একটা ব্যাখ্যা শোনা গিয়েছিল আগে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরোক্ষ চাপেই নাকি লস্কর-ই-তইবার প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ সইদকে গৃহবন্দি করতে বাধ্য হয়েছে পাক সরকার। এ বার দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটা দিলেন পাক রাজনৈতিক বিশ্লেষক শাহিদ মাসুদ। একটি পাক চ্যানেলে তাঁর দাবি, হাফিজের উপরে হামলার চক্রান্ত করেছে জঙ্গি গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)। সেই হামলা থেকে হাফিজকে বাঁচাতেই পাক প্রশাসন তাঁকে গৃহবন্দি করেছে বলে ওই বিশেষজ্ঞের ইঙ্গিত।
শাহিদের দাবি, হাফিজের উপরে হামলা চালাতে আত্মঘাতী জঙ্গিদের নিয়ে একটি দল বানিয়েছে টিটিপি। তার জন্য পাক পঞ্জাব ও সিন্ধুপ্রদেশে স্লিপার সেলকে সক্রিয় করেছে তারা। শোনা গিয়েছে, আফগানিস্তান থেকে আসা কিছু ফোন ও মেসেজের কথোপকথন হাতে এসেছিল পাক নিরাপত্তা সংস্থাগুলির। তাতেও সইদের উপরে হামলার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। তাই গৃহবন্দি করার পাশাপাশি নিরাপত্তাও আঁটোসাঁটো করা হয়েছে ২৬/১১ হামলার এই প্রধান চক্রীর। গত মঙ্গলবার পাক সেনা দাবি করেছিল, ‘জাতীয় স্বার্থে’ গৃহবন্দি করা হয়েছে সইদকে। আজ অবশ্য সেনা বা পাক সরকারের তরফে কিছু বলা হয়নি।
দিল্লির সাউথ ব্লক সূত্র যদিও বলছে, পিঠ বাঁচাতে পাক তালিবানের ‘গল্প’ ছড়াচ্ছে ইসলামাবাদই। কী ভাবে?
তেহরিক-ই-তালিবানের সঙ্গে পাক প্রশাসনের সংঘাত দীর্ঘদিনের। ইসলামাবাদের শাসন থেকে বেরিয়ে আসার জন্য পাকিস্তানের উপজাতি অধ্যুষিত ‘ফেডেরালি অ্যাডমিনিস্টারড ট্রাইবাল রিজিয়ন’ (ফাটা) অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরেই তৎপর রয়েছে একাধিক সুন্নি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন। ২০০৭ সালে একজোট হয়ে তারাই তেহরিক-ই-তালিবান গঠন করে। পাক প্রশাসনের দাবি, এই জঙ্গি সংগঠনটিকে অর্থ-রসদে মদত জোগায় ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘র’। পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই দাবি করে থাকে, গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে টিটিপি যে ধারাবাহিক নাশকতা চালিয়ে এসেছে, তার নেপথ্যে ছিল ‘র’।
গত নভেম্বরে ভারত-পাকিস্তান দু’দেশই চরবৃত্তির অভিযোগে পরস্পরের দূতাবাসের বেশ কয়েক জন কর্মী-অফিসারকে বহিষ্কার করে। ইসলামাবাদের ভারতীয় দূতাবাসের আট জনকে বহিষ্কারের সময়ে পাক বিদেশ মন্ত্রকের অভিযোগ ছিল, তাঁরা সকলেই র’-এর চর। টিটিপি-র মাধ্যমে বালুচিস্তান, সিন্ধু ও গিলগিট-বালটিস্তানে নাশকতা ঘটিয়ে অস্থিরতা তৈরি করাটাই তাঁদের আসল দায়িত্ব ছিল বলে দাবি করেছিল ইসলামাবাদ।
হাফিজ-প্রসঙ্গে ফের ইসলামাবাদের সেই ‘টিটিপি তাস’ দেখছে সাউথ ব্লক। এবং সেই কারণেই পাক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের যুক্তি উড়িয়ে দিয়ে দিল্লির অফিসারেরা বলছেন, আসলে মার্কিন চাপেই হাফিজকে গৃহবন্দি করেছে পাকিস্তান। কিন্তু তার ফলে সে দেশের মোল্লাতন্ত্র ফের সরব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে। শুরু হয়েছে সরকার-বিরোধী বিক্ষোভও। দিল্লির দাবি, এই উত্তেজনা প্রশমনের লক্ষ্যেই পাক প্রশাসন এ বার বোঝাতে চাইছে, তাদের উপরে কারও চাপ নেই। হাফিজের প্রাণ সংশয়ের সম্ভাবনা তৈরি হওয়াতেই তাঁকে গৃহবন্দি করতে বাধ্য হয়েছে সরকার।
হাফিজ গৃহবন্দি হওয়ার পরেও অবশ্য পাকিস্তানের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল দিল্লি। পাকিস্তান পাল্টা বলেছিল, হাফিজের বিরুদ্ধে সুসংহত প্রমাণ দিক ভারত। তারই জবাবে আজ ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ বলেছেন, ‘‘মুম্বই হামলার ষড়যন্ত্র হয়েছিল পাকিস্তানে। জঙ্গিরা এসেছিল পাকিস্তান থেকে। আর হাফিজ নিজেই তো ভারত-বিরোধী একাধিক হামলার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে সমস্ত প্রমাণ পাকিস্তানেই রয়েছে। এখন দরকার শুধু সদিচ্ছাটুকু।’’ একসুর কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মাও। ইউপিএ আমলের এই প্রাক্তন মন্ত্রী বলেন, ‘‘২৬/১১-র ডসিয়েরেই ভারত যথেষ্ট প্রমাণ দিয়েছে। নিজেদের জাতীয় স্বার্থে এবং বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষার খাতিরেই এ বার পদক্ষেপ করা উচিত পাকিস্তানের।’’