ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং পদত্যাগী চ্যান্সেলর অব দ্য এক্সচেকার ঋষি সুনাক। ফাইল ছবি।
শেষ পর্যন্ত বরিস জনসন মন্ত্রিসভা ছেড়ে বেরিয়েই গেলেন ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক। ঋষি একা নন, কয়েক মিনিটের ব্যবধানে বরিসের সরকার ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন ব্রিটেনের স্বাস্থ্য সচিব সাজিদ জাভিদও। দু’জনেই আঙুল তুলেছেন সরকার চালাতে বরিসের ভাবনা ও তাঁর কাজের পদ্ধতি নিয়ে।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী (চ্যান্সেলর অব দ্য এক্সচেকার) হন ২০২০ সালে। ঘটনাচক্রে তিনি ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এন আর নারায়ণমূর্তির জামাইও। নিজের ইস্তফাপত্রের ছত্রে ছত্রে ঋষি আঙুল তুলেছেন বরিস সরকারের কাজকর্ম এবং অভিমুখ নিয়ে। তাঁর খেদোক্তি, ‘মানুষের প্রত্যাশা ছিল সঠিক ভাবে, দক্ষতার সঙ্গে এবং গুরুত্ব সহকারে সরকার পরিচালিত হবে।’ কিন্তু সেটা হয়নি এবং হচ্ছে না বলেই মনে করেন ঋষি।
সোমবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন। সেখানে টোরি এমপি ক্রিস পিঞ্চারকে নিয়ে কিছু মন্তব্য করেন তিনি। যৌন হেনস্থার অভিযোগে গত সপ্তাহেই নিলম্বিত (সাসপেন্ড) করা হয়েছিল ক্রিসকে। সাক্ষাৎকারে বরিসের মন্তব্য, ক্রিসের ব্যাপারে তিনি ২০১৯-য়েই অভিযোগ পেয়েছিলেন। তখন কিছু না করাটা অত্যন্ত খারাপ একটি ভুল বলেও মন্তব্য করেন বরিস। ঘটনাচক্রে, সেই সাক্ষাৎকার শেষ হতেই, পর পর ইস্তফা দেন অর্থমন্ত্রী ঋষি ও স্বাস্থ্য সচিব জাভিদ। দুই ইস্তফার মধ্যে সময়ের ব্যবধান মাত্র ৯ মিনিটের। ব্রিটিশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ১১ মিনিটে ইস্তফা দেন জাভিদ। তার ঠিক ৯ মিনিট পর বরিস মন্ত্রিসভা থেকে নিজের বিচ্ছেদের ঘোষণা করেন ঋষি। দু’জনই ইস্তফাপত্রে তুমুল আক্রমণ শানিয়েছেন বরিসের দিকে। সঠিক সময়ে সঠিক কাজ না করা নিয়ে দু’জনেরই অভিযোগ রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। যদিও দুই পদত্যাগীর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, প্রায় একই সময়ে দু’জনের ইস্তফা দেওয়াটা নেহাতই কাকতালীয়।
ঋষি তাঁর ইস্তফাপত্রে লিখেছেন, ‘অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, আমরা এ ভাবে এক সঙ্গে চলতে পারি না।’ শুধু রাজনৈতিক মতানৈক্য নয়, ঋষি ইস্তফা দিতে গিয়ে স্পষ্ট জানিয়েছেন, মন্ত্রিসভা ত্যাগের নেপথ্যে আরও বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি রয়েছে প্রধানমন্ত্রী বরিসের সঙ্গে তাঁর ভিন্ন অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিও। লিখেছেন, ‘এটা এখন আমার কাছে স্পষ্ট যে, আমরা মৌলিক ভাবেই ভিন্ন পথের পথিক।’
ঋষির ইস্তফাপত্রে লেখা রয়েছে, কী ভাবে অতিমারি চলাকালীন মানুষের চাকরি বাঁচানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। প্রসঙ্গত, সরকারি প্রকল্পে বিপুল টাকা ঢেলে করোনা অতিমারির সময় মানুষের চাকরি বাঁচানোর প্রক্রিয়ায় তুমুল জনপ্রিয়তা কুড়িয়েছিলেন বরিস মন্ত্রিসভার সদস্য ঋষি।
ঋষির ইস্তফাপত্র পাওয়ার পর তিনি হতাশ, জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। প্রশংসাও করেছেন তাঁর কাজের। ঋষিকে পাঠানো চিঠিতে বরিস লিখেছেন, ‘জন পরিষেবায় আপনার গভীর অঙ্গীকার এবং সরকার পরিচালনায় আপনার বিবিধ পরামর্শে আমি অত্যন্ত উপকৃত হয়েছি। সরকারে আপনার সঙ্গে কাজ না করতে পারা অনুভূত হবে।’
ফার্মাসিস্ট মা ও চিকিৎসক বাবার সন্তান ঋষি অক্সফোর্ড ও স্ট্যানফোর্ডে পড়াশোনা করেছেন। পরে ভারতীয় বহুজাতিক ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নাগাভারা রামরাও নারায়ণমূর্তির কন্যা অক্ষতাকে বিয়ে করেন। ঋষি-অক্ষতার দুই কন্যা কৃষ্ণা এবং অনুষ্কা। ২০১৫-য় ইয়র্কশায়ারের রিচমন্ডের আইনসভার টোরি সদস্য হিসেবে প্রথম বার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রবেশ করেন তিনি। ২০২০ থেকে তিনি ব্রিটেনের চ্যান্সেলর অব দ্য এক্সচেকার। তার আগে তিনি ছিলেন ট্রেজারির চিফ সেক্রেটারি।