মহিলাদের জন্য নিষিদ্ধ হল লং বুট পরা। শৌভিক দেবনাথ।
ক্ষমতায় আসার পর্বে মহিলাদের নিয়ে তাদের মনোভাব স্পষ্ট করেছিল তালিবান। বারবার জানিয়েছিল, আগের বারের মতো মহিলা বিদ্বেষের পুনরাবৃত্তি হবে না এ বার। তার পর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাবুল দখলের মধ্যে দিয়ে আফগানিস্তানে নিজেদের মুঠি দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর করেছে তালিবান। কিন্তু নয়া জমানায় যত দিন যাচ্ছে, ততই যেন নিজেদের পুরনো কট্টর অবস্থানে ফিরে যাচ্ছে আখুন্দজাদা-বরাদরের তালিবান।
সম্প্রতি আফগানিস্তানের টেলিভিশন চ্যানেল টোলো নিউজ-এ একটি আলোচনাচক্রে হাজির হয়ে তালিবান মুখপাত্র সাফ জানিয়ে দিলেন, মহিলাদের কী কী করণীয়। সেই সূত্রেই আরও একবার প্রকাশ্যে এল নারীদের নিয়ে তালিবানের মনোভাবের ঝলক। সেখানে কোনও রাখঢাক না রেখেই তালিবান মুখপাত্র জানিয়ে দিলেন মহিলাদের জন্য তিন শর্ত। প্রথমত, মহিলাদের পোশাক যেন আকর্ষণীয় না হয়। দ্বিতীয়ত, তাঁদের শরীর থেকে যেন সুগন্ধ না বার হয়। অর্থাৎ, বাড়ি থেকে বেরনোর সময় তাঁরা যেন সুগন্ধী ব্যবহার না করেন। তৃতীয়ত, মহিলাদের ‘লং বুট’ পরা নিষিদ্ধ। কারণ বুটের টক-টক আওয়াজে পুরুষের মনে খারাপ চিন্তার উদয় হয়।
শুধু ফতোয়া জারিতেই অবশ্য তালিবান মুখপাত্র থামেননি। বিস্তারিত ভাবে জানিয়েছেন মহিলারা বুট পরলে, ঠিক কোন উপায়ে পুরুষের মনে খারাপ চিন্তা ভাবনার উদয় হয়। টোলো নিউজে তালিবান মুখপাত্রকে বলতে শোনা যায়, ‘‘মহিলারা বুট পরে যখন হেঁটে যান তার আওয়াজ শুনেছেন? টক-টক আওয়াজের অর্থ কী? ওই আওয়াজ আসলে আহ্বান। মহিলারা ওই আওয়াজ করে ঘুমন্ত পুরুষকে বলে, ‘আমরা সেজেগুজে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছি, আর তোমরা এখনও পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছো! তাহলে আমাদের দেখবে কে?’ আসলে পুরুষদের ঘুম থেকে তুলে মনে খারাপ চিন্তা আনার জন্যই ওই বুটগুলো তৈরি করা হয়।’’ তাই মহিলাদের জন্য বুট নিষিদ্ধ।
এ দিকে ১৫ অগস্ট কাবুল দখলের পর থেকেই আফগানিস্তানে রাতারাতি বেড়ে গিয়েছিল বোরখা, হিজাব, পাগড়ির চাহিদা। তার পর থেকে একের পর এক ফতোয়া জারি করে চলেছে তালিবান। সব মিলিয়ে সময় বদলালেও তালিবানের কোনও বদল নেই। অন্তত তেমনটাই মনে করছেন আফগানিস্তান বিশেষজ্ঞরা।