ফাইল চিত্র।
জাজি জেলা। পূর্ব আফগানিস্তানের একেবারে পাকিস্তান সীমানা লাগোয়া এলাকা। এখন বরফ পড়ছে। পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে সাদা হয়ে ভিডিয়োয় সে সব ফুটে আছে নেপথ্যে। আর সামনে জ্বলছে আগুন। পুড়ছে যন্ত্র। আগুনের মধ্যে যেটা দেখা যাচ্ছে, সম্ভবত হারমোনিয়াম। একটা লোককে ঘিরে চলছে ক্ষমতার আঁশটে উল্লাস। এ সবের মধ্যে বন্দুক কাঁধে, পা থেকে মাথা পর্যন্ত জোব্বা-মুখোশে ঢাকা কয়েকটি কোটাল পাথরের মতো স্থির, তাদের হাতের মোবাইলের ক্যামেরা থেকে ঝলসে উঠছে আলো। লোকটি কোনও রকমে মুখে হাসি টেনে সেই উল্লাসের মধ্যে নিজেকে নিজে লুকিয়ে ফেলার মরিয়া চেষ্টা চালিয়েই যেতে থাকে, শুধু মাঝেমাঝে ভেঙে পড়ে, ফুঁপিয়ে ওঠে, আবার চেষ্টা করে হাসার।
শনিবার জার্মান-আফগান সাংবাদিক আব্দুলহক ওমেরি ওই ভিডিয়ো টুইট করেছেন। তাতে তিনি জানান, নিঃসহায় লোকটি স্থানীয় এক সঙ্গীত শিল্পী। রিটুইটে অনেকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তাঁর গায়ের কোটের দিকে। পিছনটা ছেঁড়া। মনে হচ্ছে, মারধরও করা হয়েছে। এই দৃশ্য নিয়েই এখন চলছে আলোচনা। আর ভার্চুয়াল স্মৃতিতে চলছে তালিবানের প্রত্যাবর্তনের পরে দেশের সঙ্গীত শিল্পীদের সাম্প্রতিক আরও নানা-কথা সুরের ভিডিয়োর রোমন্থন।
গত অগস্টে ক্ষমতা দখলের পরে তালিবেরা ধর্মীয় অনুশাসনের জিগির তুলে প্রকাশ্যে গানবাজনা বন্ধ করেছে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মিউজ়িকে তালা। শিল্পীরা সরঞ্জাম লুকিয়ে ফেলেছেন যে যাঁর মতো। নভেম্বরের একটি প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, কাবুলের কাছের খরাবতের কিছু শিল্পীকে সেই কথা বলতে। তার পরে, ক্যামেরার সামনে গাইছেন গান, হয়তো শেষ। সেই একই গানের একই কথা নানা মোড়কে ইন্টারনেটে রয়েছে। বহুজাতিক-পোষিত অনুষ্ঠানে জনপ্রিয় হয়ে নেটদুনিয়ার পথেঘাটে চলতে ফিরতে কানে আসে। কিন্তু আগে না-শোনা ওই আফগান শিল্পীদের গলায় যেন অন্য প্রশ্নের মতো শোনাচ্ছে অনেকের কানে। তাঁরা বিস্ময় প্রকাশ করছেন, কী আছে সেই সমস্ত গানে— যা নিষিদ্ধ না হলেই নয়! শিল্পীকে ঘিরে চলা নির্মম উল্লাসের কথাগুলোর মতোই দুর্বোধ্য কিছু, উত্তরে বলছেন অন্য দেশের, অন্য ভাষার কেউ কেউ।
ইন্টারনেটে ভেসে উঠছে আরও টুকরো টুকরো ছবি। তবলার চামড়া ফুঁড়ে দেওয়ার, হাতুড়ির ঘায়ে টিভি চুরমার করে দেওয়ার। অনেকে বলছেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ধ্বংসও আড়ে-বহরে আরও হাত পাকিয়েছে।