Interim Government Bangladesh

‘সংবিধানকে কবর’, ছাত্রদের সঙ্গীরাই মানছেন না ঘোষণা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সমাজমাধ্যমে অনেক কিছু গরম গরম কথা বলায় কৌতূহল বেড়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:৩৭
Share:

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

বছর শেষে ঠিক কী হতে চলেছে ঢাকায়? কোটা-বিরোধী আন্দোলনের ছাত্র নেতারা কি নতুন বিপ্লবী সরকারের ঘোষণা করবে?
১৯৭২-এ প্রবর্তিত বাংলাদেশের প্রচলিত সংবিধানকে খারিজ বলে ঘোষণা করবে? প্রাক্তন শাসক দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারকে সময়সীমা দেবে?

Advertisement

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সমাজমাধ্যমে অনেক কিছু গরম গরম কথা বলায় কৌতূহল বেড়েছে। শনিবার নিজেদের দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করে ছাত্র নেতা হাসনাত আবদুল্লা বলেন, “মুজিববাদী সংবিধানকে কবর দেওয়া হবে মঙ্গলবারের সভা থেকে। নাৎসি আওয়ামী লীগকে চিরতরে নির্বাসনেরও ব্যবস্থা করা হবে।” আর এক ছাত্র নেতা আব্দুল হান্না মাসাউদ জানান, ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করবেন তাঁরা। তার একটি খসড়াও তুলে ধরা হয়। ‘ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে জুলাইয়ের বিপ্লবের চেতনায় সমৃদ্ধ’ হবে এই ঘোষণাপত্র। বিএনপি, সিপিবি ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ঘোষণাপত্রের নামে ছাত্ররা যা-ই প্রকাশ করুক তা নিয়ে তাদের মতো জুলাই আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। একমাত্র জামায়াতে ইসলামী ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়ে বলেছে, “সকলেরই মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। স্বৈরাচার-বিরোধী আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকা ছাত্ররা কিছু বলতে চাইলে আমাদের উচিত সেটা শোনা।” শুধু মুখে সমর্থন নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, পাঁচ মাসে জনপ্রিয়তা হারানো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভায় লোক জড়ো করার কাজেও তেড়েফুঁড়ে নেমেছে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের শাখা ইসলামী ছাত্র শিবির। সঙ্গে অন্য ইসলামী দলগুলিও।

বিএনপি-র জাতীয় স্থায়ী কমিটির নেতা মির্জা আব্বাস বলেছেন, “বাহাত্তররের সংবিধানকে অসম্মান করে কথা বললে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে আমার তো খারাপ লাগবেই। শহিদের রক্তে লেখা যে সংবিধান, সেই সংবিধানকে যখন কবর দেওয়ার কথা বলা হয়, আমাদের কষ্ট লাগে। কবর দিয়ে ফেলব, মেরে ফেলব, কেটে ফেলব— এ সব কথা ফ্যাসিবাদের মুখ থেকে আসে।” দলের স্থায়ী কমিটির আর এক সদস্য ইকবাল হোসেন মাহমুদ বলেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতা মানে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। তাকে যারা প্রশ্নবিদ্ধ করবে, এটা তাদের ধৃষ্টতা। দেশের ২০ কোটি মানুষ এটা মেনে নেবেন না। আমরা যারা মুক্তিযোদ্ধা তারা তো মানবোই না।”

Advertisement

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) হাসিনা-বিরোধী আন্দোলনে আগাগোড়া রাস্তায় ছিল। বাহাত্তরের সংবিধান বাতিলের মতো কিছু করা হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না বলে মনে করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। টেলিফোনে আনন্দবাজারের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ অর্জিত সংবিধানক‌ে কবরে পাঠানোর ক্ষমতা কারওর নেই। বাংলাদেশের বামপন্থী প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তি ও অসাম্প্রদায়িক জনগণ রুখে দাঁড়াবে।” আন্দোলনের আর এক শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হকের কথায়, “দেশের এই সঙ্কটে সব পক্ষ যখন ঐকমত্যের কথা বলছে, তখন ছাত্রদের এই কর্মকাণ্ড সেই প্রচেষ্টাকে বিঘ্নিত করবে। তাদের সামনে রেখে সুবিধাবাদী কোনও শক্তি এই কাজ করছে। তারা যাই ঘোষণা করুক, কারও সঙ্গে তা নিয়ে আলোচনা করেনি।” হকের মতে, বাহাত্তরের সংবিধানে অনেক দমনমূলক আইন যুক্ত করেছে স্বৈরাচারী সরকার। কিন্তু সংঘাত নয়, সহমতের ভিত্তিতে সেগুলির সংস্কার দরকার।

এর আগে শহিদ মিনারে ছাত্রদের সভায় তেমন লোক হয়নি। এ বার তাই তাদের হয়ে নেমেছে জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলাম। অন্য দলগুলির নেতারা মনে করছেন, নির্বাচন পিছিয়ে দেশে সংঘাতের আবহ সৃষ্টি করার জন্য ছাত্রদের ব্যবহার করছে জামায়াত ও অন্য মৌলবাদী শক্তিগুলি।

সংখ্যালঘু উদ্বেগ: বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের নিন্দা করল রাষ্ট্রবাদী সনাতনী হিন্দু সংগঠন। সংগঠনটির দাবি, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ভারতের উচিত সেনা পাঠানোর কথা বিবেচনা করা। ওই সংগঠনের পক্ষে প্রিয়তোষ দে দিল্লিতে সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংবাদমাধ্যম ও সংগঠনগুলির নীরবতা দুর্ভাগ্যজনক।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement