ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক। —ফাইল চিত্র।
নিজেই আচমকা নির্বাচনের সময় তিন মাস এগিয়ে এনেছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক। অক্টোবরের বদলে আগামী ৪ জুলাই ব্রিটেনে সাধারণ নির্বাচন। এমনিতেই প্রধানমন্ত্রীর গদি টলোমলো। নিজের দল কনজ়ারভেটিভ পার্টির মধ্যেই জনপ্রিয়তা কমছে সুনকের। তার উপরে খুব সম্প্রতি একের পর এক স্থানীয় নির্বাচনে জয় পেয়েছে পার্লামেন্টে প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি। এই পরিস্থিতিতে গত কাল স্যালফোর্ডে একটি টিভি চ্যানেলের বিতর্ক-আলোচনায় অংশ নিলেন ঋষি সুনক এবং লেবার পার্টির নেতা তথা ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বিরোধী দলনেতা কিয়ার স্টার্মার। চ্যানেলের সেই বিতর্কসভায় দুই নেতার মধ্যে উত্তেজনা মাঝেমধ্যেই এমন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, অনুষ্ঠানের সঞ্চালিকাকে বেশ কয়েক বার বলতে শোনা গিয়েছে, ‘আপনারা গলার স্বর নামিয়ে কথা বলুন’।
ব্রিটেনের বিভিন্ন জনমত সমীক্ষা বলছে, গদি হারাতে চলেছেন ঋষি। শুধু তা-ই নয়, প্রধানমন্ত্রীর দল কনজ়ারভেটিভদের সমগ্র ফলই খুব খারাপ হতে চলেছে। উল্টো দিকে, সমীক্ষাগুলির দাবি, লেবার পার্টির উত্থান এক প্রকার নিশ্চিত।
এমনিতে অবশ্য পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ, হাউস অব কমন্সে, প্রায় প্রতি সপ্তাহেই ‘প্রাইম মিনিস্টার্স কোয়েশ্চেনস’ চলাকালীন সুনক আর স্টার্মার একে অপরের সঙ্গে বিতর্কে জড়ান। তবে টিভি চ্যানেলের বিতর্ক সেটার থেকে আলাদা। গত কাল দর্শকদের সরাসরি প্রশ্নের মুখোমুখিও হতে হয়েছে এই দুই নেতাকে। বিতর্ক চলাকালীন টিভির পর্দায়
সুনককেই বেশি উত্তেজিত হয়ে চেঁচাতে দেখা গিয়েছে।
আয়কর, জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা (এনএইচএস) আর অভিবাসন নীতি। বিতর্কের মূল বিষয় ছিল এই তিনটেই। লেবার পার্টি ক্ষমতায় এলে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে বিপুল করের বোঝা চাপাবে বলে মন্তব্য করেন সুনক। দর্শকদের উদ্দেশ করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘আপনারা জানেন না, আপনাদের সঙ্গে কী হতে চলেছে। লেবাররা এসে আপনাদের আয়কর বিপুল বাড়িয়ে দেবে। ওদের ডিএনএ-তেই এটা রয়েছে। আপনার চাকরি, আপনার গাড়ি, আপনার পেনশন। সবেতে কর চাপাবে ওরা।’’ সুনকের বক্তব্য অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন স্টার্মার। উল্টে সুনক যে বিপুল বিত্তশালী, সে কথা দর্শকদের মনে করিয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘‘উনি তো একটা আলাদা জগতেই বাস করেন।’’ প্রধানমন্ত্রী নিজে অতিরিক্ত ধনী হওয়ায় সাধারণ মানুষের সমস্যা যে তাঁর কানে পৌঁছয় না, সেই অভিযোগও তুলেছেন স্টার্মার। গত আট বছরে কনজ়ারভেটিভদের পাঁচ বার প্রধানমন্ত্রী বদল নিয়েও কটাক্ষ করেছেন তিনি।
ব্রিটেনে বসবাসকারী ১৮ বছর বয়সি কিশোর-কিশোরীদের জন্য ‘সমাজ সেবা’ (কমিউনিটি সার্ভিস) বাধ্যতামূলক করার কথা জানিয়েছেন সুনক। অন্য অনেক দেশের মতো অল্প বয়সিদের সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়াও বাধ্যতামূলক করার কথা বলেছেন। দর্শকেরা অবশ্য সেই প্রস্তাব খুব একটা ভাল চোখে দেখেননি। স্টার্মারও সেগুলির বিরোধিতা করেছেন।
কনজ়ারভেটিভদের উদার অভিবাসন নীতির ফল গোটা দেশকে ভুগতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্টার্মার। তাঁরা ক্ষমতায় এলে নৌকোয় চাপিয়ে অবৈধ ভাবে যারা মানুষ পাচার করে, তাদের চিহ্নিত করে জেলে পোরা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে মানবাধিকার সংক্রান্ত ইউরোপীয় আদালতে ব্রিটেন ভবিষ্যতে থাকবে কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে সুনক জানিয়েছেন, নিজের দেশের সুরক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তা আর আন্তর্জাতিক আদালতের মধ্যে তিনি সব সময় প্রথমটিকেই বাছবেন।
‘ইউ গভ’ নামে এক সমীক্ষা সংস্থা জানাচ্ছে, মাত্র ২ শতাংশ ভোটের হেরফেরে গতকালের বিতর্ক জিতেছেন সুনক। পরবর্তী বিতর্ক আগামী পরশু।