সুনীতা উইলিয়ামস। ছবি: সংগৃহীত।
এক মাসেরও বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে আটকে রয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস। সঙ্গে রয়েছেন সহকর্মী বুচ উইলমোর। সেখান থেকেই বুধবার সরাসরি বার্তা দিলেন। সুনীতা বলছেন, ‘‘হারার কোনও প্রশ্নই নেই, এই মন্ত্র নিয়ে এখানে পড়ে আছি। সব রকম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মহাকাশযানটিকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে আমাদের। সে রকম হলে মহাকাশ স্টেশন থেকে নিজেদের ‘আনডক’ করে নিজেরাই ঘরে ফেরার রাস্তা বের করতে পারব বলেই আমার বিশ্বাস।’’
মহাকাশযান বোয়িং সিএসটি-১০০ স্টারলাইনার ক্যাপসুলে চড়ে গত ৫ জুন মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার ওই দুই নভশ্চর পাড়ি দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের উদ্দেশে। অভিযান নিয়ে উত্তেজনাও ছিল তুঙ্গে। কারণ, প্রথমত দীর্ঘ অপেক্ষা এবং প্রস্তুতির পর এটিই বোয়িং-এর প্রথম মহাকাশচারী নিয়ে যাত্রা। দ্বিতীয়ত, এই ‘ক্রু ফ্লাইট টেস্ট’ অভিযানের উদ্দেশ্য বেসরকারি উদ্যোগে সাধারণের জন্য বাণিজ্যিক ভাবে মহাকাশ সফরের রাস্তা সুগম করা।
শুরুতে কথা ছিল, একুশ দিন পরেই ফিরছেন সুনীতারা। কিন্তু হঠাৎই বেঁকে বসল বোয়িং। স্টারলাইনার ওড়ার আগেও রকেটে হিলিয়াম লিকেজের সমস্যা ধরা পড়েছিল। যাত্রাপথে আরও নানা যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দেয়। রকেটের পাঁচটি ‘ম্যানুভারিং থ্রাস্টার’ খারাপ হয়ে যায়, সমস্যা দেখা দেয় একটি ধীর গতির ‘প্রপেল্যান্ট ভালভ্’-এও। সব মিলিয়ে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে সুনীতাদের ফেরা।
নাসার ইঞ্জিনিয়ারেরা বোয়িং ক্যাপসুলের যান্ত্রিক ত্রুটি সমাধানের জন্য কাজ করছেন। নাসার কমার্শিয়াল ক্রু প্রোগ্রাম ম্যানেজার স্টিভ স্টিচ আগেই আশ্বাসের সুরে জানিয়েছিলেন, মহাকাশচারীদের ফেরানো নিয়ে কোনও তাড়া নেই, নেই দুশ্চিন্তাও। এর মধ্যেই সুনীতারা বুধবার ভারতীয় সময় রাত সাড়ে ৮ টায় আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে জানালেন, সব কিছু সুষ্ঠু ভাবে চললে জুলাই মাস শেষের আগেই ফিরছেন তাঁরা। স্টারলাইনারের ফেরা নিয়ে দুই মহাকাশচারীর গলায় আত্মবিশ্বাসের সুর।
আপাতত আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে নানান বৈজ্ঞানিক পরীক্ষানিরীক্ষা করেই সময় কাটছে তাঁদের। যেমন মাইক্রো-গ্র্যাভিটি পরিস্থিতিতে জিন সিকোয়েন্সিং। এ ছাড়া অবসর সময়ে বদলাচ্ছেন মূত্র থেকে পানীয় জল তৈরি করার মেশিনের পাম্প। অন্য দিকে, উইলমোর মহাকাশ থেকে হ্যারিকেন বেরিল-এর আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল পেরিয়ে টেক্সাসে আছড়ে পড়ার দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করেছেন। ফেরা নিয়ে বিশেষ মাথাব্যথা নেই তাঁদের। যে কাজের জন্য এসেছেন, সেটি নিয়েই ব্যস্ত তাঁরা।
বুধবার স্টিভ জানান, ইঞ্জিনিয়ারেরা স্টারলাইনারের যান্ত্রিক ত্রুটি সমাধানের জন্য দিনরাত কাজ করে চলেছেন। দেরি হলেও সুনীতা ও বুচকে ফেরানোই এখন তাঁদের মূল লক্ষ্য। প্রয়োজনে বোয়িং-এর পরিবর্তে সাহায্য নিতে হতে পারে স্পেস-এক্স মহাকাশযানেরও।