মাউন্ট ফুজিয়ামা।
‘আমি পিছলে পড়ে যাচ্ছি’...এটাই শেষ উচ্চারিত শব্দবন্ধ। তারপর শোনা গিয়েছিল পড়ে যাওয়ার আওয়াজ। ভয়াবহ এই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছিল সোমবার। তার দু’দিন পরে বুধবার জাপানের ফুজিয়ামা পর্বতে উদ্ধার হল এক ব্যক্তির নিথর দেহ।
জাপানি সংবাদমাধ্যমের দাবি, ওই ভিডিয়োয় এক ব্যক্তি ফুজি পর্বতে ওঠার সময় লাইভ স্ট্রিমিং করছিলেন। সে সময় পড়ে যান পাহাড়ের খাড়াই ঢাল থেকে। পুরো ঘটনাই ধরা পড়ে ক্যামেরায়। রেকর্ডিংয়ে নিজেকে ‘তেডজো’ বলে পরিচয় দেন ওই জাপানি অভিযাত্রী।
প্রতি বছর প্রায় তিন লক্ষের বেশি মানুষ পবিত্র ফুজি পর্বতে ওঠেন। কিন্তু শীতের মরসুমে এই অভিযান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করেই তেডজো জাপানের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয়ের দিকে এগোচ্ছিলেন বলে দাবি স্থানীয় প্রশাসনের।
নিজের অভিযানের পূর্ণাঙ্গ রেকর্ড করছিলেন তেডজো। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি শৃঙ্গের দিকে দ্রুত এগোচ্ছি’। কিন্তু তীব্র ঠান্ডায় তাঁর হাত বারবার অবশ হয়ে যাচ্ছিল। তাই, স্মার্টফোন হোল্ডার সঙ্গে না আনার জন্য তেডজোকে আক্ষেপও করতে শোনা যায়।
ওঠার পথে হঠাৎই পথ সঙ্কীর্ণ হয়ে আসে। তখনও তেডজো হেসে হেসে বলছিলেন, ‘এই অংশটি খুবই পিচ্ছিল…ভয়ঙ্কর।’ এরপর আচমকাই পট পরিবর্তন। মিলিয়ে যায় তেডজোর হাসি। উদ্বিগ্ন স্বরে বলেন ‘পাথুরে পথ বরফে ঢাকা…কিন্তু আমি কি আদৌ ঠিক দিশায় এগোচ্ছি? আমি পড়ে যাচ্ছি! এখানে এই ঢালের অংশটা খুব বিপজ্জনক।’
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে চলন্ত ট্রেনে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, জীবন্ত দগ্ধ অন্তত ৬৫
এর কিছুক্ষণ পর ভেসে আসে তাঁর শেষ কথা, ‘পড়ে যাচ্ছি’। ভিডিয়ো-য় শোনাও যায় তাঁর গড়িয়ে পড়ার আওয়াজ। তারপর কিছু অসংলগ্ন ছবি। বরফ, পাথর আর একটা নীল পোলের কিছু অংশের ফ্রেমে ছবি আটকে যাওয়ার আগে ভিডিয়োয় ইতস্তত ধরা পড়ে তেডোজের বুট, পাহাড়ে ওঠার সরঞ্জাম এবং একটি স্মার্টফোনের ক্লিপিং।
ভিডিয়োটি ইন্টারনেটে দেখার পর থেকেই জাপান পুলিশের কাছে আসতে থাকে ফোনকল। মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হয় তল্লাশি। তন্নতন্ন করে খুঁজেও দশজন উদ্ধারকারী দেখতে পাননি কোন দেহের চিহ্ন। লাভ হয়নি পুলিশের হেলিকপ্টার থেকে সন্ধান চালিয়েও। তবে তল্লাশিতে এটা বোঝা যায় ফুজি পর্বতের ওই নির্দিষ্ট অংশে কেউ একজন নীচে পড়ে গিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ভারতীয় সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাকের চেষ্টা! জানাল জাকারবার্গের সংস্থা
এরপর বুধবার ফুজি পর্বতে একটি দেহের সন্ধান পাওয়া যায়। কিন্তু তার পরিচয় এখনও জানা যায়নি। নিথর দেহটি ভিডিয়োর অভিযাত্রী তেডজোর-ই কি না, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নয় পুলিশ।
চলতি মরসুমে ৩৭৭৬ মিটার উচ্চতার ফুজিয়ামা পর্বতে ওঠার শেষ দিন ছিল ১০ সেপ্টেম্বর। সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে জানানো হয়, এরপর ফুজি পাহাড়ে ওঠার প্রয়াস খুবই বিপজ্জনক। এর আগের বছর গুলিতেও নির্দিষ্ট সময়সীমার পরে ফুজি পর্বতে ওঠার চেষ্টা করে মার্কিন অভিযাত্রীদের প্রাণ হারানোর নজির দেখা গিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই বিপজ্জনক প্রবণতা বন্ধ হয়নি।