taliban

Afghanistan crisis: প্রকাশ্যে পথে মেয়েদের মার তালিবানের

রাজধানী কাবুলের রাস্তায় তালিব যোদ্ধাদের এ ভাবে মেয়েদের উপর শারীরিক নিগ্রহের ঘটনা দেখে বিশ্ব জুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:৪৫
Share:

ফাইল চিত্র।

তালিবান ক্ষমতায় আসার পর থেকেই প্রমাদ গুনছিলেন আফগানিস্তানের মেয়েরা। সবার আগে তাঁদের অধিকার খর্ব করা হবে বলে আতঙ্কে ছিলেন তাঁরা। সেই আশঙ্কাই সত্যি হতে শুরু করেছে। পড়াশোনা থেকে বাইরে বেরোনো— সবেতেই নিষেধাজ্ঞা চাপানো শুরু হয়েছে। এ বার তালিবান-বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মহিলাদের উপরে প্রকাশ্যে রাস্তায় মারধর করার ভিডিয়োও ভাইরাল হয়েছে টুইটারে।

Advertisement

খাস রাজধানী কাবুলের রাস্তায় তালিব যোদ্ধাদের এ ভাবে মেয়েদের উপর শারীরিক নিগ্রহের ঘটনা দেখে বিশ্ব জুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। তালিবানের অবশ্য তাতে খুব একটা হেলদোল নেই। উল্টে সরকার-বিরোধী বিক্ষোভের ‘খবর কভারের অপরাধে’ কাবুলের এক দৈনিকের পাঁচ সাংবাদিক গ্রেফতার হয়েছেন আজই।

গতকাল রাতে কার্যনির্বাহী সরকারের বিস্তারিত তালিকা প্রকাশ করেছেন তালিবান নেতৃত্ব। সেখানে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব নেই। প্রশাসনে নিজেদের অধিকারের দাবিতে বিভিন্ন শহরে রাস্তায় নেমেছেন আফগান মেয়েরা। কাবুলের এমন এক বিক্ষোভের ছবিই প্রকাশ্যে এসেছে আজ। দেখা গিয়েছে, বিক্ষোভে শামিল মেয়েদের দিকে লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যাচ্ছে তালিব যোদ্ধারা। গায়ে হাত তুলছে তাঁরা। মারছে চাবুকও।

Advertisement

নাবিহ নামে এক সাংবাদিক টুইটারে লিখেছেন, কী ভাবে বিক্ষোভের ছবি তুলতে গিয়ে তালিবানের হাতে হেনস্থা হতে হয়েছে তাঁকে। আফগানিস্তানের ‘সেন্টার ফর দ্য প্রোটেকশান অব উইমেন জার্নালিস্ট’-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর ফারিদা নেকজ়াদ আনন্দবাজারকে জানিয়েছেন, প্রাণ বাঁচাতে তিনি কানাডা পাড়ি দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর সহকর্মীদের অবস্থা নিয়ে তিনি চিন্তিত। তালিবান গতকাল স্পষ্ট করেছে, সরকার-বিরোধী বিক্ষোভের খবর করতে পারবে না আফগান সংবাদমাধ্যম। আজ কাবুলে তা করতে গিয়েই এতিলাতরোজ় লামে দৈনিকের পাঁচ সাংবাদিক গ্রেফতার হয়েছেন। ধৃত সাংবাদিকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন ওই দৈনিকের সম্পাদক জ়াকি দারইয়াবি এই খবর টুইট করেছেন।

১৯৯৯ সালে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান ছিনতাইয়ের মস্তিষ্ক ছিলেন মোল্লা ওমর। তাঁর ছেলে ইয়াকুব হয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তালিবানের সরকার নিয়ে আজ মুখ খুলেছে আমেরিকা। তবে সংযত ভাবে। তালিবানের মন্ত্রিসভায় এমন অনেকের নাম রয়েছে, যাঁরা বহু আগে থেকে রাষ্ট্রপুঞ্জের কালো তালিকাভুক্ত। বিদেশ দফতরের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘আমরা তালিকাটা ভাল করে খেয়াল করেছি। দেখেছি তাতে কোনও মহিলার নাম নেই। বিশেষ কয়েক জন ব্যক্তির নাম নিয়ে আমরা উদ্বেগে। তবে আমরা জানি এটা অন্তর্বর্তী একটা ব্যবস্থা। তালিবানকে আমরা ওদের কাজ দিয়েই বিচার করব, কথা দিয়ে নয়।’’

নতুন সরকার নিয়ে আজ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপুঞ্জে আফগানিস্তানের স্থায়ী দূত গোলাম ইসাকজ়াই। গদিচ্যুত আফগান প্রেসিডেন্ট আশরফ গনি তাঁকে আফগান দূত হিসেবে রাষ্ট্রপুঞ্জে পাঠিয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্য, তালিবান যা যা মুখে দাবি করেছিল, তার একটাও কার্যক্ষেত্রে দেখা যায়নি। রাষ্ট্রপুঞ্জ যাতে এই নতুন ইসলামিক আমরিশাহির সরকারকে না মেনে নেয়, তার আর্জি জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের নতুন প্রজন্ম গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার নির্বাচিত হতে দেখেছে। তারা এই সরকারকে মেনে নেবে না যেখানে মহিলা, সংখ্যালঘুদের কোনও অধিকারই স্বীকৃত হয়নি।’’ একই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, সবাইকে নিয়ে সরকার গঠনের কথা আদৌ রাখেননি তালিবান নেতৃত্ব।

তবে আফগানিস্তানের জন্য আজই তিন কোটি দশ লক্ষ ডলারের সাহায্য ঘোষণা করেছে চিন। বেজিং জানিয়েছে, গত তিন সপ্তাহ আফগানিস্তানে যে নৈরাজ্য চলছিল, নতুন সরকার গঠনের পরে তার অবসান হয়েছে! চিনা বিদেশ মন্ত্রকের তরফে এক বিবৃতিতে আজ বলা হয়েছে, ‘‘আশা করছি, সবাইকে নিয়ে তালিবান সফল ভাবে সরকার গঠন করতে পারবে যেখানে নরমপন্থী অভ্যন্তরীণ ও বিদেশ নীতি মেনে চলা হবে। সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতাও করা হবে।’’ পাকিস্তান, চিনের সঙ্গে আজ মোল্লা হাসান আখুন্দের সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে আফগানিস্তানের আর এক পড়শি দেশ উজ়বেকিস্তানও।

এত দিন ধরে তালিবানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা পঞ্জশিরের ন্যাশনাল রেজ়িস্ট্যান্স ফ্রন্ট-ও এই নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। উল্টে তারা রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং অন্য আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলির কাছে সাহায্যের আর্তি জানিয়েছে। একটি বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, পঞ্জশির উপত্যকার কিছু এলাকা দখলের পরে তালিবান বাহিনী এখন সেখানকার সাধারণ মানুষের উপর অকথ্য অত্যাচার চালাচ্ছে। আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষ যাতে নতুন সরকারকে মেনে না নেন, সেই আর্জিও জানিয়েছে তারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement