ফেসবুক-টুইটারে প্রতিবাদ। একের পর এক নানা পেশার ছেলেমেয়ে প্রোফাইল ছবি বদলে লাগাচ্ছেন নিজের কান ধরা ছবি। প্রবল বর্ষণ উপেক্ষা করে রাস্তায় কান ধরে দাঁড়িয়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। হাতের ফেস্টুনে লেখা, ‘আমরা লজ্জিত’, ‘আমাদের ক্ষমা করবেন’। এক নতুন আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশে— ‘#সরিস্যার!’
দিন কয়েক আগে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের একটি স্কুলে সংখ্যালঘু প্রধান শিক্ষককে গণধোলাইয়ের পরে কান ধরে ওঠবোস করানো হয়। শ্যামলকান্তি ভক্ত নামে প্রবীণ এই শিক্ষককে এর পর পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশ ধর্ম অবমাননার ধারায় শ্যামলবাবুকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়েছে। জাতীয় পার্টির স্থানীয় সাংসদ সেলিম ওসমান দাঁড়িয়ে থেকে এই কাজে জনতাকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
তার পরে সেই স্কুল থেকে তাঁকে বরখাস্তও করেছেন।
সাংসদের অনুগত স্কুলের পরিচালন কমিটির সঙ্গে সংখ্যালঘু এই প্রধান শিক্ষকের সম্প্রতি কিছু মনোমালিন্য হয়েছিল। হুমকি পাচ্ছিলেন শ্যামলবাবু। কিন্তু তাঁকে যে এমন ভয়ঙ্কর ঘটনার শিকার হতে হবে, বোধ হয় ভাবতেও পারেননি তিনি। ঘটনার দিন এক ছাত্র ক্লাসে গণ্ডগোল করায় তাঁকে একটি চড় মেরেছিলেন প্রধান শিক্ষক। গুজব ছড়ানো হয়, শ্যামলবাবু সে সময়ে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন।
পর দিন বেশ কিছু মানুষ ঘিরে ধরে প্রধান শিক্ষককে মারধর করতে থাকেন। কিছু ক্ষণের মধ্যে সাংসদ সেলিম ওসমান সেখানে চলে আসেন। স্থানীয় থানার পুলিশও ঘটনাস্থলে হাজির ছিল। সাংসদ প্রধান শিক্ষককে কানধরে ওঠবোস করতে বলেন। এর পরে তাঁকে ওঠবোস করতে হয়। অসুস্থ শিক্ষক একটা সময়ে ক্লান্তি আর গ্লানিতে পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারান। এর পরে ওই বর্ষীয়ান শিক্ষককে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
সরকারের শিক্ষামন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, বিদেশ প্রতিমন্ত্রী-সহ নানা জন এই ঘটনার প্রতিবাদে সরব হলেও, সাংসদ সেলিম জানিয়েছেন— তিনি কোনও ভুল কাজ করেননি। পুলিশও জানিয়েছে, ধর্ম অবমাননার অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরে তাদের কিছু করার নেই।
কিন্তু প্রতিবাদে ফেটে পড়েছেন বাংলাদেশের শিক্ষিত মানুষ ও ছাত্রছাত্রীরা। টুইটার ফেসবুকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে নতুন আন্দোলন— #সরিস্যার।