Bangladesh

ঋণে হাঁসফাঁস ঢাকার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দিল্লির

নয়াদিল্লি মনে করছে, বড় অঙ্কের বৈদেশিক ঋণশোধই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে কঠিন সমস্যা। পরিস্থিতি সঙ্গিন হয়েছে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয় তলানিতে ঠেকায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:৪৭
Share:

মুহাম্মদ ইউনূস। —ফাইল চিত্র।

গণঅভ্যুত্থানের সমর্থকদের দাবি মেনে বাংলাদেশ ইলিশ রফতানি বন্ধ করলে ভারতের হয়তো কোনও ক্ষতি হবে না। কিন্তু সে দেশের এই ভারত-বিরোধী আবেগের প্রভাব নয়াদিল্লির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কে পড়লে, ইউনূস সরকারেরই ক্ষতি বলে মনে করছে সাউথ ব্লক। কারণ এমনিতেই তাদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কার থেকেও খারাপ হতে পারে।

Advertisement

নয়াদিল্লি মনে করছে, বড় অঙ্কের বৈদেশিক ঋণশোধই সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে কঠিন সমস্যা। পরিস্থিতি সঙ্গিন হয়েছে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয় তলানিতে ঠেকায়। গত ছ’বছরের মধ্যে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয় এখন সর্বনিম্ন, ১৬০০ কোটি ডলার। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া তাদের বকেয়া পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছে ঢাকার উপর।

সর্বশেষ পাওয়া সরকারি তথ্য অনুযায়ী জাপানের কাছে ৯২১ কোটি, রাশিয়ার কাছে ৫০৯ কোটি, চিনের কাছে ৪৭৬ কোটি এবং ভারতের কাছে ১০২ কোটি ডলারের ঋণ বাংলাদেশের। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ ৫৬৩ কোটি ডলার ঋণ করেছে। হাসিনা জমানার এই ঋণের কিস্তি শোধ করতে হবে বর্তমান সরকারকে।

Advertisement

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে দেওয়া ঋণের বকেয়া ও চলতি সুদ বাবদ ৬৩ কোটি ডলার ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শোধ করার জন্য ঢাকাকে চিঠি দিয়েছিল মস্কো। সময়সীমা উত্তীর্ণ হওয়ায় সুদ-সহ বকেয়া আরও বেড়েছে। রূপপুর প্রকল্পে ১২৬৫ কোটি ডলার ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৪ শতাংশ, যেখানে কিস্তিখেলাপের জন্য জরিমানা সুদ আরোপ হয়েছিল আরও ২.৪ শতাংশ। এ বিষয়ে বোঝাপড়া ভাঙায় জরিমানা ও মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে জটিলতা বাড়বে। ডিসেম্বরের মধ্যেই এই প্রকল্পের ঋণ চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। হাসিনার আমলে চুক্তির মেয়াদ এক বছর বাড়নোর অনুরোধ রাশিয়া মানেনি। ভারতের আদানি পাওয়ারও বকেয়া অর্থ চাইছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছে তারা আট-নয় মাসের বিদ্যুতের দাম বাবদ প্রায় ৮০ কোটি ডলার পাবে। গত বছরের জুন থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে আদানি গ্রুপ। প্রতি মাসে ৯-৯.৫ কোটি ডলার শোধের কথা থাকলেও দেওয়া হচ্ছে ৪-৪.৫ কোটি ডলার। বাংলাদেশের জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান স্বীকার করেছেন, আদানি বাংলাদেশের কাছে ৮০ কোটি ডলার পায়, তার মধ্যে ৪৯ কোটি ২০ লাখ ডলার বকেয়া। ত্রিপুরা থেকেও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ কেনে। সেখানেও বকেয়া বাড়ছে।

বলা হচ্ছে অর্থনীতির আকার অনুসারে পর্যাপ্ত রাজস্ব আহরণে আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যর্থতা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। বিপুল অর্থপাচারও হয়েছে বিদেশে। সংস্কারের কথা বললেও চেনা পথ থেকে বেরিয়ে আসার সাহসী অর্থনৈতিক পদক্ষেপ এখনও নেয়নি অন্তর্বর্তী সরকার। তাই অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা আশার আলো দেখার বদলে বিপর্যয়ের আশঙ্কাই করছেন। আকাশ ছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি জনজীবন বিপদ বাড়াচ্ছে।

কিছু আন্তর্জাতিক সহায়তার বন্দোবস্ত হলেও, তা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া বেশ কঠিন। আমেরিকার দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী সচিব ডোনাল্ড লু-এর নেতৃত্বাধীন উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে এসে ২০ কোটি ডলার সহায়তার কথা জানিয়েছে। ১০০ কোটি ডলার ঋণ দিতে রাজি হয়েছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। এডিবি-ও ১৫০ কোটি ডলার ঋণ দিতে পারে। ডিসেম্বরের মধ্যেই তারা বাজেট সহায়তা হিসেবে ৪০ কোটি ডলার দেবে বলেছে। তবে বাংলাদেশের সঙ্কট নিরসনে এ সবই সামান্য। বেহাল অর্থনীতিতে মানুষের দুর্ভোগ ক্ষোভ হয়ে ফেটে পড়তে পারে অন্তর্বর্তী সরকারের উপর, এই আশঙ্কা থাকছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement