যাটু!

‘মা-বাবার দেওয়া শরীরে ট্যাটুর কারিকুরি করা মানে তাঁদের অসম্মান করা’—ফলে তা একেবারেই ভাল চোখে দেখেন না জাপানিরা। তাই প্রকাশ্যে নগ্নতা এবং সাপ খেলার মতো ট্যাটুও নিষিদ্ধ জাপানে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

টোকিয়ো শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:০৮
Share:

মানা ইজ়ুমি

‘মা-বাবার দেওয়া শরীরে ট্যাটুর কারিকুরি করা মানে তাঁদের অসম্মান করা’—ফলে তা একেবারেই ভাল চোখে দেখেন না জাপানিরা। তাই প্রকাশ্যে নগ্নতা এবং সাপ খেলার মতো ট্যাটুও নিষিদ্ধ জাপানে। সেই ১৮০০ সাল থেকেই। ১৯৪৮ সালে মার্কিন সেনাদের হস্তক্ষেপে আইনি নিষেধা়জ্ঞা উঠে গেলেও ট্যাটুর প্রতি নাগরিকদের বৈষম্য রয়েই গিয়েছে। রয়ে গিয়েছে তাচ্ছিল্য।

Advertisement

যদিও সমাজের বিরুদ্ধে গিয়ে এই অমূলক কুসংস্কারের বেড়াজাল ভাঙার চেষ্টা করছেন নতুন প্রজন্মের অনেকেই। তবে দৃষ্টিভঙ্গিতে বদল এসেছে কি? না, তা বিশেষ হয়নি বলেই জানালেন বছর ঊনত্রিশের মানা ইজ়ুমি। যদিও সমাজের বিরুদ্ধাচরণের লক্ষে নয়, পপ তারকা নামি আমুরোকে দেখে নিতান্ত শখেই ১৮ বছর বয়সে প্রথম ট্যাটুটি করিয়েছিলেন তিনি। জানালেন, ‘‘তা দেখে প্রথমে কান্নায় ভেঙে পড়েন আমার মা। ভেবেছিলাম বাবা হয়তো আমাকে মেরেই ফেলবেন।’’ এখন অবশ্য প্রায় গোটা শরীরটাই ট্যাটুতে ভরিয়ে ফেলেছেন তিনি। ইজ়ুমি আরও বলেন, ‘‘আমাকে দেখে অনেকেই ভয় পায়। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। তবে ট্যাটুর প্রতি এই বৈষম্য কোনও মতেই মেনে নেওয়া যায় না।’’

ট্যাটু থাকলে এখনও অবধি স্যুইমিং পুল, স্নানের জায়গা, সমুদ্র সৈকত বা জিমে যাওয়ার অনুমতি পাওয়া যায় না জাপানে। চাকরির ক্ষেত্রেও তা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। অপরাধীদের গায়ে ট্যাটু করিয়ে শাস্তি দেওয়ার রীতি ছিল ১৭০০ শতাব্দীতে। এখনও সারা শরীরে ট্যাটু করানোর রীতি রয়েছে এখানকার ‘ইয়াকুজ়া’ গুন্ডাদের মধ্যে। ট্যাটুকে তাচ্ছিল্য করলেও এখানকার ট্যাটুশিল্পীদের নাম অবশ্য ছিল বিশ্বজোড়া। এমনকি ইউরোপের নামীদামি ব্যক্তিরাও এখানে এসে গোপনে ট্যাটু করিয়ে গিয়েছেন বলে খবর।

Advertisement

‘জাপানিজ় ট্যাটুজ়: হিস্ট্রি, কালচার অ্যান্ড ডিজ়াইন’-এর লেখক ব্রায়ান অ্যাশক্রাফ্টের মতে, ‘‘ট্যাটু দেখলেই ইয়াকুজ়াদের কথা মনে পড়ে যায় জাপানের মানুষের। যত দিন না এই ব্যাপারটা বদলাচ্ছে তত দিন নিস্তার নেই ট্যাটুপ্রেমীদের।’’ সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ট্যাটুপার্লারে হানা দেয় পুলিশ। শিল্পীদের জরিমানাও করা হয়। ফলে আইনত নিষিদ্ধ না হলেও প্রশাসনের এই ভূমিকায় চিন্তায় ট্যাটুপ্রেমীরা।

২০১৫ সালে ৭০ বছরের পুরনো একটি আইনের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছিল ওসাকার ট্যাটু শিল্পী তাইকি মাসুদাকে। ২,৬০০ ডলার জরিমানাও করা হয়। যদিও লম্বা আইনি লড়াইয়ের পরে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন। জাপানে কমপক্ষে তিন হাজার ট্যাটু শিল্পী রয়েছেন। মাসুদার বক্তব্য, ‘‘ট্যাটুকে আইনি স্বীকৃতি পাইয়ে দিতেই আমার এই লড়াই।’’

আগামী বছরই রাগবি বিশ্বকাপ হবে জাপানে। ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত হবে অলিম্পিক্স। খেলোয়াড়দের মধ্যেই অনেকেরই ট্যাটু রয়েছে। দর্শকদের অনেকেরও থাকতে পারে। তবে সমস্যা হল, যে দেশে টিভিতে এখনও ট্যাটুর অংশটি অস্পষ্ট করে দেওয়া হয় সেখানে এই খেলোয়াড় এবং দর্শকদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা হবে তা নিয়ে ভ্রু কুঁচকোচ্ছেন অনেকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement