চলছে প্রতিস্থাপনের কাজ। ছবি: রয়টার্স।
এ হল কয়েক দশকের প্রশ্ন— প্রাণীদের অঙ্গ কি মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপিত করা যায়? সে ক্ষেত্রে মরণাপন্ন রোগীকে কারও অঙ্গদানের উপর নির্ভর করতে হয় না। সেই বহু চর্চিত প্রশ্নের উত্তর মিলল অবশেষে। পরীক্ষামূলক ভাবে ও অল্প সময়ের জন্য মানবদেহে বসানো হয়েছিল একটি শুয়োরের কিডনি। নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সাফল্য মিলেছে পরীক্ষায়। মানবদেহে কাজ করেছে কিডনি।
প্রতিস্থাপনের যোগ্য মানব অঙ্গের অভাব চিরকালই। এই সমস্যার নিরসনে সম্প্রতি শুয়োরের অঙ্গ নিয়ে গবেষণা চলছিল। কিন্তু শুয়োরের কোষে উপস্থিত একটি শর্করা জাতীয় পদার্থে সমস্যা হচ্ছিল বারবার। অন্য প্রাণীর অঙ্গ মানবদেহে বসাতেই শারীরিক জটিলতা তৈরি হচ্ছিল। অস্ত্রোপচারে সাফল্য মিলছিল না কিছুতেই। এর পরে জিন-এডিট করে (জিনে পরিবর্তন করে) ওই শর্করাটিকে বাদ দেওয়া হয় কোষ থেকে। তার পর তা বসানো হয় মানবদেহে। এর আগে শুয়োরের কিডনি মানবদেহে বসানো মাত্র মানুষের ইমিনিউটি সিস্টেম ‘বিদ্রোহ’ করা শুরু করছিল। ভিন্ প্রাণীর দেহটিকে ‘বিপদ’ হিসেবে চিহ্নিত করছিল মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা। কিন্তু এ বারে তা হয়নি।
পরীক্ষার সময়ে শল্যচিকিৎসকেরা শুয়োরের জেনেটিকালি ইঞ্জিনিয়ার্ড কিডনিটিকে গ্রাহকের (সদ্য মৃত) শরীরের একজোড়া রক্তনালির সঙ্গে জুড়ে দেন। সেটিকে শরীরের বাইরে রেখেছিলেন বিজ্ঞানীরা, যাতে পর্যবেক্ষণ করা যায়। দু’দিন পরে দেখা য়ায়, কিডনি তার নিজের কাজ করছে। ইমিউনিটি সিস্টেমও কোনও সমস্যা করছে না। গবেষক দলের প্রধান নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির রবার্ট মন্টেগোমারি বলেন, ‘‘একেবারে স্বাভাবিক কাজ করছে কিডনি।’’ ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটা মেডিক্যাল স্কুল-এর গবেষক অ্যান্ড্রু অ্যাডামস বলেন, ‘‘নজর কাড়া সাফল্য। এ থেকে স্পষ্ট, ঠিক পথেই হাঁটছি।’’
প্রাণিদেহ থেকে মানবদেহে সফল অঙ্গ প্রতিস্থাপন, বিজ্ঞানীদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। একে বলে ‘জ়েনোট্রান্সপ্লান্টেশন’। সপ্তদশ শতকেও প্রাণীর রক্ত মানবদেহে ঢোকানোর চেষ্টা করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। বিশ শতকে বেবুনের অঙ্গ মানুবদেহে বসানোর চেষ্টা হয়েছিল। ‘বেবি ফি’ নামে এক মৃতপ্রায় সদ্যোজাতের দেহে বেবুনের হৃদযন্ত্র বসিয়ে তাকে ২১ দিন বাঁচানো হয়েছিল। কিন্তু শেষমেশ সাফল্য মেলেনি। এ বারে কী হয়, তা শুধুমাত্র সময়ই বলতে পারে।