সুনীতা উইলিয়ামস। ছবি: সংগৃহীত।
৫০ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে আটকে রয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভুত মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস। কী ভাবে পৃথিবীতে ফিরবেন তাঁরা, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। যদিও আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা স্টেশনে আটকে থাকা মহাকাশচারী সুনীতা এবং বুচ উইলমোর নিরাপদে রয়েছেন।
এক ভারতীয় মহাকাশ বিশেষজ্ঞ সুনীতাদের অবস্থার কথা বর্ণনা করেছেন একটি শব্দের মাধ্যমে। তিনি জানিয়েছে, ‘ত্রিশঙ্কু’-র মতো ঝুলে রয়েছে সুনীতারা। এর মধ্যে নাসা জানিয়েছে, ঠিক কী কারণে বিগড়ে গিয়েছে বোয়িং স্টারলাইনার, তার কিছুটা হদিস তারা পেয়েছে। দাবি করেছে, হিলিয়াম গ্যাস লিক হচ্ছে। যদিও স্পষ্ট করে জানায়নি যে সুনীতা এবং তাঁর সহ-মহাকাশচারী বুচ আদৌ ফিরতে পারবেন কি না বা ওই বোয়িং স্টাইলাইনার মহাকাশযানেই তাঁদের ফেরা সম্ভব হবে কি না।
বোয়িং সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে এই স্টারলাইনার মহাকাশ যানটি সর্বাধিক ৯০ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। তার পর তার ব্যাটারি নিঃশেষিত হতে পারে। এর আর্থ আমেরিকার মহাকাশ গবেষকদের হাতে আর ৪০ দিন রয়েছে। তার মধ্যেই তাঁদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, সুনীতা এবং বুচ ওই স্টারলাইনার মহাকাশযানেই পৃথিবীতে ফিরবেন না কি স্পেসএক্সের ক্রিউ ড্রাগন বা রাশিয়ার সয়ুজ় মহাকাশযানে ফিরবেন!
নাসার কমার্শিয়াল ক্রু প্রোগ্রাম ম্যানেজার স্টিভ স্টিচ জানিয়েছেন, সুনীতা এবং বুচ ‘ভাল মেজাজ’-এ রয়েছেন। এর আগেও তারা দীর্ঘ সময়ের অভিযানে সামিল হয়েছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘আকস্মিক’ কিছু ঘটলে কী করতে হবে, সেই নিয়ে পরিকল্পনা রয়েছে নাসার। তবে তার আগে ওই স্টারলাইনার বোয়িংয়েই যাতে সুনীতাদের ফিরিয়ে আনা যায়, সেই চেষ্টাই চলছে। স্টারলাইনারের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মার্ক ন্যাপ্পি বলেন, ‘‘আমরা বিশ্বাস করি, মহাকাশচারীদের ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের যথেষ্ট ভাল মহাকাশ যান (বোয়িং স্টারলাইনার) রয়েছে।’’ নাসার তরফে জারি করা বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, রিয়াকশন কন্ট্রোল সিস্টেম (আরসিএস)-এর পরীক্ষা শেষ হয়েছে। সেই নথি স্টারলাইনার নির্মাণকারী দলটি পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছে। বুচ এবং সুনীতা কী ভাবে ফিরবেন, সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মহাকাশযান বোয়িং সিএসটি-১০০ স্টারলাইনার ক্যাপসুলে চড়ে গত ৫ জুন মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার ওই দুই নভশ্চর পাড়ি দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের উদ্দেশে। অভিযান নিয়ে উত্তেজনাও ছিল তুঙ্গে। কারণ, প্রথমত দীর্ঘ অপেক্ষা এবং প্রস্তুতির পর এটিই বোয়িং-এর প্রথম মহাকাশচারী নিয়ে যাত্রা। দ্বিতীয়ত, এই ‘ক্রু ফ্লাইট টেস্ট’ অভিযানের উদ্দেশ্য বেসরকারি উদ্যোগে সাধারণের জন্য বাণিজ্যিক ভাবে মহাকাশ সফরের রাস্তা সুগম করা। শুরুতে কথা ছিল, একুশ দিন পরেই ফিরছেন সুনীতারা। কিন্তু হঠাৎই বেঁকে বসল বোয়িং। স্টারলাইনার ওড়ার আগেও রকেটে হিলিয়াম লিকেজের সমস্যা ধরা পড়েছিল। যাত্রাপথে আরও নানা যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দেয়। রকেটের পাঁচটি ‘ম্যানুভারিং থ্রাস্টার’ খারাপ হয়ে যায়, সমস্যা দেখা দেয় একটি ধীর গতির ‘প্রপেল্যান্ট ভালভ্’-এও। সব মিলিয়ে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে সুনীতাদের ফেরা।