আসাদের বাসভবনের ভিতরের দৃশ্য। ছবি: এক্স (সাবেক টুইটার)।
রবিবার সকালেই প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সরকারের পতন হয়েছে সিরিয়ায়। তার সঙ্গে সঙ্গেই সিরিয়ায় পাঁচ দশকের বাথ-জমানার শেষ হয়েছে। দেশ ছেড়েছেন আসাদ। রাজধানী দামাস্কাসের পাশাপাশি একের পর এক শহর চলে গিয়েছে বিদ্রোহীদের দখলে। সেই আবহেই এ বার দামাস্কাসে আসাদের বাসভবনে ঢুকে পড়লেন বিদ্রোহীরা। প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের ঘরে ঢুকে ছিঁড়লেন পূর্বপুরুষদের ছবি। ভাঙা হল একাধিক ভাস্কর্যও।
এর মাঝেই আসাদের বাসভবনের বেশ কিছু ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে (ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন)। তাতেই দেখা যাচ্ছে, আসাদের বাসভবনে ঢুকে পড়েছে এক দল বিদ্রোহী। ঘরের দেওয়াল থেকে ছবিগুলি টেনে নামিয়ে ছিঁড়ছেন তাঁদেরই কেউ কেউ। আর এই ছবিগুলির বেশির ভাগই আসাদের পূর্বপুরুষ ও পরিবারের সদস্যদের। আর একটি ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, এক দল বিদ্রোহী একটি ট্যাঙ্কের মাথায় উঠে পড়েছেন। কয়েক জন আবার আসাদের পিতা হাফিজ়ের একটি মূর্তি ভাঙায় ব্যস্ত। জলভরা চোখে কেউ কেউ বলছেন, ‘এই দিনটার জন্য কত বছর ধরে অপেক্ষা করেছি! বিশ্বাসই হচ্ছে না যে এটা সত্যি!’
আসাদের পরিবারের শাসনকালে সিরিয়ায় মানবাধিকার নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন উঠেছে। আসাদ এবং তাঁর পিতা হাফিজ় আল-আসাদের শাসনকালে এমন অগুনতি অভিযোগ রয়েছে। তাই আসাদ-রাজের পতনের পরেই আগে প্রেসিডেন্ট ভবনের দখল নিয়েছেন বিদ্রোহীরা। রাগে তছনছ করেছেন মূর্তি, বিভিন্ন ছবি। ‘আল জা়জ়িরা’ জানিয়েছে, দামাস্কাসে ইটালির রাষ্ট্রদূতের বাসভবনেও ঢুকে পড়েছেন এক দল সশস্ত্র মানুষ। সেখান থেকে তিনটি গাড়িও চুরি হয়ে গিয়েছে। এর আগে শ্রীলঙ্কা বা বাংলাদেশেও সরকারের পতনের সময়ে এই ধরনের পরিস্থিতি দেখা গিয়েছিল। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে বাংলাদেশে যখন পরিস্থিতি চরমে, তখনই গত ৫ অগস্ট দেশজোড়া বিক্ষোভের মাঝে পদত্যাগ করেন হাসিনা। ‘গণভবন’ ছেড়ে কপ্টারে ভারতে চলে আসেন তিনি। হাসিনা দেশ ছাড়ার পরেই গণভবনে ঢুকে পড়েন শয়ে শয়ে বিদ্রোহী। চলে দেদার লুটপাট। হাঁস, মুরগি, খাবার, আসবাবপত্র— হাতের কাছে যা পান তা-ই তুলে নিয়ে আসেন উৎসাহী জনতা! এমনকি, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর পরনের পোশাক হাতে নিজস্বী তুলতেও দেখা যায় অনেককে। হাসিনার বাবা তথা বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের মূর্তিও ভেঙে ফেলেন বিদ্রোহীরা।
রবিবার সিরিয়ার বিদ্রোহী সশস্ত্র দুই গোষ্ঠী ‘হায়াত তাহরির আল-শাম’ (এইচটিএস) এবং তাদের সহযোগী ‘জইশ আল-ইজ্জা’র যৌথবাহিনীর হামলায় পিছু হটেছে আসাদের সরকার। রাজধানী দামাস্কাসের পাশাপাশি একের পর এক শহর চলে গিয়েছে বিদ্রোহীদের দখলে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, এক প্রকার বিনা বাধায় রাজধানী ‘দখল’ করে নেন বিদ্রোহীরা। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি সরকার। রবিবার সকালে দামাস্কাসের দখল নেওয়ার পরেই বিদ্রোহীরা সেটিকে একটি ‘স্বাধীন’ শহর বলে ঘোষণা করেছেন। আসাদের ‘স্বৈরাচারী শাসন’ থেকে সিরিয়া মুক্ত হয়েছে, এমনটাই দাবি বিদ্রোহীদের। আসাদ দামাস্কাস ছাড়তেই শুরু হয়ে গিয়েছে উল্লাস। কাতারের দোহায় সিরিয়ার দূতাবাসে শুরু হয়ে গিয়েছে ‘স্বাধীনতা’ উদ্যাপন। রবিবার আসাদের পতন সিরিয়ায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা গৃহযুদ্ধে ইতি টানতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ গাজ়ি জালালিও জানিয়েছেন, তিনি ক্ষমতার হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত। তবে তা হোক শান্তিপূর্ণ ভাবে।