পূর্ব পুরুষের মৃতদেহ সংরক্ষণের চল ছিল চিলি, পেরু এবং মিশরে। কিন্তু সেই দেহ সংরক্ষিত হলেও মুখ দেখে আসল চেহারা কেমন হত তার আন্দাজ পাওয়া যেত মাত্র। সঠিক ভাবে তা জানার উপায় ছিল না। এ বার সেটাই সম্ভব করে দেখাল প্রযুক্তি। দেখাল, হাজার হাজার বছর আগে পূর্ব পুরুষদের ঠিক কেমন দেখতে ছিল।
সম্প্রতি এই অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখিয়েছেন স্কটল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ডান্ডির ফরেনসিক আর্ট এবং ফেসিয়াল আইডেন্টিফিকেশন বিভাগের স্নাতকোত্তর স্তরের ছাত্রী ক্যারেন ফ্লেমিং।
শুধুমাত্র খুলির সাহায্যে প্রায় ২০০০ বছর আগে মৃত এক মহিলার মুখায়বব তৈরি করেছেন তিনি। মৃত্যুর আগে ওই মহিলাকে কেমন দেখতে ছিল, থ্রিডি ওয়্যাক্স ব্যবহার করে তা নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি।
১৮৩৩ সাল থেকে ইউনিভার্সিটি অব এডিনবরার অ্যানাটমিক্যাল মিউজিয়ামে রাখা ছিল ওই খুলিটি। প্রাচীন কালে ব্রিটেনে কেল্টিক জাতির মধ্যে ড্রুয়িড নামের বিশেষ এক গোষ্ঠীর মানুষের বাস ছিল। তাদের জীবনযাত্রা ছিল বেশ রহস্যময়।
এই ড্রুয়িডরা মূলত গির্জায় পুরোহিতের দায়িত্ব সামলাতেন। কেউ কেউ ছিলেন যাদুকর। ভবিষ্যৎও বলে দিতে পারতেন তাঁরা। এঁদের জীবনযাত্রা ছিল রহস্যময়। ঈশ্বরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে বলে দাবি করতেন তাঁরা।
যে মহিলার মুখাবয়ব গড়ে সাড়া ফেলে দিয়েছেন ক্যারেন, তিনিও ওই ড্রুয়িড গোষ্ঠীর ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁর নাম ছিল হিলডা। তিনি ছিলেন বর্তমান স্কটিশ শহর স্টর্নোওয়ের বাসিন্দা। তিনিও সম্ভবত ছিলেন জাদুকরী।
সেই সময় মহিলাদের সর্বোচ্চ আয়ু ছিল ৩১ বছর। কিন্তু হিলডা ৬০ বছর বয়সে মারা যান বলে ডিএনএ পরীক্ষায় জানা গিয়েছে।
হিলডা অভিজাত পরিবারের মেয়ে ছিলেন। নিজের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতেন। তাই হয়ত ৬০ বছর পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন বলে মনে করছেন গবেষকরা। তবে মৃত্যুর সময় তাঁর মুখে একটিও দাঁত ছিল না। ৫৫ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ৪০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তাঁর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে ১৮৩৩ সালের একটি জার্নালে উল্লেখ পাওয়া যায়।
বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ক্যারেন ফ্লেমিং জানিয়েছেন, যত্ন সহকারে হিলডার মুখের প্রতিটি পেশি তৈরি করেছেন তিনি। হিলডার মুখের সঙ্গে বর্তমানে ষাটোর্ধ্ব মহিলাদের মুখের গড়নে বেশ মিল রয়েছে। ১৬ অগস্ট থেকে স্কটল্যান্ডের বার্ষিক ‘মাস্টার্স শো’ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। সেখানে হিলডার ওই মুখায়বটি রাখা হয়েছে।