COP 29

চোখ ধাঁধাঁনো নানা অনুষ্ঠান, তবে মুখে কুলুপ সব দেশেরই

‘কপ ২৯’, অর্থাৎ এ বছরের ‘কপ’ নিয়ে কিছু বলতে গেলে একটু গোড়া থেকে বলতে হয়। ১৯৯২ সালে ব্রাজ়িলের রিয়ো ডি জেনিরো-তে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত একটি সম্মেলনে রাষ্ট্রপুঞ্জের ১৯৮টি দেশ একটি বহুপাক্ষিক চুক্তি সাক্ষর করেছিল।

Advertisement

মালঞ্চ দে

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:১০
Share:

‘কপ ২৯’ ছবি: সংগৃহীত।

‘কপ’ উৎসবে গিয়ে তো চক্ষু চড়কগাছ। বিশাল জায়গা, অসংখ্য প্যাভিলিয়ন। প্রথম দিন অনুষ্ঠানস্থল অলিম্পিক স্টেডিয়ামের হাল হকিকত কিছু বোঝার আগেই কয়েক বার হারিয়ে গেলাম।

Advertisement

‘কপ ২৯’, অর্থাৎ এ বছরের ‘কপ’ নিয়ে কিছু বলতে গেলে একটু গোড়া থেকে বলতে হয়। ১৯৯২ সালে ব্রাজ়িলের রিয়ো ডি জেনিরো-তে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত একটি সম্মেলনে রাষ্ট্রপুঞ্জের ১৯৮টি দেশ একটি বহুপাক্ষিক চুক্তি সাক্ষর করেছিল। সেই চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বের কোনও না কোনও দেশে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত একটি বৈঠক বা ‘কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ়’ (কপ) আয়োজিত হয়। এই বছর কপ ২৯ আয়োজিত হয়েছিল ১১ থেকে ২২ নভেম্বর, আজ়ারবাইজানের রাজধানী বাকু শহরে। অংশগ্রহণের নিরিখে গত বছরের দুবাই ‘কপ ২৮’-এর পরে এটাই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কপ।

বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী ‘গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ’ হ্রাসে নিম্ন আয়ের দেশগুলিকে সহায়তা করার জন্য তহবিল বাড়ানো এই কপের একটা মূল লক্ষ্য ছিল। তাই বিশেষজ্ঞেরা এটিকে ‘ফাইন্যান্স কপ’ বলেও দাবি করেছিলেন। উন্নত দেশগুলির মধ্যে কে, কত টাকা, কোন খাতে দেবে, সে সব নিয়ে আলোচনা করাই এ বারের সম্মেলনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল।

Advertisement

দুবাই কপের একটা মূল বিষয় ছিল জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কী ভাবে কমানো যায়, তাই নিয়ে আলোচনা। কিন্তু এ বারের কপে সেটি প্রায় অদৃশ্য হয়েই রইল। ২০২২-এ ‘কপ ২৭’ হয়েছ মিশরের শর্ম-এল-শেখে। সে বারের সম্মেলনের মতো এ বারেও কৃষি ও খাদ্য নিয়ে কিছু আলোচনা হতে দেখা গেল। তবে সম্মেলনের সব বৈঠকই যে জলবায়ু সমস্যার সংক্রান্ত আলোচনায় ‘সীমাবদ্ধ’ ছিল, তা নয়। একটা বৈঠকে ঢুকে দেখলাম, সবাই খুব গম্ভীর ভাবে ওয়েবসাইট কেমন করে তৈরি হবে, তাই নিয়ে জোর আলোচনা চালাচ্ছেন। ভাবলাম, ভুল সম্মেলনে ঢুকে পড়েছি হয় তো!

আশ্চর্যের কথা হলো, চিন, যে কিনা বিশ্বের বৃহত্তম বার্ষিক গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণকারী, এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, যারা কিনা পৃথিবীর অন্যতম প্রধান জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনকারী, এখনও জলবায়ু তহবিলে অবদান করার সূচকে ‘উন্নয়নশীল দেশ’ হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ। সামনের বছর, ব্রাজ়িলের বেলেমে কপ ৩০ হওয়ার কথা। সেই সম্মেলন লক্ষ্য রেখে আগামী বছর ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সব দেশকে জানাতে হবে, গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কী ভাবে তারা ‘নেট জ়িরো’য় নিয়ে যেতে পারবে। এই নিয়ে সমস্ত অংশগ্রহণকারী দেশের মধ্যেই জোরদার আলোচনা হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু প্রায় সব দেশই কেমন মুখে কুলুপ এঁটে বসে রইল। কারও মধ্যে কোনও সাজো সাজো রব দেখলাম না! এই কপে শুধুমাত্র ব্রিটেন, ব্রাজ়িল এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ২০৩৫-এর জন্য বেশ কঠিন লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করল। তবে আশার কথা, ভুটান, মাদাগাস্কার, পানামা এবং সুরিনাম ইতিমধ্যেই গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণে শূন্যমাত্রা অর্জন করে ফেলেছে।

এ বারের কপে ভারতের কোনও আলাদা প্যাভিলিয়ন ছিল না। তবে দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশ থেকে একটি ডেলিগেশন এসেছিল। অনেক দেশের প্যাভিলিয়নই খুব চমকদার ছিল, পার্শ্ব অনুষ্ঠানের ঘনঘটাও কম ছিল না। যে যা করেছে ঝুলি খুলে সব দেখাল, অনেক কথা বলল, ছবি তুলল, নিজেদের মধ্যে বন্ধুত্ব বাড়াল, কিছু চুক্তি সই হল, কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাই হল না। কানাঘুষো শুনলাম, অনেক দেশই নাকি চুপ থাকার ‘গেম প্ল্যান’ নিয়েই এসেছিল।

এ বারের কপে সবচেয়ে মজার ব্যাপার ছিল ফুডকোর্টে খাবারের দাম। একটা সাধারণ স্যান্ডুইচ এর দাম প্রায় ১৫০০ টাকা। তাই অধিকাংশ দর্শককেই বলতে শোনা গেল— ‘কফি খেয়েই দিন কাটাচ্ছি’।

(লেখক জলবায়ু বিশেষজ্ঞ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement