প্রতীকী ছবি।
লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলএসি) ভারতীয় সেনার মোকাবিলায় এ বার পাক ফৌজের সাহায্য নিচ্ছে চিন। সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, পাক সেনার বেশ কিছু অফিসার চিনা পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)-র পশ্চিম এবং দক্ষিণাঞ্চল থিয়েটার কমান্ডে ‘সাহায্যকারী’ হিসেবে যোগ দিয়েছে। চিন অধিকৃত তিব্বত এবং শিনজিয়াং প্রদেশের সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব ওই দুই থিয়েটার কমান্ডের
সেপ্টেম্বর মাসের গোড়ায় লাল ফৌজের পশ্চিমাঞ্চল ‘থিয়েটার কমান্ডের (ডব্লিউটিসি) দায়িত্ব নিয়েছেন সে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সেনা আধিকারিক ওয়াং হাইজিয়াং। উঁচু পাহাড়ে ঘেরা দুর্গম এলাকায় ভারতীয় সেনার মোকাবিলার জন্য পাক বাহিনীর সাহায্য নেওয়ার পরিকল্পনা তাঁরই মস্তিকপ্রসূত বলে ওই গোয়েন্দা রিপোর্টে দাবি।
গোয়েন্দা সূত্র উদ্ধৃত করে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে দাবি, পাক সেনার কর্নেল পদমর্যাদার এক অফিসারকে চিনের কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের (সিএমসি) আমন্ত্রিত সদস্য হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। ওই কমিশনের চেয়ারম্যান চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং। এ ছাড়া আরও ১০ জন পাক সেনা অফিসার চিনা ফৌজের পরিকল্পনায় সাহায্য করতে বেজিংয়ে রয়েছেন।
শিনজিয়াং, তিব্বত এবং লাদাখের চিন অধিকৃত আকসাই চিনেও পাক বাহিনীর আনাগোনার তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। শিনজিয়াংয়ের কাশগড় থেকে বালুচিস্তানের গ্বদর বন্দর পর্যন্ত বিস্তৃত ১,৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি)-এর নিরাপত্তার জন্য ২০১৬ সালে প্রায় ১৫ হাজার সেনা ও আধাসেনার বিশেষ বাহিনী গড়েছিল পাকিস্তান। পার্বত্য এলাকায় লড়াইয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই বাহিনীকেই চিনা-সহায়তায় ব্যবহার করা হচ্ছে বলে ওই সূত্রের খবর।
পাহাড়ে যুদ্ধের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পাক ফৌজের ‘নর্দার্ন লাইট ইনফ্যান্ট্রি’ (এনএলআই) এবং এলিট ‘স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ’ (এসএসজি) কমান্ডোরাও চিনা বাহিনীর সঙ্গে রয়েছেন বলে ভারতীয় সেনার অনুমান। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ‘গিলগিট বালটিস্তান’ অঞ্চলের যোদ্ধাদের নিয়ে গঠিত এনএলআই ব্যাটেলিয়ন পাহাড়ে যুদ্ধের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ১৯১৩ সালে ভারতের ব্রিটিশ সরকার গিলগিট-বালটিস্তানের উপজাতিদের নিয়ে তৈরি করেছিল ‘গিলগিট স্কাউটস’ বাহিনী। পরে যা পাক সেনার এনএলআই ব্যাটেলিয়নে মিশে যায়। ১৯৯৯ সালে কার্গিল, দ্রাস, বাটালিকের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করে ভারতীয় সেনার পোস্ট দখলে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিল এই বাহিনী।
পাক ফৌজের এলিট এসএসজি কমান্ডোদের তুষারাবৃত উঁচু পাহাড়ে দীর্ঘ দিন ধরে প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থেকে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সিয়াচেন হিমবাহে মোতায়েন ভারতীয় সেনার উপর একাধিক বার হামলা চালিয়েছে পাক সেনার এই কমান্ডো বাহিনী। সম্প্রতি আফগানিস্তানের পঞ্জশির উপত্যকায় তালিবান বিরোধী ‘ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (নর্দার্ন অ্যালায়েন্স নামে যা পরিচিত)-এর উপর হামলাতেও পাক সেনার এই দুই বাহিনী অংশ নিয়েছিল বলে অভিযোগ।