আবের শেষকৃত্যে খরচ হবে অন্তত ১.২ কোটি ডলার। ছবি সংগৃহীত।
ছুরি হামলায় গত জুলাইয়ে আচমকা মৃত্যু হয়েছিল জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজ়ো আবের। দেশের দীর্ঘস্থায়ী প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুর পরে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্যের কথা ঘোষণা করেছিলেন দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তথা আবের ক্যাবিনেটের একদা সদস্য ফুমিয়ো কিশিদা। ২৭ সেপ্টেম্বর সেই অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। কিন্তু এখন সেই শেষকৃত্য অনুষ্ঠানকে ঘিরেই চূড়ান্ত বিতর্ক শুরু হয়েছে জাপানে। এ নিয়ে দেশবাসীর ক্ষোভ সামলাতে আপাতত হিমশিম খেতে হচ্ছে কিশিদা সরকারকে।
আবের শেষকৃত্যকে কেন্দ্র করে রাজধানী টোকিয়োর বুডোকানে বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে জাপান সরকার। সেখানে আসার কথা কমপক্ষে ৬ হাজার আমন্ত্রিতের। তাতে খরচ হবে অন্তত ১.২ কোটি ডলার। গোটা বিশ্ব থেকে আসবেন তাবড় রাজনৈতিক নেতারা। জি-৭ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে একমাত্র কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো-র সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা। শেষকৃত্য উপলক্ষে জাপান সফরে আসার কথা আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এবং প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার-ও।
কিন্তু প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এত বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ খরচ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন দেশের নাগরিকদের একাংশ। তাঁদের দাবি, এখন কোভিড মহামারিতে বিধ্বস্ত জাপানের অর্থনীতি। এই পরিস্থিতিতে এত বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ অন্য খাতে ব্যবহার না করে শুধুমাত্র শেষকৃত্যের জন্য খরচ করার কোনও যৌক্তিকতাই নেই। তা ছাড়া, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সামরিক বাহিনী উন্নয়ন ও প্রতিরক্ষা খাতে আবে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করেছিলেন, তা নিয়েও আপত্তি ছিল দেশের সাধারণ মানুষের। তৃতীয়ত, যে আততায়ীর হাতে আবে খুন হন, জেরায় সে দাবি করেছিল, একটি বিশেষ গির্জা সংগঠনের জন্য দেউলিয়া হতে হয় তার পরিবারকে। আবের দল লিবারাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সঙ্গে ওই সংগঠনের সুসম্পর্ক বহু দিনের। হত্যাকারী যুবকের ওই স্বীকারোক্তির পর থেকে অনেকেই দাবি করে আসছেন যে ওই ধর্মীয় সংগঠনের সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করুক শাসকদল। কিন্তু আবের দল এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় দেশের জনগণ প্রবল ক্ষুব্ধ।
এই অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করে তাই ইতিমধ্যেই বিক্ষোভ-আন্দোলন শুরু হয়েছে দেশ জুড়ে। কোথাও কোথাও বিষয়টি গড়িয়েছে আদালত পর্যন্তও। প্রধানমন্ত্রী কিশিদার অবশ্য বক্তব্য, হিংসার বিরুদ্ধে ও গণতন্ত্রের পক্ষে বার্তা দিতেই আবের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের জন্য এত বিপুল আয়োজন করেছে তাঁর সরকার। তবে শেষমেশ সেই অনুষ্ঠান কতটা আড়ম্বরের সঙ্গে করা যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে।