জো বাইডেন এবং কমলা হ্যারিস।
মধুচন্দ্রিমা কি তা হলে শেষ? আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ও ভাইস-প্রেসিডেন্টের মধ্যে ক্রমর্ধমান বিভেদের নানা কাহিনি সে দিকেই ইঙ্গিত করছে। এবং এই মনোমালিন্যের জন্য অধিকাংশই দুষছেন দেশের প্রথম মহিলা, তথা প্রথম অ-শ্বেতাঙ্গ ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে। যে হ্যারিসকে নিয়ে এক উজ্জ্বলতর রাজনৈতিক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল ডেমোক্র্যাট দল, এখন সেই হ্যারিসকে নিয়েই অস্বস্তিতে তারা।
হোয়াইট হাউসের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা কিন্তু বলছেন, হ্যারিসকে দুষে লাভ নেই। প্রেসিডেন্টের দিক থেকে সাড়া না পেয়েই ক্রমশ নিজেকে ‘গুরুত্বহীন’ ভাবতে শুরু করেছেন তিনি। জোসেফ বাইডেন প্রশাসনে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও হ্যারিস সাধারণত নিজের মধ্যেই গুটিয়ে থাকেন। কোনও বিষয়েই আগ বাড়িয়ে কাজ করতে বা কোনও সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যায় না তাঁকে। ‘বস’-এর এই ভাব দেখে নিজেদের মধ্যে গুটিয়ে থাকেন টিম হ্যারিসের অন্যরাও।
কেন এই হাল? ওয়াশিংটনের পোড় খাওয়া কূটনীতিকেরা বলছেন, সাধারণত প্রেসিডেন্টের থেকে অনেক বেশি রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হন ভাইস-প্রেসিডেন্টরা। গত কয়েক দশক ধরে এমনই হয়ে আসছে। কিন্তু বাইডেন-হ্যারিস জুটির ক্ষেত্রে তা হয়নি। পোড় খাওয়া বাইডেন শুধু বয়সে নয়, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাতেও হ্যারিসের থেকে অনেক এগিয়ে। কমলা হ্যারিসের ‘ঐতিহাসিক জয়ের’ পরে অনেকেই ভেবেছিলেন, নতুন ভাইস-প্রেসিডেন্ট প্রতিদিনই কোনও না কোনও ‘ঐতিহাসিক’ সিদ্ধান্ত নেবেন বা ‘ঐতিহাসিক’ পদক্ষেপ করবেন। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। হ্যারিস হয় তো ভেবেছিলেন, বাইডেন তাঁকে রাজনৈতিক দিশা দেখাবেন। কিন্তু তা-ও হয়নি। দেশের কোভিড পরিস্থিতি থেকে দলের অন্দরের কোন্দল নিয়ে জেরবার বাইডেনের পক্ষে তাঁর ‘জুনিয়র’কে তৈরি করার মতো সময় বা ইচ্ছা কোনওটাই নেই বলে জানাচ্ছেন প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠরা।
হ্যারিসকে নিয়ে বাইডেনের অস্বস্তির একটি সম্ভাব্য কারণ— আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ২০২৩-এর এই নির্বাচনের সময়ে বাইডেনের বয়স হবে ৮২। এত প্রবীণ কাউকে ডেমোক্র্যাটরা প্রার্থী করবে কি না, তা নিয়ে দলের মধ্যেই যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ডেমোক্র্যাটদের পছন্দের প্রার্থী হতেই পারেন বর্তমান ভাইস-প্রেসিডেন্ট। আর সেটা বুঝতে পেরেই হ্যারিসের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়ে চলছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট। কারণ ঘনিষ্ঠ মহলে বাইডেন ইতিমধ্যেই বলে রেখেছেন, আগামী নির্বাচনে তিনি লড়বেনই।