Sri Lanka Crisis

Sri lanka crisis: জ্বলছে কলম্বো, মাত্র দু’ঘণ্টার সড়ক দূরত্বে নির্বিবাদে চলেছে টেস্ট ক্রিকেট, আবার চলবে?

অস্ট্রেলিয়ার পর পাকিস্তান ইতিমধ্যেই সফর করতে পৌঁছে গিয়েছে শ্রীলঙ্কা। শনিবার থেকে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট খেলতে নামবেন বাবর আজমরা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২২ ১৮:১৫
Share:

বিক্ষোভ এবং খেলা— দুই-ই চলেছে পূর্ণোদ্যমে, এক সঙ্গে, প্রায় পাশাপাশি। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।

নগরী জ্বলছে। বেহালা বাজাচ্ছেন রোমসম্রাট নিরো। অনেক অমিল সত্ত্বেও অনেকের এই উপমা মনে পড়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতি দেখে।

Advertisement

জ্বলছে দ্বীপরাষ্ট্র। খাদ্যের চরম আকাল। এক লিটার পেট্রল বিকোচ্ছে ভারতীয় মুদ্রায় সাড়ে ৫০০ টাকারও বেশি দামে। কিন্তু অশান্তির এই কালো মেঘকে বিভ্রম বলে মনে হবে একটু চোখ ফেরালেই। যখন গণবিক্ষোভের দাউদাউ ক্ষোভ আছড়ে পড়ছে রাজধানী কলম্বোর সরকারি অন্দরমহলে, ঠিক তখনই সড়কপথে দু’ঘণ্টার দূরত্বে শান্ত, সৌম্য আকাশের তলায় দিব্যি আসর বসল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের। অস্ট্রেলিয়া-শ্রীলঙ্কা টেস্ট ম্যাচ সিরিজ চালু রইল গল-এ। সেই সিরিজ সদ্য শেষ হয়েছে। তার পর শ্রীলঙ্কা পৌঁছে গিয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট দল। আগামী শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা সিরিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচ।

আন্তর্জাতিক অর্থনীতি বা রাজনীতির বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চরম এক পরিস্থিতির দিকে গুটি গুটি পায়ে এগোচ্ছে জয়সূর্য, সঙ্গকারা, মুরলিধরনের দেশ। তা হলে কোন জাদুতে বিক্ষোভে জ্বলতে থাকা কলম্বো থেকে মাত্র দেড়শো কিলোমিটার দূরত্বের গল-এ আপন খেয়ালে চলতে পারল টেস্ট ক্রিকেট? অস্ট্রেলিয়া-শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় টেস্ট শেষ হয়েছে ১১ জুলাই, সোমবার। তখন দেশের প্রেসিডেন্ট লুকিয়ে। তাঁর বাসভবন দখল করে নিয়েছে জনতা।

Advertisement

ঘটনাচক্রে, গল টেস্ট শেষ হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। বিক্ষোভ এবং খেলা— দুই-ই চলেছে পূর্ণোদ্যমে, এক সঙ্গে, প্রায় পাশাপাশি। গল-এ খেলার মাঠ ও প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের দূরত্ব মেরেকেটে ১০০ মাইল। এই প্রেক্ষিতেই যে প্রশ্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, তা হল, খেলা দেখতে যাচ্ছেন কারা? কারাই বা কলম্বোর রাস্তায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন!

খেলার মাঠে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ চেয়ে পোস্টার হাতে দর্শক। ছবি— এএফপি।

এহ বাহ্য, পরবর্তী সিরিজ খেলতে ইতিমধ্যেই শ্রীলঙ্কায় পৌঁছে অনুশীলন শুরু করে দিয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট দল। বাবর আজমদের বিরুদ্ধে ১৬ জুলাই, শনিবার, গল-এই প্রথম টেস্ট খেলতে নামবেন করুণারত্নেরা। ২৪ জুলাই শেষ টেস্ট শুরু হওয়ার কথা আবার অধুনা জ্বলন্ত কলম্বোতে।

অনেকে বিস্মিত হলেও অনেকে এই চোখে পড়ার মতো বিপরীত ছবিতে ‘অস্বাভাবিক’ কিছু দেখছেন না। তাঁরা বলছেন, সরকার বদলের আন্দোলন অতি তীব্র হয়েছে এবং তার প্রভাব পড়েছে শ্রীলঙ্কা জুড়ে, এ কথা যেমন ঠিক, তেমনই সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে এখনও সর্বত্র সর্বাত্মক সাড়া মেলেনি। মূলত রাজধানীকেন্দ্রিকই তার চলন। কারণ, মানুষের দৃষ্টিতে সরকার থাকে রাজধানীতে। এবং ঠিক এই কারণেই শ্রীলঙ্কায় অশান্তির আবহের শুরুতেই ট্রেনে, বাসে, গাড়িতে রাজধানীমুখী জনস্রোত দেখা গিয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মূলত বিক্ষুব্ধ তরুণরা দল বেঁধে হাজির হতে শুরু করেছিলেন কলম্বোর পথেঘাটে। তাঁরাই রাজধানীবাসীর সঙ্গে মিলে কলম্বোয় গণবিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছেন। অর্থাৎ একটি মত হল, সরকার বদলের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েনি বলেই রাজধানী থেকে দু’ঘণ্টার সড়ক দূরত্বেও নির্বিঘ্নে হতে পেরেছে পাঁচ দিনের ক্রিকেট ম্যাচ। ভরা স্টেডিয়ামে হতে পেরেছে টানটান টি-২০ ম্যাচ।

তবে শুধু গল কেন, খাস কলম্বোতেই জুন মাস জুড়ে দু’টি টি-২০ এবং তিনটি এক দিনের ম্যাচ খেলেছে শ্রীলঙ্কা আর অস্ট্রেলিয়া। বিক্ষোভ তখন খানিক স্তিমিত থাকলেও দেশের করুণ আর্থিক দশা চলছিলই। আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির আঁচ পড়েছে ধনী থেকে গরিব— সকলের পকেটেই। সেই তাঁরাই আবার জড়ো হয়েছেন খেলার মাঠে। হাতের প্ল্যাকার্ড তুলে ধরে গোটা বিশ্বের নজর ফেরাতে চেয়েছেন দেশের জ্বলন্ত পরিস্থিতির দিকে।

কিন্তু ম্যাচ পণ্ড করার কোনও চেষ্টা কেউ করেননি। খেলার মাঠে ওই ভাবে ক্রিকেটের জন্য হাজির হওয়ার মধ্যে অনেকেই এক বিপন্ন জাতির একাত্ম হওয়ার আকাঙ্ক্ষা খুঁজে পেয়েছিলেন। জীবনের কঠিন সঙ্কট কিছু ক্ষণের জন্য হলেও ভুলে থাকার উপায় হিসেবেও দেখছেন অনেকে। কারণ একটা বিষয় পরিষ্কার, শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতি থেকে মানুষের রাতারাতি নিস্তার পাওয়ার কোনও জাদুকাঠি নেই।

কলম্বোয় শেষ এক দিনের ম্যাচে দর্শকাসনের ছবিটা বোধহয় অনেক কথা বলে দিয়েছে। ২৪ জুনের সেই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার জার্সি গায়ে মাঠে গিয়েছিলেন বহু শ্রীলঙ্কা সমর্থক। হাতে ছিল বিশাল প্ল্যাকার্ড। তাতে লেখা— ‘অস্ট্রেলিয়া তোমাকে ধন্যবাদ।’ এই ম্যাড়মেড়ে, বিধ্বস্ত সময়ে আনন্দ এবং ক্রিকেট বিনোদন দিতে শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়ার জন্য অস্ট্রেলীয় দলকে ছিল সেই ধন্যবাদজ্ঞাপন।

বিধ্বস্ত সময়ে আনন্দ এবং ক্রিকেট বিনোদন দিতে শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়ার জন্য অস্ট্রেলীয় দলকে ধন্যবাদজ্ঞাপন। ছবি— এএফপি।

শুধু বিনোদনই বা কেন? ক্রিকেট মানে তো এখন অর্থনীতিও। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই জানে, একটা ম্যাচ বা একটা সিরিজ বন্ধ হওয়ার মাসুল কম নয়। তাই মানুষের বিনোদন আর ক্রিকেটের বাণিজ্যিক স্বার্থ আপাতত মিলেমিশে রয়েছে। এখনও রয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement